৬ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের দাবিতে দ্বিতীয় দিনেও উত্তাল বুয়েট
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) মধ্যরাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতাদের প্রবেশের ঘটনায় দ্বিতীয় দিনেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল প্রতিষ্ঠানটি। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা।
দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি শিক্ষার্থীরা ছয়টি দফাতে কিছুটা পরিমার্জন এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) পদত্যাগসহ ছাত্রলীগের নেতাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সদ্য হল থেকে বহিষ্কৃত ইমতিয়াজ রাব্বিসহ আরও অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনরতরা।
শনিবার (৩০ মার্চ) সকাল ৭টা থেকে বুয়েট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে সাড়ে ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে পূর্ব ঘোষিত ছয় দফা কিছুটা পরিমার্জন করে উপস্থাপন করেন তারা।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে আন্দেলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, শুক্রবার আন্দোলনের পর তথাকথিত রাজনৈতিক সংগঠনের কিছু ব্যক্তিবর্গকে ফেসবুকে পোস্ট করে আমাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য নিয়ে অপপ্রচার চালাতে দেখি। আমরা তাদের এমন বক্তব্যের ধিক্কার জানাই। আমরা সবসময়ই বুয়েটের সংবিধানে থাকা ‘বুয়েটে সব রকম ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ’ এই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সংঘবদ্ধ এবং যেকোন মূল্যে বুয়েটকে ছাত্ররাজনীতির হাত থেকে মুক্ত রাখতে বদ্ধপরিকর।'
তারা আরও বলেন, আমরা আবারও সুস্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের এসব দাবি শুধু কোনো বিশেষ ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনের বিরুদ্ধে নয়, বরং আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বুয়েটের সংবিধান অনুযায়ী সব রকম ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান করছি।
এর আগে শিক্ষার্থী তাদের পুনঃমার্জন ছয় দফা দাবি পেশ করেন। দাবিগুলো হলো-
১) মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক ইমতিয়াজ রাব্বি ‘বুয়েটে সব রকম রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ এই নীতিমালা ভঙ্গ করার কারণে আমরা আজ সকাল ৯টার মধ্যে ইমতিয়াজ রাব্বির বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং হলের সিট বাতিলের দাবি জানিয়েছিলাম। প্রশাসন কর্তৃক ইমতিয়াজ রাব্বির হল থেকে বহিষ্কার ইতোমধ্যে নিশ্চিত করা হলেও বুয়েট থেকে তার স্থায়ী অ্যাকাডেমিক বহিষ্কার এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত করা হয়নি। আমরা আজ দুপুর ২টার মধ্যে লিখিতভাবে ইমতিয়াজ রাব্বির স্থায়ী অ্যাকাডেমিক বহিষ্কার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
২) উক্ত ঘটনায় ইমতিয়াজ রাব্বির সঙ্গে বুয়েটের বাকি যেসব শিক্ষার্থীরা জড়িত ছিল তাদের একাংশের নাম পরিচয় আমরা ছবি এবং ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে চিহ্নিত করেছি। তারা হলো এ এস এম আনাস ফেরদৌস (আইডি: ১৮১৮০০৪), মোহাম্মদ হাসিন আরমান নিহাল (আইডি: ২১০৬১০১), অনিরুদ্ধ মজুমদার (আইডি: ২১০৬০৭৯), জাহিরুল ইসলাম ইমন (আইডি: ২১১২০৩১) এবং সায়েম মাহমুদ সাজেদিন রিফাত (আইডি: ২১০৬১২৬)। আমরা ইমতিয়াজ রাব্বির মতোই বিশ্ববিদ্যালয় সংবিধানের নিয়ম ভঙ্গের দায়ে এবং বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক অপশক্তি অনুপ্রবেশ করানোর চেষ্টা করায় এদের সবার বুয়েট থেকে স্থায়ী অ্যাকাডেমিক এবং হল বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি। এদের বাইরে বাকি আরও যারা জড়িত ছিল যাদেরকে আমরা শনাক্ত করতে পারিনি, তাদের সবাইকেই যেন বুয়েট প্রশাসন অনতিবিলম্বে শনাক্ত করে এবং উপরে উল্লিখিত অভিযুক্তদের মতোই একই মেয়াদে শাস্তির ব্যবস্থা করে।
৩) বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তিরা যারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলো, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা, তারা কেন, কীভাবে প্রবেশ করার অনুমতি পেলো এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট সদুত্তর এবং জবাবদিহিতা শুক্রবার আমরা প্রশাসনের কাছে চেয়েছিলাম। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের উপাচার্য আমাদের মৌখিক ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। আমরা এই মুহূর্তে এই দাবিটির বিষয়ে বুয়েট প্রশাসনের কাছ থেকে লিখিত নোটিশ এবং বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।
8) শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য ‘রাত সাড়ে ১০টার পরে সব ছাত্রছাত্রীর ক্যাম্পাসে থাকা নিষেধ’ এবং যেকোনো প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের রাত সাড়ে ১০টার পরও ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে হলে সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) স্যারের অনুমতির প্রয়োজন পড়ে।
(ক) এক্ষেত্রে যদি বহিরাগতদের অনুমতি দেওয়া না হয়ে থাকে, তাহলে ডিএসডব্লিউ স্যারের প্রটোকল ভেঙে বহিরাগতরা মধ্যরাতে সেমিনার রুমে মিটিং করতে সক্ষম হয়েছে। এক্ষেত্রে ডিএসডব্লিউ স্যার নিজের প্রটোকল অব্যাহত রাখতে ব্যর্থ।
(খ) আর যদি বহিরাগতদের পারমিশন দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে বুয়েটের ‘রেজিস্ট্রার অফিসের প্রটোকল: ১১ অক্টোবর, ২০১৯’ এ দেওয়া ঘোষণা ‘বুয়েটে সকল প্রকার রাজনৈতিক সংগঠন এবং কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ ইহার লঙ্ঘন করেছেন ডিএসডব্লিউ স্যার।
(গ) ক্যাম্পাসের অডিটোরিয়াম, সেমিনার রুম, ক্যাফেটেরিয়া সংলগ্ন জায়গার ব্যবহার ডিএসডাব্লিউ আওতাধীন। উনি বলেছেন, এ জায়গাগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে উনি অনুমতি দেননি। এক্ষেত্রে উনার অনুমতি ব্যতিরেকে বহিরাগতদের এ জায়গাগুলো ব্যবহার করার মতো ধৃষ্টতামূলক আচরণ ডিএসডাব্লিউ এর দায়িত্বপালনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আমরা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ এমন ডিএসডাব্লিও এর দ্রুততম সময়ের মধ্যে পদত্যাগ চাই।
৫) ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে বহিরাগতদের প্রবেশের কারণে আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। এর প্রতিবাদ হিসেবে আজ ৩০ মার্চের টার্ম ফাইনাল আমরা বর্জন করছি এবং আগামীকাল ৩১ মার্চের টার্ম ফাইনালসহ সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করছি।
৬) আন্দোলনরত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনোরকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না এই মর্মে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
২০১৯ সালে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয়। গত ২৮ মার্চ দিবাগত রাত ১টার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকেই বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন বলে অভিযোগ তুলে ছয় দফা দাবি তুলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাশ-পরীক্ষা বর্জনের ডাক দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করানোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বুয়েটের ২১ ব্যাচেরর পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বি। গত শনিবার রাতে ওই শিক্ষার্থীকে আন্দোলনের এক পর্যায়ে হল থেকে বহিষ্কার করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ।
দৈনিক পুনরুত্থান / স্টাফ রিপোর্টার
- বিষয়:
- বুয়েট ছাত্র
- রাজনীতি
- ছাত্র আন্দোলন
- ছাত্রলীগ
আপনার মতামত লিখুন: