ইসরায়েলি বসতিতে কার্যক্রম চালানো ১৫৮ কম্পানির তালিকা প্রকাশ
জাতিসংঘ শুক্রবার ইসরায়েলি বসতিতে কার্যক্রম চালানো ১১টি দেশের ১৫৮টি কম্পানির দীর্ঘ প্রতীক্ষিত হালনাগাদ ডেটাবেস প্রকাশ করেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনারের কার্যালয় (ওএউচসিএইচআর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যালস্টম ও ওপোডোর মতো কয়েকটি কম্পানিকে আংশিক ডাটাবেস থেকে বাদ দেওয়া হলেও এয়ারবিএনবি, বুকিং ডটকম, মটোরোলা সলিউশন্স এবং ট্রিপ অ্যাডভাইজরের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তালিকায় রয়ে গেছে।
এএফপি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো পর্যন্ত কোনো মন্তব্য জানায়নি। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ ইসরায়েলে অবস্থিত হলেও কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, স্পেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কম্পানিগুলোও তালিকায় রয়েছে।
তাদের কর্মকাণ্ডের ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে প্রতিকূল প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে, তা মোকাবেলায় প্রতিবেদনে কম্পানিগুলোকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ভলকার টার্ক অধিকৃত পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বসতি স্থাপন নীতিকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে ভলকার বলেন, ‘এই প্রতিবেদন সংঘাতপূর্ণ এলাকায় কার্যরত কম্পানিগুলোর মানবাধিকার রক্ষায় যথাযথ সতর্কতার দায়িত্বের ওপর জোর দিয়েছে। যাতে তাদের কার্যকলাপ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অংশ না হয়।
’ তবে ইসরায়েল এই প্রতিবেদনকে ‘কোনো আইনি ভিত্তি ছাড়াই এবং ওএইচসিএইচআরের এখতিয়ারের বাইরে তৈরি একটি দলিল’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে।
জেনেভায় অবস্থিত ইসরায়েলের জাতিসংঘ কার্যালয় বলেছে, ‘ওএইচসিএইচআর ইসরায়েলকে কলঙ্কিত করার জন্য জাতিসংঘের সম্পদের অপব্যবহার অব্যাহত রেখেছে, যা প্রমাণ করে তারা তাদের ম্যান্ডেট কার্যকরভাবে পালনে অক্ষম।’ বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘আমরা আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছি যে তারা যেন ইসরায়েলি সংস্থাগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করার এই কুৎসিত প্রচেষ্টার কাছে নতি স্বীকার না করে।’
বেশিরভাগই ইসরায়েলি সংস্থা
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের এক প্রস্তাবের পর ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো এমন একটি তালিকা তৈরি করা হয়, যেখানে অবৈধভাবে দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ব্যবসা থেকে লাভবান সংস্থাগুলোর তথ্য অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছিল।
পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতিগুলোতে নির্মাণ, নজরদারি, উচ্ছেদ ও কৃষিজমি ধ্বংসসহ ১০ ধরনের কর্মকাণ্ডের যেকোনো একটিতে যুক্ত কম্পানির তালিকা করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ডাটাবেসে কম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তি কোনো বিচারিক বা আধা-বিচারিক প্রক্রিয়া নয় এবং তেমন দাবি করে না। যদিও এই ডাটাবেসটি প্রতিবছর হালনাগাদ করার কথা ছিল, তবু ২০২৩ সাল পর্যন্ত কেবল একবারই তা সংশোধন করা হয়েছে এবং তখন মূল তালিকা থেকে কিছু কম্পানির নাম বাদ দেওয়া হয়। শুক্রবারের প্রকাশনা হলো প্রথম আপডেট, যাতে নতুন নাম যোগ করা হয়েছে।
মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, ‘২০২৩ সালে প্রকাশিত তালিকায় মোট ৬৮টি নতুন কম্পানি যুক্ত হয়েছিল।
এর মধ্যে সাতটি কম্পানিকে পরে বাদ দেওয়া হয়েছে। কারণ তারা আর সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে জড়িত ছিল না।’
বিতর্কিত তালিকা
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, তালিকাটি সম্পূর্ণ নয়। তারা স্বীকার করেছে, ৫৯৬টি কম্পানির মধ্যে যাদের সম্পর্কে আবেদন পেয়েছে, তাদের মধ্যে মাত্র ২১৫টি পর্যালোচনা করার সুযোগ হয়েছে। সর্বশেষ আপডেটে কার্যালয় জানিয়েছে, তারা বসতি স্থাপন, নির্মাণ, রিয়েল এস্টেট, খনি ও খনিজ খাতের সঙ্গে সরাসরি ভৌত সংযোগ রয়েছে এমন কম্পানিগুলোকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে।
বাকিগুলো ভবিষ্যতের আপডেটে মূল্যায়ন করা হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। শুরু থেকেই এই প্রক্রিয়া বিতর্কিত ছিল। ২০২০ সালে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র ডাটাবেস তৈরির তীব্র নিন্দা জানিয়েছিল। তৎকালীন ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এটিকে ‘ইসরায়েলের ক্ষতি করতে চাওয়া দেশ ও সংস্থাগুলোর চাপের কাছে লজ্জাজনক আত্মসমর্পণ’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।
আজ, গাজায় যুদ্ধের প্রায় দুই বছর পর বিষয়টি আরো বেশি বিতর্কিত হয়ে উঠেছে।
দৈনিক পুনরুত্থান /
- বিষয়:
- ইসরায়েল
- তালিকা প্রকাশ
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
আপনার মতামত লিখুন: