• ঢাকা
  • শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

Advertise your products here

  1. জাতীয়

মর্নিং বার্ড লঞ্চডুবিতে ৩৪ প্রাণহানি : বিচার শেষ হয়নি চার বছরেও


দৈনিক পুনরুত্থান ; প্রকাশিত: শনিবার, ২৯ জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ০১:০৯ পিএম
মর্নিং বার্ড লঞ্চডুবিতে ৩৪ প্রাণহানি : বিচার শেষ হয়নি চার বছরেও
ফাইল ফুটেজ

চার বছর আগে ২০২০ সালের ২৯ জুন বুড়িগঙ্গায় মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা মর্নিং বার্ড লঞ্চটি চাঁদপুরগামী ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায়। এতে মর্নিং বার্ডের ৩৪ যাত্রী মারা যান। এ ঘটনায় ময়ূর-২ লঞ্চের মালিকসহ সাত জনের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় মামলা করে নৌ-পুলিশ। তদন্ত শেষে ২০২১ সালে ১১ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। ঘটনার চার বছর পার হলেও এখনও শেষ হয়নি বিচার।

বর্তমানে মামলাটি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ শেখ হেলাল উদ্দিনের আদালতে বিচারাধীন। মামলাটিতে চার্জশিটভুক্ত ৩৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ। আসামিদের সাফাই সাক্ষ্যের জন্য রয়েছে। আগামী ৪ জুলাই মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করছে রাষ্ট্রপক্ষ। তবে আসামিপক্ষের দাবি, সাক্ষ্য গ্রহণে আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ উঠে আসেনি। সাফাই সাক্ষীর মাধ্যমে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করার প্রত্যাশা জানিয়েছেন তারা।

সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিমল সমাদ্দার বলেন, এটা একটি চাঞ্চল্যকর মামলা। মামলা দ্রুত শেষ করতে প্রথম থেকেই আমরা তৎপর ছিলাম। ৪২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এরপর আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানি শেষ হয়। আসামিরা এখন নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দিচ্ছেন। এরপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন।

বিচার বিলম্ব হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, আসামিপক্ষ মামলার কার্যক্রম বিলম্বিত করছেন। গত তিনটি তারিখে সাফাই সাক্ষ্য দিতে তারা সময় চান। আদালত তাদের সময় মঞ্জুর করেন। সময় না দিলে উচ্চ আদালতে যেতে পারেন। এজন্য আদালত তাদের সময় দিচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, সাক্ষ্যে একটা বিষয় মোটামুটি উঠে এসেছে ময়ূর-২ লঞ্চটি দ্রুত গতিতে ঘাটে যাওয়ার সময় মর্নিং বার্ডকে ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দিয়েছে। এ কারণে এতগুলো প্রাণ ঝরে গেছে। আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, তাদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে।

dhakapost

অপরদিকে ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ ছোয়াদসহ ৯ জনের আইনজীবী সুলতান নাসের বলেন, মামলাটি সাক্ষ্য শেষে আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানিও হয়েছে। এখন আসামিদের সাফাই সাক্ষ্য চলছে। যুক্তিতর্ক শেষে আদালত রায় ঘোষণা করবেন। তিনি বলেন, মামলায় ৩৬ জন সাক্ষীর কেউ বলতে পারেননি, কোন লঞ্চ কাকে ধাক্কা দিয়েছে। বড় লঞ্চ ছোট লঞ্চকে ধাক্কা দিয়েছে কেউ বলেনি। তারা শুধু ডুবতে দেখেছেন। সব আসামি সাফাই সাক্ষী দেবে। আশা করছি, আসামিদের নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবো। তারা এ মামলায় খালাস পাবেন।

২০২০ সালের ২৯ জুন মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে মর্নিং বার্ড নামের লঞ্চটি। সদরঘাটে পৌঁছানোর আগে চাঁদপুরগামী ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায়। এ দুর্ঘটনায় মর্নিং বার্ডের ৩৪ যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ঘটনার পরের দিন ৩০ জুন রাতে নৌ-পুলিশের সদরঘাট থানার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ শামসুল বাদী হয়ে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগ এনে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সদরঘাট নৌ-থানা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর শহিদুল আলম ১১ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

আসামিরা হলেন- ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ ছোয়াদ, মাস্টার আবুল বাশার মোল্লা, সহকারী মাস্টার জাকির হোসেন, চালক শিপন হাওলাদার, শাকিল হোসেন, সুকানি নাসির হোসেন মৃধা, গিজার হৃদয় হাওলাদার, সুপারভাইজার আব্দুস সালাম, সেলিম হোসেন হিরা, আবু সাঈদ ও দেলোয়ার হোসেন সরকার। আসামিরা সবাই উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, লঞ্চ মালিক কিছু কমোড ও মালপত্র নামানোর জন্য ময়ূর কোম্পানির ম্যানেজার, সুপারভাইজার, মালিক এবং অন্য কর্মকর্তারা মাস্টার, সুকানি, ড্রাইভার ও গ্রিজারদের নির্দেশ দেয়। যে কারণে ঘাতক লঞ্চের কর্মচারীরা তাড়াহুড়া করে দ্রুত মালপত্র সরবরাহের জন্য বোগদাদিয়া ডকইয়ার্ড ছেড়ে টার্মিনালের দিকে রওনা হয়। এ ছাড়া মাস্টার বা সুকানি হেলপার দিয়ে লঞ্চ চালানো দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। সার্ভে সনদ অনুযায়ী যাদের লঞ্চ পরিচালনার কথা, তারা লঞ্চে ছিলেন না। আসামি আবুল বাশার, জাকির, নাসির, শিপন, শাকিল, হৃদয়ের নির্দেশনা ভুল থাকায় লঞ্চের গতি ছিল অনেক বেশি। যেখানে ধীর হওয়ার কথা, সেখানে ফ্রন্ট গিয়ারে রেখে দ্রুত ও বেপরোয়াভাবে গতি আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়, যা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, লঞ্চ মালিক মোসাদ্দেক হানিফ সোয়াদ, ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন, সুপারভাইজার আবু সাঈদ, সেলিম হোসেন ও সালামরা ময়ূর কোম্পানির সার্বিক পরিচালনাকারী। তাদের ভুল দিকনির্দেশনায় এবং পরিচালনায় ৩৪ নিরীহ মানুষের জীবন চলে যায়। ডুবে যাওয়া লঞ্চের মাস্টার-সুকানিরা বারবার সংকেত দেওয়ার পরও এজহারনামীয় আসামিরা দ্রুত ঘাটে যেতে মর্নিং বার্ডকে অতিক্রম করার চেষ্টা করে, যে কারণে ধাক্কা লেগে মুহূর্তেই লঞ্চটি তলিয়ে যায়।

দৈনিক পুনরুত্থান / স্টাফ রিপোর্টার

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন