চার দিবসসেজে উঠেছে ‘ফুলের রাজধানী’ গদখালি
নববর্ষসহ চার দিবসকে সামনে রেখে উৎসবের আমেজে সেজে উঠেছে ‘ফুলের রাজধানী’ খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি। আসন্ন নতুন বছরকে কেন্দ্র করে গদখালিতে বিপুল অঙ্কের ফুল বিকিকিনি হবে বলে আশা করছেন ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর গদখালিতে ৬৩৮ হেক্টর জমিতে গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা ধরনের ফুলের চাষ করেছেন চাষিরা। শীতকালের এই সময়টাকে ফুলের ভরা মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এই মৌসুমেই খ্রিস্টীয় নববর্ষ, বসন্ত উৎসব, ভ্যালেন্টাইন্স ডে ও শহীদ দিবস লক্ষ্য করে চাষিরা ফুলখেতের নিবিড় পরিচর্যা করে থাকেন।
গদখালির পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইতোমধ্যেই ফুল তুলতে শুরু করেছেন চাষিরা। ভোর থেকেই রঙিন ফুলের ঝুড়ি নিয়ে বাজারে ভিড় করছেন তারা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে উঠেছে মোকাম। তাই গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বেশি লাভবান হওয়ার আশা করছেন চাষিরা।
বিক্রেতারা বলছেন, এ বছর রজনীগন্ধার গুচ্ছ ১০ থেকে ১৫ টাকা, গাঁদা হাজার প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা এবং গোলাপ প্রকারভেদে প্রতিটি ৪ থেকে ৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ভোর থেকেই গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা ধরনের ফুল নিয়ে স্থানীয় বাজারে বসছেন ফুল চাষিরা। কোলাজ ছবি/ইউএনবি
গদখালি ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির নেতারা জানান, এই অঞ্চলের বার্ষিক ফুলের বাজার ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার। সরকারি কর্মকর্তারা এই দাবি অতিরঞ্জন বললেও দেশের মোট ফুলের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশের জোগান আসে এই গদখালি-পানিসারা এলাকা থেকে। বিশেষ দিবসগুলোতে ফুলের দাম আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
চলতি মৌসুমে অতিবৃষ্টির কারণে কিছু ক্ষতি হলেও পরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। তবে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক জটিলতা ও অস্থিরতার সৃষ্টির শঙ্কায় অনেক চাষির কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। তারা পরিবহনসহ বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় থাকার প্রত্যাশা করছেন।
ফুলচাষি আকতার হোসেন বলেন, এ বছর অতিবৃষ্টির কারণে প্রথমবারের চেষ্টা বিফলে গেছে। দ্বিতীয় দফা ফুল আবাদ করতে হয়েছে। এতে গত কয়েক বছরের তুলনায় খরচ বেড়েছে।
ফুল কেনার জন্য বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়। এ বছর ফলন ভালো বলে অন্যান্য বছরের তুলনায় আরও বেশি ফুল বিক্রি হবে বলে আশা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। কোলাজ ছবি/ইউএনবি
আরেক ব্যবসায়ী সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, এ বছর ফুলের আবাদ ভালো হয়েছে, দামও আশানুরূপ মিলছে। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে চাষিরা খানিকটা চিন্তায় আছেন। যদি পরিস্থিতি অনুকূলে থাকে, তাহলে গত বছরের তুলনায় এ বছর ফুলের বিক্রি আরও বাড়বে।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক আবুল হাসান জানান, গত বছরের মতো এ বছরও ফুলের আবাদ ভালো হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। গত বছর ৬৩৭ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়েছিল। এ বছর এক হেক্টর জমিতে আবাদ বেড়েছে।
তিনি বলেন, কৃষক যাতে ন্যায্য মূল্য পায়, সেজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সবরকম সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ বছর ১২২ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হওয়ার আশাব্যক্ত করেন এই কর্মকর্তা।
দৈনিক পুনরুত্থান / নিজস্ব প্রতিবেদক
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
আপনার মতামত লিখুন: