• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২

Advertise your products here

  1. জাতীয়

আমদানি-রপ্তানির আড়ালে হাজার কোটি টাকা পাচার টিকে গ্রুপের!


দৈনিক পুনরুত্থান ; প্রকাশিত: রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৮:০৩ পিএম
আমদানি-রপ্তানির আড়ালে হাজার কোটি টাকা পাচার টিকে গ্রুপের!

আমদানি-রপ্তানির আড়ালে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে টিকে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এবং এর পরিচালক মোহাম্মদ মুস্তাফা হায়দার ও তার পরিবারের সদস্যরা। পাচারকৃত বিপুল অর্থ দিয়ে বিদেশে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। কিনেছেন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাড়ি, ভিলা, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট। টিকে গ্রুপের স্বত্বাধিকারীর বিরুদ্ধে এমন সব অভিযোগ সামনে রেখে তদন্ত করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং সিআইডি।

কোন দেশে কী পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে গ্রুপটি সেই তালিকা করছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এসব অর্থ কিভাবে পাচার করা হয়েছে, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশের ভোজ্যতেল আমদানির শীর্ষে থাকা টিকে গ্রুপ ও তার মালিকদের নামে অর্থপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, টিকে গ্রুপের গ্রুপ পরিচালক মোহাম্মদ মুস্তাফা হায়দার ও তার ভাই-বোনরা সিঙ্গাপুরে একাধিক অফশোর কম্পানির স্বত্বাধিকারী হয়েছেন। এইচপিআর শিপিং পিটিইতে মুস্তাফা হায়দারের ৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে ওই প্রতিষ্ঠানেই তার বোন ফারজানা আফরোজ ও রিজওয়ানা আফরোজ বিনতে কালামের প্রতিজনের ২৫ শতাংশ করে শেয়ার রয়েছে। তিন ভাই-বোনেরই সিঙ্গাপুর এনআরআইসিএস (ন্যাশনাল রেজিস্ট্রেশন আইডেনটিটি কার্ড অব সিঙ্গাপুর) আছে।

সিঙ্গাপুরের নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য এই কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক। ফারজানা আফরোজ সেখানে এসইউপি এন্টারপ্রাইজ পিটিই নামের একটি আলাদা কম্পানির মালিক। কম্পানিটি সিঙ্গাপুরে ই-কমার্স এবং পাইকারি বাণিজ্যভিত্তিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। ফারজানা আফরোজের স্বামী আসিফুর রহমান আকিজ তাকাফুল লাইফ ইনস্যুরেন্স পিএলসির একজন স্বতন্ত্র স্বত্বাধিকারী ও সহপরিচালক। মুস্তাফা হায়দার সামুদা ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের একজন পরিচালক।

তিনি প্রিমিয়াম সিমেন্টের চেয়ারম্যানও। এ ছাড়া তিনি সামুদা রাসায়নিক কমপ্লেক্স লিমিটেড, সামুদা পাওয়ার লিমিটেড, সামুদা কস্টিক লিমিটেড, সামুদা পেরোক্সাইড লিমিটেডের পরিচালক। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, টিকে গ্রুপ বিদেশে বিনিয়োগে কোনো অনুমোদনের জন্য আবেদন করেনি। 

জানা গেছে, বিশ্ববাজার থেকে শিল্প সুবিধার আওতায় বেসরকারি খাত থেকে বছরে গড়ে ১৮ থেকে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেল আমদানি করা হয়। এর ৮০ শতাংশই আমদানি করে টিকে গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটি শিল্প সুবিধা নিয়ে আমদানির সময় কর পরিশোধ না করে ট্যাংকে রাখা তেল খালাসের সময় ধাপে ধাপে পরিশোধ করে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমদানি-রপ্তানির আড়ালে টিকে গ্রুপ অর্থ পাচার করেছে। এসব অর্থের বেশির ভাগ মালয়েশিয়াতে নেওয়া হয়েছে। টিকে গ্রুপের ব্যবসার মধ্যে রয়েছে ভোগ্যপণ্য আমদানি ও বিপণনের পাশাপাশি তেল কারখানা, স্টিল মিল, পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিল, পোশাক উৎপাদন কারখানা, প্যাকেজিং অ্যান্ড কনটেইনার পরিবহন ব্যবসা, চা-বাগান, জাহাজ নির্মাণ এবং শেয়ার অ্যান্ড স্টক ব্রোকারস খাতসহ মোট ৫০টি প্রতিষ্ঠান। 

টিকে গ্রুপ পাম ও সয়াবিন তেল পরিশোধিত ও অপরিশোধিত দুইভাবেই আমদানি করে। অপরিশোধিত অবস্থায় আমদানি করা সয়াবিন তেল স্থানীয়ভাবে পরিশোধনের পর বাজারজাত করা হয়। তবে দেশের বাজারে ব্যবহার ও আমদানি বেশি হয় প্রধানত পরিশোধিত পামঅয়েল। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে পামঅয়েল বেশি আমদানি করে গ্রুপটি। সয়াবিন আমদানি করে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, আমদানি-রপ্তানির আড়ালে কিছু বড় প্রতিষ্ঠান দেশ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ পাচার করেছে। পাচারের অর্থ দিয়ে বিদেশে অনেক সম্পদও করেছে তারা। কোনো ধরনের গোপনীয়তা না রেখেই বিদেশে ব্যবসা করছে। এরই মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠান ও তার মালিকদের তালিকা করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান ও তার মালিকদের নামে অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে। বিগত সরকারের আমলে এসব প্রতিষ্ঠান ও তার মালিকরা বৈধ-অবৈধ সুবিধা নিয়ে ব্যবসা করেছেন। 

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. আবদুল মজিদ বলেন, দেশি-বিদেশি প্রতিবেদনে বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের বিষয়টি প্রমাণিত। সাধারণত ছোট মাপের প্রতিষ্ঠান অর্থ পাচার করে না। বড় মাপের প্রতিষ্ঠান এসব অপরাধ করে থাকে। তাদের শাস্তি দিতে হবে।

দৈনিক পুনরুত্থান /

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন