• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

Advertise your products here

  1. সারাদেশ

দুই যুগের বেশি সময় ধরে কক্ষবন্দি নতুন ও পুরোনো এক্স-রে মেশিন


দৈনিক পুনরুত্থান ; প্রকাশিত: রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৭:৫১ পিএম
দুই_যুগের_বেশি_সময়_ধরে_কক্ষবন্দি_নতুন_ও_পুরোনো_এক্স_রে_মেশিন
টেকনিশিয়ানের অভাবে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে দুই যুগের বেশি সময় ধরে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কম

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় রোগ শনাক্তকরণে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এক্স-রে করানোর জন্য স্থানীয় রোগীরা ছুটছেন বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।

অন্যদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে প্যাকেটে বন্দি হয়ে পড়ে আছে অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিন। এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় অবস্থিত ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এতে চিকিৎসার সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে তিনটি এক্স-রে মেশিনের মধ্যে দুটি পরিত্যক্ত রয়েছে শুরু থেকেই। সম্প্রতি সেখানে আরও একটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন বরাদ্দ এসেছে। নিয়মিত রোগীদের এক্স-রের মাধ্যমে চিকিৎসসেবা দেওয়া হয় না বলে রীতিমতো গুদাম ঘরে পরিণত হয়েছে এক্স-রে রুমটি। রোগীদের প্রয়োজনে ব্যবহার না হলে কে বা কারা এবং কী উদ্দেশ্যে ব্যয়বহুল এসব চিকিৎসা যন্ত্র কিনে সরকারি টাকা নষ্ট করছে, সে প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলেন অনেক রোগী ও তাদের স্বজন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, স্থানীয় পর্যায়ে গড়ে ওঠা বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে বাণিজ্যিক সুবিধা দিতে সুকৌশলে এসব কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন হাসপাতালসংশ্লিষ্ট অনেকেই। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেশিন থাকতেও রোগীদের বাড়তি টাকা খরচ করে এক্স-রে করাতে হচ্ছে বাইরে থেকে।

আরও পড়ুন>> রাণীনগরে ইউপি চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে জখম

এদিকে হাসপাতালসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানসম্মত এক্স-রে রুম, চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ ও টেকনিশিয়ান না থাকায় প্যাকেটে বন্দি হয়ে আছে এক্স-রে মেশিন। সে ক্ষেত্রে প্রাথমিক বিষয়গুলো সমাধান না করে কেন অযথা ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন আনা হয়েছে, এমন প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি কর্তৃপক্ষের কাছে।

কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের সেবাদানের জন্য ১৯৭২ সালে হাসপাতালটি স্থাপিত হয়। ১৯৯৫ সালে প্রথমে প্রায় ১৪ লাখ টাকা দামের একটি এক্স-রে মেশিন বরাদ্দ দেওয়া হয় এই হাসপাতালে। পরে ২০০৬ সালে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা দামের আরেকটি নতুন এক্স-রে মেশিন বরাদ্দ হয়। তবে নানা অজুহাতে মেশিনগুলো চালু করা হয়নি। এমন অবস্থার মধ্যে মাস তিনেক আগে ২৩ লাখ টাকা দামের আরেকটি নতুন ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন আনা হয় হাসপাতালে। সেটিও বর্তমানে হাসপাতালের এক্স-রে রুমে প্যাকেটে বন্দি অবস্থায় রয়েছে।

ভুক্তভোগী রোগী ময়নুল ইসলাম পংকি বলেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে কুলাউড়া হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে বাইরে থেকে এক্স-রে করার পরামর্শ দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অতিরিক্ত ৬০০ টাকা দিয়ে বাধ্য হয়ে বাইরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে এক্স-রে করাতে হয়। রিপোর্ট নিয়ে এসে জানতে পারেন তার সমস্যার সমাধান নেই হাসপাতালের চিকিৎসকের কাছে।

প্রত্যক্ষদর্শী অনেকে জানান, কুলাউড়া উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে রোগীরা স্বল্প খরচে সেবা নেওয়ার জন্য ওই হাসপাতালে যান। এ উদ্দেশ্যেই সরকার এ হাসপাতাল করে। তারা মানুষকে পরামর্শ দেন বাইরে থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে। প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০, জরুরি বিভাগে ১০০ থেকে ১৫০ ও এবং ভর্তি অবস্থায় অন্তত ৫০ জন রোগী চিকিৎসা নেন। তবে তাদের চিকিৎসার চেয়ে ভোগান্তিই বেশি। কর্তৃপক্ষের এ ধরনের আচরণের কারণে সরকারি হাসপাতালের ওপর মানুষের আস্থা কমছে। অনেকেই আবার এখানে নাম জুড়ে দিয়ে ব্যবসা করছেন বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফেরদৌস আক্তার বলেন, নতুন টেকনিশিয়ান নিয়োগ হলে এক্স-রে মেশিন সচল করা হবে। টেকনিশিয়ান নিয়োগের জন্য জানানো হয়েছে। মৌলভীবাজার জেলা সিভিল সার্জন চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ জানান, এক্স-রে মেশিন সচল করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে টেকনিশিয়ান নিয়োগ চলমান প্রক্রিয়া।

দৈনিক পুনরুত্থান / নিজস্ব প্রতিবেদক

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন