• ঢাকা
  • বুধবার, ২৮ মে ২০২৫, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

Advertise your products here

  1. জাতীয়

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলা : ১১৮ আসামির ১০৬ জনকে চেনেন না বাদী!


দৈনিক পুনরুত্থান ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৭ মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৮:৩৮ পিএম
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলা : ১১৮ আসামির ১০৬ জনকে চেনেন না বাদী!

গাজীপুর মহানগরের গাছা থানায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এক মামলায় এজাহার নামীয় আসামি করা হয় ৫২ জনকে। কিন্তু থানায় সেই এজাহার পরিবর্তন করে আসামি করা হয়েছে ১১৮ জনকে। পরিবর্তিত এজাহারে বর্ণিত প্রায় একডজন আসামি বাদে বাকি কাউকে চেনেন না বলে জানিয়েছেন বাদী। থানায় একপ্রকার জোর করে নতুন এজাহারে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ তার।

মঙ্গলবার (২৭ মে) টঙ্গী প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন মামলার বাদী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্থানীয় নেতা টঙ্গী সালাউদ্দিন সাদিক। সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘গাছা থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) আলী মোহাম্মদ রাশেদ এজাহার থেকে প্রকৃত আসামিদের নাম বাদ দিয়ে নিরীহ ও নির্দোষ মানুষকে আসামি করে স্থানীয় যুবলীগ নেতাদের সহযোগিতায় মোটা অঙ্কের ঘুষ বাণিজ্য করেছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার সাবেক এই শিক্ষার্থী জুলাই-আগস্টের রক্তাক্ত স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, ‘২০২৪ সালের ১৯ জুলাই উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে আধুনিক হাসপাতালের সামনের গলিতে শহীদ রেদওয়ান শরীফ রিয়াদ মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আমার কোলে শহীদ হন। ওই দিন রিয়াদের রক্তে আমার পুরো শরীর ভিজে গিয়েছিল এবং রক্তে ভিজে থাকা পোশাক পরে প্রায় ছয় ঘণ্টা আমি অতিবাহিত করি। আমার মা সেই ঘটনার সাক্ষী, তিনি সেই রক্তভেজা পোশাক ধুয়ে পরিষ্কার করেছিলেন। এরপর দিন ২০ জুলাই হত্যার উদ্দেশ্যে আমার মাথার বাম পাশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসীরা।’

তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট স্বৈরাচারের পতন হলেও আমার জীবনযাপন অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। নিজের চোখে দেখা জুলাইয়ের প্রত্যেকটি নির্মম ঘটনার স্মৃতি বারবার মনে পড়ে। সেই অনুভূতিগুলোই আমার স্বাভাবিক জীবনযাপনকে বাধাগ্রস্ত করে, যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমার পড়ালেখা। এমনকি নিজের জীবনের স্বপ্ন পূরণের কথা ভুলে গিয়ে, শুধুমাত্র জুলাইয়ের স্মৃতি ধারণ করে চলতে থাকে আমার প্রতিটি দিন। জুলাইয়ের এই নির্মম ঘটনাগুলোর সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে ন্যূনতম হলেও কোনো শাস্তির ব্যবস্থাটুকু না করে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে যাওয়াটা আমার পক্ষে অসম্ভব ছিল। আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল, জুলাইয়ে যে সকল সন্ত্রাসীরা জড়িত ছিল তাদের শাস্তির জন্য একটা প্রশাসনিক ব্যবস্থা করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসব।’

তিনি আরো বলেন, ‘সেই উদ্দেশ্যে আমি সাংগঠনিক কাউকে কিছু না জানিয়ে ব্যক্তিগতভাবে ৫২ জন সন্ত্রাসীকে সনাক্ত করি; যারা জুলাই অভ্যুত্থানে সরাসরি আমার দেখা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। এই ৫২ জনকে আসামি করে একটা মামলা করার উদ্দেশ্যে গাজীপুর মেট্রোপলিটন গাছা থানার ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদের কাছে যাই। আমি নিজে বাদী হয়ে ২৫(৪) ২০২৫ নং মামলাটি ৫২ জন আসামিকে অভিযুক্ত করে করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু গাছার ওসি এবং যুবলীগ নেতাকর্মীরা চক্রান্ত করে মামলাটি নিজেদের মতো করে সাজিয়ে আমাকে জিম্মি করে ১১৮ জনকে আসামি করেছে। যাদের মধ্যে প্রায় ৯০ জন আসামিকেই আমি চিনি না।’

তিনি বলেন, ‘আমি যে ৫২ জন আসামির নামে মামলা করতে চেয়েছিলাম তাদের অনেকের কাছ থেকেই মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে মামলা থেকে বাদ দেন ওসি।’

‘অপরদিকে, যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে অনেক সাধারণ নিরপরাধ-নির্দোষ মানুষকে ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে তারা আসামি করেছে। আমি প্রতিবাদ করায় এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করায় ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদ এবং ওই যুবলীগের কর্মীরা আমার বিভিন্ন রকম ক্ষতি করার জন্য নানান ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। এমনকি ফোনে আমাকে হত্যরা হুমকি দিচ্ছে। আমাকে ফোন করে জানতে চাওয়া হচ্ছে কত টাকার বিনিময়ে আমি চুপ হয়ে যাব।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এসবের মাস্টারমাইন্ড হচ্ছেন স্বৈরাচারীর দোসর গাছা থানার ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদ। এসব ঘটনা আমি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। এ ছাড়া আমি নিজে বাদী হয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর একটা অভিযোগ দায়ের করেছি। ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদ প্রত্যেকটা ব্যাপারেই অনিয়ম এবং দুর্নীতির সাথে জড়িত। আমার সাথেও তিনি একই আচরণ করার পরে আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে নিয়ে খোঁজ নিই। দুই-তিনটা স্পষ্ট প্রমাণসহ তার অপকর্মের রেকর্ড পেয়েছি।’

এ ব্যাপারে গাছা থানার ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তা বাদীর সম্মতিতেই করা হয়। মামলার কপিতে যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের নাম-ঠিকানা দেখেই তিনি মামলায় স্বাক্ষর করেছেন। আমি আসামিদের কাউকে চিনি না। এখন তিনি যে অভিযোগ করছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।’

দৈনিক পুনরুত্থান /

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন