যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েও সুদানের রাজধানীতে ড্রোন হামলা আরএসএফের
সুদানের রাজধানী খার্তুমের কাছে শুক্রবার বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এ ঘটনার এক দিন আগে র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) জানিয়েছিল, তারা মানবিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে।
সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা খার্তুমে বসবাসকারীরা এএফপিকে জানিয়েছে, তারা রাতে ড্রোন ও বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম থেকে জেগে উঠেছিলেন।
বাসিন্দারা বলেন, শুক্রবার ভোরের দিকে বিস্ফোরণগুলো একটি সামরিক ঘাঁটি এবং একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে সংঘটিত হয়েছে বলে মনে হয়েছে।
আরএসএফ এসব ঘটনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে সুদানের সামরিক নেতৃত্বাধীন সরকার জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি নিয়ে সতর্ক থাকবে, কারণ এ গোষ্ঠী ‘বিরতি মানে না’।
দুই পক্ষ এপ্রিল ২০২৩ সালে সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে, যাতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে এক লাখ ৫০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং আরো এক কোটি ২০ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।
এই সপ্তাহে জাতিসংঘ-সমর্থিত বৈশ্বিক ক্ষুধা পর্যবেক্ষক নিশ্চিত করেছে, সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি ছড়িয়ে পড়ছে।
খার্তুমের পাশাপাশি শহরটির প্রায় ৩০০ কিলোমিটার উত্তরে সেনা নিয়ন্ত্রিত আতবারা শহরেও শুক্রবার ড্রোনের শব্দ শোনা গেছে।
সেখানে থাকা এক বাসিন্দা এএফপিকে বলেন, ‘বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী সেগুলো গুলি করে নামিয়েছে, কিন্তু আমি শহরের পূর্বদিকে আগুন জ্বলতে দেখেছি এবং বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি।’
এর এক দিন আগে আরএসএফ ঘোষণা করেছিল, তারা যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), সৌদি আরব ও মিসর প্রস্তাবিত একটি মানবিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
এই চার দেশ সেপ্টেম্বর মাসে পরিকল্পনাটি পেশ করে বলেছিল, এর পর একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং বেসামরিক শাসনে রূপান্তর ঘটতে হবে।
সেই সময়ে সুদানের সরকার ‘বিদেশি হস্তক্ষেপ’ প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং যে কোনো প্রচেষ্টাকে নিন্দা করেছিল যা তাদেরকে ‘বিদেশি ভাড়াটে সেনার ওপর নির্ভরশীল বর্ণবাদী সন্ত্রাসী মিলিশিয়া’র সঙ্গে তুলনা করে।
এরপর থেকে প্রস্তাবটিতে কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না তা স্পষ্ট নয়।
তবে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকায় নিযুক্ত সুদানের রাষ্ট্রদূত বলেন, তার দেশের জন্য পরিকল্পনায় সম্মত হওয়ার এখনো সময় হয়নি।
ওসমান আবু ফাতিমা আদম মোহাম্মদ বলেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যুদ্ধের শুরুতে অনেক যুদ্ধবিরতি হয়েছিল, কিন্তু প্রতিবারই আরএসএফের পক্ষ থেকে কোনো শ্রদ্ধা বা সম্মান দেখা যায়নি। তারা এ যুদ্ধবিরতিগুলোকে নতুন এলাকায় অগ্রসর হওয়ার ও সরকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে।’
রাষ্ট্রদূত ইউএইর যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অংশগ্রহণের বিরোধিতা করেন, পুনরায় তার সরকারের অভিযোগটি তুলে ধরে বলেন, উপসাগরীয় এই দেশটি আরএসএফকে অস্ত্র ও বিদেশি যোদ্ধা সরবরাহ করছে।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ ধরনের সামরিক সহায়তার অভিযোগগুলো বিশ্বাসযোগ্য, যদিও ইউএই আরএসএফের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে।
এর আগেও আরএসএফ ও সেনাবাহিনী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মত হয়েছিল, কিন্তু কোনোটি টেকেনি।
এবার আরএসএফ ১৮ মাস ধরে অবরুদ্ধ রাখার পর অবশেষে গুরুত্বপূর্ণ শহর এল-ফাশের দখলে নেওয়ার পরই ঘোষণা দেয়, তারা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
এখন আধাসামরিক এই গোষ্ঠী এল-ফাশের এবং তার মাধ্যমে দারফুরের বিস্তৃত পশ্চিমাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করার পর ভবিষ্যতের যুদ্ধবিরতি আলোচনায় আরো বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
তবে এল-ফাশের পতনের সময় ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও যৌন সহিংসতার ঘটনায় আন্তর্জাতিক নিন্দার মুখোমুখি হয়েছে আরএসএফ, যদিও তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
দৈনিক পুনরুত্থান /
- বিষয়:
- যুদ্ধবিরতি
- ড্রোন হামলা
- সুদান
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
আপনার মতামত লিখুন: