মৃত্যুর আগে স্বামীকে কী বলেছিলেন ২০ শিশুকে বাঁচানো মাহেরীন

উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রেশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় প্রাণ হারান সেখানে চাকরি করা শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরী। অনেক শিশু শিক্ষার্থীকে রক্ষা করে সবার মুখে মুখে এ শিক্ষিকরা বীরত্বগাথা। নিজে বাঁচার সুযোগ পেলেও তা তোয়াক্কা না করে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়েন খুদে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে। এতে মাহেরীনের শরীর শতভাগ দগ্ধ হয়। দুর্ঘটনার দিন রাতে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।


মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকাল ৩টা ২৫ মিনিটে গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়িতে শিক্ষিকা মাহেরীনের লাশ নিয়ে যান স্বজনরা। বিকাল সাড়ে ৩টায় বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শোকার্ত মানুষ তাকে শেষ বিদায় জানান। জনাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে তার লাশ দাফন করা হয়।
নিহত শিক্ষিকার মাহেরীন নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ি চৌধুরী পরিবারের সন্তান এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাতিজি।
বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাহেরীনের কাছে গিয়েছিলেন তার স্বামী মনসুর হেলাল। তিনি বলেন, ‘আমি মাহেরীনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তুমি তোমার নিজের দুই সন্তানের কথা একবারও ভাবলে না! সে বলেছিল, ওরাও তো আমার সন্তান। ওদের একা রেখে আমি কী করে চলে আসি?’
মাহেরীনের ভাই মুনাফ চৌধুরী বলেন, ওখানে যারা ছিলেন, তারা আমাদের বলেছেন, মাহেরীন ইচ্ছা করলে বের হতে পারতেন, কিন্তু হননি। উনি বাচ্চাদের আগে বের করার চেষ্টা করেন।
বোনের মনের জোর ছিল অনেক জানিয়ে এ ভাই আরও বলেন, দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ পর ঠিক কে যেন ফোনে কল করেছিল বলতে পারব না। ফোনে আমাদের পরিবারের একজনকে বলল, ওনার অবস্থা গুরুতর। ওনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমাদের সেখানে যেতে বলেন। কল পাওয়ার পরেই আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সবাইকে নিয়ে হাসপাতালে যায়। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে যাওয়ার পরও জীবিত ছিল আমার বোন। কথাও বলছিলেন। তবে তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল।


প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে মুনাফ বলছিলেন, ‘আগে বের হওয়ার সুযোগ থাকলেও মাহেরীন বের হননি। ওখানে যারা ছিলেন, তারা আমাদের বলেছেন, তিনি তো আসলে আগে বের হতে পারতেন। তিনি আগে বের হননি। তার শিক্ষার্থী যারা ছিল, তিনি তাদের আগে বের করার জন্য চেষ্টা করেছেন। এতে যেটা হয়েছে, তিনি এত বেশি ধোঁয়া আর আগুনে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিলেন যে, তার শ্বাসনালি পুরোপুরি পুড়ে গিয়েছিল। পরে আইসিউতে নেওয়ার পর নিশ্চিত হতে পারি যে, তার শ্বাসনালি পুড়ে গেছে।’
গত সোমবার দুপুরে দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিধ্বস্ত হয় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান। মুহূর্তেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ‘হায়দার আলী’ ভবন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে নেয় শ্রেণিকক্ষে থাকা ছোট ছোট শিশুদের। তাদের বেশির ভাগই ছিল তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, এত ক্ষিপ্র গতিতে বিমানটি আছড়ে পড়ে যে, আশপাশের এলাকাও কেঁপে ওঠে।
এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।একই দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছে ১৬৫ জন।
জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জায়িদ ইমরুল মোজাক্কিন বলেন, ‘মাহেরীন চৌধুরী একজন আলোকিত মানুষ ছিলেন। কারও প্রতি কখনো অন্যায় করেননি এবং অন্যায় কাজে জড়াননি। গ্রামে শিক্ষাবিস্তারে তিনি কাজ করছিলেন।’


দৈনিক পুনরুত্থান /
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আপনার মতামত লিখুন: