• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

Advertise your products here

  1. জাতীয়

ভবিষ্যৎ আবহাওয়া নিয়ে ‘ভয়াবহ’ পূর্বাভাস, ক্ষতির মুখে পড়বে উপকূলবাসী


দৈনিক পুনরুত্থান ; প্রকাশিত: বুধবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৮:০১ পিএম
ভবিষ্যৎ আবহাওয়া নিয়ে ‘ভয়াবহ’ পূর্বাভাস, ক্ষতির মুখে পড়বে উপকূলবাসী

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আবহাওয়া কেমন হতে পারে— এ নিয়ে নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন সব পূর্বাভাস, যা বিশেষজ্ঞদের ভাষায় ‘ভয়াবহ’ সতর্কবার্তা।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি), সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ এবং নরওয়েজিয়ান মেট্রোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের যৌথ প্রতিবেদন বলছে, চলমান উষ্ণায়নের ধারা অব্যাহত থাকলে শতাব্দীর শেষে দেশে দেখা মিলবে দুই বিপরীতধর্মী কিন্তু সমান্তরাল দুর্যোগ— বর্ষায় ‘সুপার বর্ষা’, আর গরমে ‘চরম গরম’। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে শিশু, বয়স্ক এবং উপকূল–নির্ভর দরিদ্র জনগোষ্ঠী।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর হোটেল শেরাটনে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, সেভ দ্য চিলড্রেন এবং নরওয়েজিয়ান মেট্রোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে আয়োজিত ‘দ্য ফিউচার ক্লাইমেট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৭১–২১০০ সময়কালে দেশের দৈনিক গড় তাপমাত্রা বাড়তে পারে ১.৫ থেকে ৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র হিটওয়েভ ১৫–২৫ দিন ধরে স্থায়ী হতে পারে, যা মানুষের স্বাস্থ্যে বড় চাপ তৈরি করবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে শিশু, বয়স্ক এবং উপকূল–নির্ভর দরিদ্র জনগোষ্ঠী।

গবেষকেরা জানিয়েছেন, তাপমাত্রা মাত্র ১ শতাংশ বাড়লেই শিশুর খর্বকায়তার ঝুঁকি ৫৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে— যা জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে গভীর ও দীর্ঘমেয়াদি মানবিক প্রভাবগুলোর একটি।

প্রতিবেদন বলছে, বর্ষার ধরনও বদলে যেতে পারে বড়ভাবে। বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত, বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলে। এতে বন্যা, নদীভাঙন ও পাহাড়ি ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়বে। গবেষকেরা এ ধরণের বর্ষাকে বলেছেন ‘সুপার বর্ষা’— যেখানে স্বল্প সময়ে অতিরিক্ত পানি নামবে, নদী–নালা উপচে পড়বে, আর শহরাঞ্চলে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।

আরেকটি বড় ঝুঁকি দেখা দেবে উপকূলে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে দেশের ১৮ শতাংশ উপকূলীয় ভূমি স্থায়ীভাবে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তুলে ধরেছে প্রতিবেদনটি। এতে লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে।

অনুষ্ঠানে নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হোকন আরাল্ড গুলব্রান্ডসেন বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ জলবায়ু নিয়ে যে চিত্র উঠে এসেছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। উষ্ণায়ন, সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধি, হিটওয়েভ— সব মিলিয়ে আগামী কয়েক দশকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।

dhakapost

বিএমডির পরিচালক মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, উষ্ণায়নের গতি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে বৈজ্ঞানিক তথ্যের সঙ্গে বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রায় মিলতে শুরু করেছে। ’ 

‘২০২৪ ছিল রেকর্ড উষ্ণ বছরগুলোর একটি, ২০২৫–এর অক্টোবরও ইতিহাসের অন্যতম উষ্ণতম। এভাবে চললে ভবিষ্যতের আবহাওয়া হবে আরও অস্থিতিশীল’ —বলেন তিনি।

সেভ দ্য চিলড্রেন জানায়, জলবায়ু প্রক্ষেপণগুলোকে শিশু–কেন্দ্রিক অভিযোজন, খাদ্য–পুষ্টি নিরাপত্তা এবং অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশনে এখনই কাজে লাগানো জরুরি। কারণ সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে আছে শিশুদের স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ বিকাশ।

গবেষকদের ভাষায়, এসব পূর্বাভাস শুধু বৈজ্ঞানিক তথ্য নয়— আগামী দিনের সব নীতি, বাজেট ও রাজনৈতিক অঙ্গীকারে জলবায়ু বাস্তবতাকে গুরুত্ব দেওয়ার কঠোর বার্তা। ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে নিরাপদ রাখতে এখনই লাগবে দীর্ঘমেয়াদি, বিজ্ঞান–নির্ভর সিদ্ধান্ত।

দৈনিক পুনরুত্থান /

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন