প্রস্তুতি ছাড়াই নতুন শিক্ষাক্রম, কাঠামো প্রণয়ন ডিসেম্বরে

আধুনিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জের জন্য শিশুদের আরো ভালোভাবে তৈরি করার লক্ষ্যে পাঠ্যক্রম সংশোধন করেছে সরকার। বিদ্যমান শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে মূল ভূমিকায় থাকবেন শিক্ষকরা। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই এই নতুন কারিকুলামের একটি প্রাথমিক কাঠামো তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই পরিমার্জিত কারিকুলামে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের আন্দোলনের প্রতিফলন থাকবে বড় পরিসরে।
তবে নতুন কারিকুলামের ভিত্তি হিসেবে ২০১২ সালের সংস্করণ নেওয়া হবে, নাকি ২০২২ সালের কারিকুলামকে ধরে এগোনো হবে; তা এখনো নির্ধারিত হয়নি।
জানা গেছে, সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ২০২২ সালের কারিকুলাম বাস্তবায়ন শুরু করেছিল ২০২৩ সাল থেকে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত তা ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়েছিল। ২০২৫ সাল নাগাদ দশম শ্রেণি এবং ২০২৭ সাল নাগাদ দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তা চালু হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার মাধ্যমিকে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আবার ২০১২ সালের পুরনো কারিকুলামে ফিরে যায়। যদিও প্রাথমিক স্তরে ২০২২ সালের কারিকুলামই বহাল রাখা হয়েছে।


বর্তমান সরকার ২০২৭ সাল থেকে নতুনভাবে পরিমার্জিত কারিকুলাম চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে। শুরুতে ষষ্ঠ শ্রেণিতে তা কার্যকর হবে, এরপর প্রতি বছর এক শ্রেণি করে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নতুন কারিকুলাম এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে ফ্রেমওয়ার্ক চূড়ান্ত করা হবে, যাতে ২০২৭ সাল থেকে বাস্তবায়ন শুরু করা যায়।’
২০১২ না ২০২২ সালের কারিকুলামকে ভিত্তি ধরে পরিমার্জনা করা হবে—এ প্রশ্নে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশপ্রেম, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ—এই মৌলিক চেতনার জায়গাগুলো অপরিবর্তনীয়। তবে শিক্ষাদান ও শিক্ষাগ্রহণে গ্লোবাল প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন আসবে। সেইসঙ্গে ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনেরও বড় প্রতিফলন থাকবে নতুন কারিকুলামে।
এনসিটিবির সচিব অধ্যাপক মো. সাহতাব উদ্দিন বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি যদি ২০১২ অথবা ২০২২ সালের কারিকুলাম পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত দেয়, তা অনুসারে চূড়ান্ত রূপ পাবে নতুন কারিকুলাম। এখনও ‘নিড অ্যাসেসমেন্ট’ বা কাঠামো চূড়ান্ত হয়নি, তাই আগে মন্তব্য করা সঠিক হবে না।’
গত ৪ জুন এক মতবিনিময় সভায় শিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন, ‘আমরা ২০২৭ শিক্ষাবর্ষের জন্য একটি নতুন শিক্ষা কার্যক্রম প্রস্তুত করছি। প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তি, মানসম্মত শিক্ষা—এসব বিষয় সেখানে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বর্তমান শিক্ষাক্রমের বাইরে এসে মুক্ত চিন্তায় এগোতে হবে। জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে এগোনোর চেষ্টা করছি।’


মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, ‘একসঙ্গে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত কারিকুলাম পরিবর্তন কোনো সুচিন্তিত পদক্ষেপ নয়। তাই ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই শুরু করে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন হবে।’
কী থাকছে নতুন শিক্ষাক্রমে
নতুন শিক্ষাপদ্ধতিতে দশম শ্রেণির আগ পর্যন্ত কোনো পাবলিক পরীক্ষা হবে না। প্রাথমিকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকবে না। চতুর্থ শ্রেণিতে গিয়ে পরীক্ষা হলেও সেটি হবে বিদ্যালয়ে ধারাবাহিকভাবে শিখন কার্যক্রমের মাধ্যমে। একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক, নাকি ব্যবসায় শিক্ষায় পড়বে, সেটি ঠিক হবে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে। একাদশ শ্রেণিতে যাওয়ার আগে শিক্ষার্থীকে দশটি অভিন্ন বিষয় পড়তে হবে।
বর্তমানে নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচি মিলিয়ে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নতুন কারিকুলামে কেবল দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপরেই এসএসসি পরীক্ষা হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি শেষে আলাদা দুটি বোর্ড পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ দুই পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের সমন্বয়ে তৈরি হবে এইচএসসি পরীক্ষার ফল।
মূল্যায়ন হবে যেভাবে


চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে কিছু অংশের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন। বাকি অংশের মূল্যায়ন হবে সামষ্টিকভাবে। বাকি পাঁচ বিষয়ের পুরোটাই মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন। তবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ৭০ শতাংশ সামষ্টিক ও ৩০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে।
সামষ্টিক মূল্যায়নও এখনকার মতো পরীক্ষানির্ভর হবে না। অ্যাসাইনমেন্ট, উপস্থাপন, যোগাযোগ, হাতে-কলমে কাজ পদ্ধতির মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। ফল প্রকাশও এখনকার মতো গ্রেডিং সিস্টেমে হবে না। প্রারম্ভিক স্তর, মাধ্যমিক স্তর ও পারদর্শী স্তর এই তিনটি ধাপে ফল প্রকাশ করা হবে।
দৈনিক পুনরুত্থান /
- বিষয়:
- নতুন শিক্ষাক্রম
- কাঠামো প্রণয়ন
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আপনার মতামত লিখুন: