কালভার্টের মুখ বন্ধ করে তুলার মিল ও খামার নির্মান, ৬মাস ধরে পানিবন্দি প্রায় ১০০ পরিবার!

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার চকাদিন গ্রামের পানি নিস্কাশনের কালভার্টের মুখ বন্ধ করে তুলার মিল এবং মুরগীর খামার নির্মান করা হয়েছে। ফলে বৃষ্টির পানি নিস্কাশন হতে না পেরে প্রায় ১০০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পরেছে। গত ৬মাস ধরে এমন জলাবদ্ধতার কারনে বসবাস করতে না পেরে অনেকেই বাড়ী ছেরে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়া গুদামে পানি ঢুকে প্রায় ৭লাখ টাকার তুলা নষ্ট হয়ে গেছে। তবে এসব ঘটনায় বার বার ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেও কোন সুরাহা না পাওয়ায় চরম দূর্ভোগে পরেছেন ঐএলাকার বাসিন্দারা।


স্থানীয় সুত্রে জানাগেছে,উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের কুবরাতলী চকাদিন মহল্লায় প্রায় ১০৬টি পরিবার বসবাস করেন। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি তুলার মিল রয়েছে। ওই মহল্লার চারদিক দিয়েই পাকা সড়ক বয়ে যাওয়ায় একদম মধ্যে পরেছে এই মহল্লাটি। বৃষ্টির পানি হলে ওই মহল্লার উত্তর দিকে কুবরাতলী-ত্রিমোহনী হাট সড়কের চককুতুব এলাকায় কালভার্ট দিয়ে পানি নেমে যেতো এবং মহল্লার দক্ষিনে রাণীনগর-আত্রাই আঞ্চলিক মহা সড়কের চকাদিন এলাকার কালভার্ট দিয়ে পানি নেমে যেতো। কিন্তু চকাদিন এলাকার কালভার্টের নালার মুখ মাটি ভরাট করে তুলার মিল নির্মান এবং চককুতুব এলাকায় কালভার্টের নালার মুখ বন্ধ করে মুরগীর খামার গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে বৃষ্টি হলেই পানি নিস্কাশন হতে না পেরে চরম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে বাড়ী ঘরে পানি ঢুকে পরছে।
মহল্লার বাসিন্দা শাকিলা বিবি জানান,গত ৬মাস ধরে ঘরে প্রায় হাটু পানি জমে আছে। ঘরের মেঝেতে চৌকির উপর কোন রকমে রাত যাপন করতে হচ্ছে। এছাড়া সময় সড়কের উপর গিয়ে রান্না করতে হচ্ছে। ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
রকিব মন্ডল জানান,জলাবদ্ধতার কারনে বাড়ী থেকে কোমড় পানি ভেঙ্গে সড়কে যেতে হচ্ছে। ছোট ছোট শিশুরা স্কুলে পড়া শোনা করে । প্রতিদিনই কাপড় ভিজে তাদের চলাচল করতে হয়। তাই সিমেন্টের চাড়াই কিনে ওই চাড়াইয়ে চলাচল করছেন।
আনছার সদস্য সিদ্দিক মন্ডল জানান,জলাবদ্ধতার কারনে হাটু পানি ভেঙ্গে টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে পড়ায় দীর্ঘ সময় ধরে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মহল্লাবাসীদের। এতে একদিকে যেমন পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে হচ্ছে অন্য দিকে প্রতিনিয়ত সাপ-পোকা মাকড়ের ভয় আর আতংক নিয়ে জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
জাহানারা বিবি জানান,সব সময় ঘরের মধ্যে হাটু পানি থাকার কারনে বসবাস করতে না পেরে প্রায় তিন মাস ধরে মেয়ের বাড়ীতে রয়েছি। তিনি বলেন আমার মতো মহল্লার ফাতেমা আক্তার এবং রাশেদা বিবিও বাড়ী ছেরে অন্যের বাড়ীতে বসবাস করছে।


সাথী আক্তার জানান,গত তিন মাস আগে শ্বশুর মারাগেছেন,বাড়ীর সাথে লাগানো পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও পানিতে ডুবে থাকায় সেখানে দাফন করতে পারিনি। এটা আমাদের জন্য অনেক কষ্টের কারণ!
তুলার মিল মালিক শহিদুল ইসলাম বলেন,পানি নিস্কাশনের দুই কালভার্টের নালার মুখ বন্ধ করে তুলার মিল এবং খামার নির্মান করায় বৃষ্টি হলেই পানি বের হতে না পেরে বাড়ী ঘর ডুবে যাচ্ছে। তিনি বলেন,মিলের গুদামে পানি ঢুকে প্রায় আড়াই লাখ টাকার এবং অপর মিল মালিক উজ্জল হোসেনের প্রায় তিন লাখ টাকার তুলা নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি আরো জানান,এবিষয়ে কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বার বার বলেও কোন সুরাহা হয়নি। পানি নিস্কামনের ব্যবস্থা করে দূর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত সংশ্লিষ্ঠদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
তুলার মিল নির্মানকারী রেহেল হোসেন বলেন,পানি নিস্কাশনের জন্য মাটি খুঁরে নালা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু বৃষ্টিপাতের কারনে নালা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানি বের হতে পারছেনা। এতে আমারও প্রায় দেড় লাখ টাকার তুলা নষ্ট হয়ে গেছে।
মুরগীর খামার নির্মানকারী আশরাফ আলী বলেন,এই কালভার্টের নিচ দিয়ে গভীর নলকূপের ড্রেন ছিল। এই ড্রেন দিয়েই মহল্লার বৃষ্টির পানি নিস্কাশন হতো এবং নলকূপের পানি জমিতে সেচ দিত। কিন্তু মাটির নিচে পাইপ দিয়ে নলকূপের ড্রেন নির্মান করায় উপরের ড্রেন বন্ধ হয়ে গেছে। তাই মাটি ভরাট করে মুরগীর খামার নির্মান করেছি।
কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত (১,২ও ৩নং ওয়ার্ডের) সদস্য মোছা: জীবন নেসা বলেন, পানিবন্দিদের তালিকা করেছি। এই তালিকায় প্রায় ৯৬টি পরিবারের তথ্য পেয়েছি।


কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মকলেচুর রহমান বাবু বলেন, ওই মহল্লার পানি নিস্কাশনের জন্য ড্রেন নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু কেউ জায়গা দিতে রাজি না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।
রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রাকিবুল হাসান বলেন,এমন ঘটনার খবর পেয়ে বুধবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সাময়িকভাবে পানি নিস্কাশনের একটা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া পানি নিস্কাশনের জন্য প্রকল্পের মাধ্যমে ড্রেন নির্মান করে স্থায়ী সমাধানের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
দৈনিক পুনরুত্থান /
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আপনার মতামত লিখুন: