• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

Advertise your products here

  1. আর্ন্তজাতিক

‘আই লাভ মুহাম্মদ’ ব্যানার ঘিরে ভারতে বিক্ষোভ, হয়রানির অভিযোগ


দৈনিক পুনরুত্থান ; প্রকাশিত: বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০১:৩০ পিএম
‘আই লাভ মুহাম্মদ’ ব্যানার ঘিরে ভারতে বিক্ষোভ, হয়রানির অভিযোগ

ভারতের উত্তর প্রদেশের কানপুরে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা ব্যানার টাঙানোকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে কয়েকটি এফআইআর দায়ের হয়েছে এবং উত্তর প্রদেশ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন শহরে মুসলিমদের বিক্ষোভ হয়েছে। কোথাও কোথাও পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষও হয়েছে।

গত রবিবার উত্তরাখণ্ডের কাশীপুরে একই ধরনের ব্যানার হাতে মিছিলের সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতি হয়। তখন পুলিশ আটজনকে আটক করে। একই দিন উত্তর প্রদেশের উন্নাওতে একইরকম মিছিলের পর পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মুসলিমরা অভিযোগ করেছেন, নিজেদের ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রকাশ করায় পুলিশ তাদের টার্গেট করছে।

কানপুর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (পশ্চিম) দীনেশ ত্রিপাঠি জানান, রাওয়াতপুর থানা এলাকায় মিলাদুন্নবীর প্রচলিত শোভাযাত্রার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা ছিল।

কিন্তু স্থানীয়রা অন্যত্র প্যান্ডেল বানিয়ে সেখানে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ ব্যানার লাগান। এর বিরোধিতা করে অন্য একটি পক্ষ। পরে উভয়পক্ষের সমঝোতায় ব্যানারটি নির্দিষ্ট স্থানে স্থানান্তর করা হয়। ত্রিপাঠির দাবি, মামলা ব্যানারের লেখা নিয়ে নয়, বরং অনুমোদিত স্থান ছাড়া অন্যত্র প্যান্ডেল বানানো ও শোভাযাত্রার সময় পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগে হয়েছে।

মামলায় বলা হয়, ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ ব্যানার লাগিয়ে মুসলিম সম্প্রদায় নতুন প্রথা চালু করার চেষ্টা করছিল এবং অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ তা প্রতিহত করেন। এ ছাড়া শোভাযাত্রার সময় ‘অন্য সম্প্রদায়ের’ ধর্মীয় পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগও আছে। এতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ আনা হয়েছে এবং আয়োজকসহ বেশ কয়েকজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে কানপুর পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। স্থানীয় সাংবাদিকদের তথ্যমতে, ৪ সেপ্টেম্বর ব্যানার নিয়ে বিতর্ক শুরু হলেও শোভাযাত্রা বের হয় ৫ সেপ্টেম্বর।

অথচ এফআইআর করা হয় ১০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায়। এআইএমআইএম নেতা ও এমপি আসাদুদ্দিন ওয়েইসি ১৫ সেপ্টেম্বর এক্স (টুইটার)-এ কানপুর পুলিশকে ট্যাগ করে লেখেন, ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা কোনো অপরাধ নয়। যদি অপরাধ হয়, আমি শাস্তি মেনে নেব।

এদিকে লক্ষ্ণৌতেও বিক্ষোভ হয়েছে। লক্ষ্ণৌতে রাজ্য বিধানসভার প্রবেশপথে কয়েকজন নারী ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ ব্যানার হাতে বিক্ষোভ করেন। প্রয়াত কবি মুনব্বর রাণার কন্যা ও সমাজবাদী পার্টি নেত্রী সুমাইয়া রাণা এই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন। তিনি বিবিসিকে জানান, কিছু যুবকও বিক্ষোভে অংশ নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাদের রাস্তা থেকেই আটকে দেয়। সুমাইয়ার দাবি, পুলিশ কয়েকজনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেফাজতে রেখেছিল। তার অভিযোগ, ‘মুসলমানদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তৃতা হলে মামলা হয় না। কিন্তু মুসলমানরা সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করে ধর্মীয় অনুভূতি ব্যক্ত করলেই এফআইআর হয়। এটা আমাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা দমন করার চেষ্টা, যা আমরা মেনে নেব না।’ 

উত্তর প্রদেশের কানপুরে দায়ের হওয়া মামলার বিরুদ্ধে উন্নাও ও বহরাইচে বিক্ষোভ হয়েছে। উন্নাওয়ের গঙ্গাঘাট থানা এলাকায় বিনা অনুমতিতে মিছিল করায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের হাতাহাতি হয় এবং পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, কয়েকজন নারী ও শিশু ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা ব্যানার হাতে স্লোগান দিচ্ছেন। 

উন্নাওয়ের সিনিয়র পুলিশ সুপার (উত্তর) অখিলেশ সিং জানান, ১৬৩ ধারা অনুযায়ী জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাই অনুমতি ছাড়া মিছিল করা যায় না। তিনি বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং পুলিশ টহল দিচ্ছে। উত্তর প্রদেশ সরকারের মন্ত্রী ধর্মপাল সিং বলেন, ‘আইন নিয়ে কাউকে ছেলেখেলা করতে দেওয়া হবে না। খবর পেতেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আরো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ফৈজুল হাসান বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করে গিয়ে আই লাভ মুহাম্মদ লিখা ব্যানার লাগানোর জন্য যে এফআইআর দায়ের হচ্ছে, তার প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। কোনো স্লোগান তুলিনি, আইন ভাঙিনি। পরে জানতে পারি আমাদের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছে।’ তিনি এফআইআর বাতিলের জন্য এলাহাবাদ হাইকোর্টে আবেদন করেছেন। উত্তর প্রদেশ ছাড়াও গুজরাতের গোধরা, মুম্বাইয়ের ভায়খলা ও উত্তরাখণ্ডের কাশীপুরে বিক্ষোভ হয়েছে। গোধরায় একটি থানার সামনে ভাঙচুর ও বিক্ষোভের ঘটনায় ৮৭ জনের নামে মামলা ও ১৭ জন গ্রেপ্তার হয়েছে।

মুম্বাইয়ের ভায়খলা এলাকাতেও ২১ সেপ্টেম্বর মুসলমানরা মিছিল করেন। অনুমতি ছাড়াই মিছিল করায় এফআইআর হয় এবং একজনকে হেফাজতে নেওয়া হয়, পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কাশীপুরে রবিবার বিকেলে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ ব্যানার নিয়ে মিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতি হয়।

মুসলমানদের নিশানা করা হচ্ছে?

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, ছোট ছোট ঘটনাকে বড় করে মুসলমানদের নিশানা করা হচ্ছে। সামাজিক সংগঠন ‘ইউনাইটেড এগেইনস্ট হেট’-এর সদস্য নাদিম খান বলেন, ‘কানপুরে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ ব্যানার ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছিল। মুসলমানরা অভিযোগ দিয়েছিল, কিন্তু এফআইআর হয়নি। অথচ তাদের বিরুদ্ধেই মামলা হলো।’ তিনি আরো বলেন, ‘রমজানে ঘরে নামাজ পড়ার জন্য মামলা হয়েছে, ছাদে নামাজ পড়তে বাধা দেওয়া হয়েছে, এখন নবীর পোস্টার নিয়ে মামলা হচ্ছে—মনে হচ্ছে মুসলমানদের চিহ্নিত করে তাদের অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া হচ্ছে।’

কংগ্রেসের এমপি ইমরান প্রতাপগড়ী প্রশ্ন তুলেছেন, ‘নবী মুহাম্মদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করলে মামলা হলে ভারতের ৩০ কোটি মুসলমানের বিরুদ্ধেই কি মামলা হবে?’ তবে তিনি মুসলিম যুবকদের সতর্ক করে বলেন, ‘বিনা অনুমতিতে মিছিল করলে আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন। প্রতিবাদের নির্দিষ্ট জায়গা ব্যবহার করা উচিত বা সামাজিক মাধ্যমেও প্রতিবাদ জানানো যেতে পারে।’

অন্যদিকে বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ধর্মীয় পরিচয় দেখে নয়, আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কানপুরের ঘটনার পর শুধু উত্তর প্রদেশ নয়, অন্য রাজ্যেও মুসলমানরা ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করছেন এবং অনেকে তা প্রোফাইল পিকচার করছেন।

দৈনিক পুনরুত্থান /

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন