• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২

Advertise your products here

  1. সারাদেশ

আবহমান বাংলার ঐতিহ্য হুঁকা'র ব্যবহার আর নেই


দৈনিক পুনরুত্থান ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১:৫৭ এএম
আবহমান বাংলার ঐতিহ্য হুঁকার ব্যবহার আর নেই

"ধুমপানের আর একটি নাম হুঁকা"বর্তমানে আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ‘হুঁক্কা’র ব্যবহার আর নেই। নেই তার কদর।

আবহমান বাংলার জনপ্রিয় গান ‘আমার মান কুল মান সব হারাইলাম, এই হুঁক্কার সঙ্গ ধরে রে, ও সাধের হুক্কারে, তোরে ছাড়া প্রাণ বাঁচে না, রই কেমনে ঘরে...; পরানের হুঁক্কারে তোর নাম কে রাখিল ডাব্বা?...’ অথবা রম্য ছড়া ‘হায়রে সে-ই হুঁক্কা, উপরে তার তামাক-কলকি, নিচের দিকে চুক্কা, হায়রে সে-ই হুঁক্কা/নানা বলে নানি বলে, হুঁক্কা ছাড়া জীবন চলে?, হুক্কার পেট ভরা জলে, টানছে দেখ দুজন মিলে, হায়রে সে-ই হুঁক্কা।’

একসময়ের ধূমপানের অন্যতম অনুষঙ্গ ‘হুঁকা’ বা হুঁক্কা নিয়ে রচিত এসব গান, ছড়া এখনও দেশের সংস্কৃতিতে পরিচিত হলেও হারিয়ে গেছে বস্তুটি। এখন শহর দূরের কথা, গ্রামের পর গ্রাম ঘুরেও পাওয়া যায় না হুঁকার দেখা। কালের বিবর্তনে অনেকটা হারিয়ে গেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী হুঁকা।

তিন-চার দশক আগেও বাংলার গ্রামগঞ্জে ধূমপায়ীরা হুঁকার মাধ্যমে তামাকপানের নেশায় ছিল অভ্যস্ত। সে সময় দেশের প্রায় সব বাড়িতেই ছিল এর প্রচলন। তখনকার দিনে গ্রাম্য সালিশ, সামাজিক অনুষ্ঠান বা জমায়েতে ছোটবড় সবাইকে হুঁকায় আপ্যায়নের রীতি ছিল। প্রতিটি গ্রামের প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী বাড়িতে লম্বা পাইপযুক্ত স্ট্যান্ড হুঁকা ওই বাড়ির শোভাবর্ধন ও প্রভাবের সাক্ষ্য বহন করত। বর্তমান প্রজন্মের কাছে হুঁকা একটি অপরিচিত বস্তু। এটি খাওয়া দূরের কথা, চোখেই দেখেনি তারা।

বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী এ হুঁকার জায়গায় বাজার দখল করেছে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নিকোটিনযুক্ত সিগারেট-বিড়ি। প্রজন্মের একটা বড় অংশ নিষিদ্ধ মাদকের নেশায় মাতোয়ারা। অথচ কম নিকোটিনযুক্ত হুঁকার প্রচলন থাকলে যুবসমাজকে মাদক গ্রহণের অধঃপতন থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা করা যেত।

সম্প্রতি নওগাঁর আত্রাই উপজেলার সাহাগোলা ইউনিয়নের নিভৃত গ্রামে হুঁকার সংবাদ সংগ্রহে গেলে দেখা যায়, এক বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে বসে কিছু প্রবীণ ব্যক্তি ধুমপান করছিল।এর মধ্যে নারায়ণ চন্দ্রের সাথে কথা হলে তিনি বলেন,দাদা ও বাবাদের সময় আমাদের এখানে হুঁকার আসর জমতো। বৈকালিক আড্ডায় গ্রামের বয়োবৃদ্ধরা হুঁকা পান করতো সবাই একসাথে। 

আলাপকালে তিনি আরো বলেন, ‘তিন-চার দশক পূর্বেও আমাদের বাপদাদারা তিন বেলা খাবার খেতে ততটা আগ্রহী হতেন না যতটা আগ্রহী ছিলেন হুঁকা টানায়। এ ছাড়া তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন কল্পনাও করা যেত না। ঘরে চালডাল না থাকলেও যথেষ্ট পরিমাণে জমা থাকত হুঁক্কার তামাক। তামাকপাতা টুকরা টুকরা করে কেটে এনে এতে চিটাগুড় মিশিয়ে তৈরি করা হতো বিশেষ এ তামুক। এতে নিকোটিনের পরিমাণ অনেক কম থাকে। যতটুকু নিকোটিন থাকে তা নারকেলের টোলে থাকা পানিতে মিশে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাপদাদার ঐতিহ্য হুঁকা পান করা ধরে রেখতে পারিনি । তবে হুঁকার স্থান দখল করেছে সিগারেট-বিড়ি ও পান।

 

দৈনিক পুনরুত্থান /

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন