ফের রাজপথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিএনপিকে হুঁশিয়ারি

রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যা ও সারাদেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক শেল্টারে চাঁদাবাজি, দখলদারি, হামলা ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।


আজ (শনিবার) সন্ধ্যা ৭টায় মিছিলটি রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে শহীদ মিনার পৌঁছে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। মশাল মিছিল থেকে ‘চাঁদাবাজদের ঠিকনা, এই বাংলায় হবে না’, ‘চাঁদাবাজদের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও,’ ‘দালালি না রাজপথ? রাজপথ রাজপথ,’ ‘যেই হাত মানুষ মারে, সেই হাত ভেঙে দাও,’ ‘আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে শোনা যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ বলেন, ইন্টেরিম সরকারের আমলে পুলিশি ব্যবস্থা ও জননিরাপত্তা দেখে মনে হয় এটি শেখ হাসিনার আমলের পুলিশ। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ফেসবুকে পোস্ট দেয় “দেশকে প্রস্তর যুগে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।” বাংলাদেশকে নিয়ে যারা বেশি ভাবে তার মধ্যে তিনি একজন। তিনি সরকার বসে থেকে কিভাবে এমন কথা বলেন। আপনাদের বাধা কোথায়? আমাদের বলুন। জুলাইয়ের ছাত্র জনতা এখনো ঘরে ফিরে যায়নি।
রিফাত রসিদ বলেন, যুবদল নেতা কর্তৃক ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়েছে দুইদিন আগে। কিন্তু প্রকাশিত হয়েছে গতকাল। মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার কাছে এই ভিডিও চিত্র ছিল। কিন্তু তারা ভিডিও প্রকাশ করেনি। হাসিনা চলে গেলেও মিডিয়াগুলো কোল পরিবর্তন করে অন্য একটি রাজনৈতিক দলের কোলে স্থান করে নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ড বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। এটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পশ্চাৎগামী ধারারই অংশ, যেখানে ছাত্র রাজনীতিকে চাঁদাবাজি ও খুনের পৃষ্ঠপোষক বানানো হয়েছে। আমরা বিএনপিকে স্পষ্ট করে দিতে চাই, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নাম করে যারা সন্ত্রাসে মদদ দেয়, তাদেরও প্রতিরোধ করা হবে।”
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনাম বলেন, “জুলাইর গণঅভ্যুত্থান দেখিয়েছে, এই দেশের মানুষ দখলবাজদের বিরুদ্ধে কতটা সোচ্চার হতে পারে। আজ সেই ঐক্য আবার গড়ে তুলতে হবে, দলের মুখোশধারী চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে, নিপীড়নের রাজনীতির বিরুদ্ধে। ছাত্রসমাজকে এই সংগ্রামে সম্মিলিত হতে হবে।”


উল্লেখ্য, গেল বুধবার রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯)। হত্যার আগে ডেকে নিয়ে তাকে পিটিয়ে এবং ইট-পাথরের টুকরা দিয়ে আঘাত করে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাকে বিবস্ত্র করা হয়। তার শরীরের ওপর উঠে লাফায় কেউ কেউ।
এ ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এ ঘটনায় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততার কথা জানা গেছে। গতকাল সন্ধ্যায় এই মামলার দুই আসামিকে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী যুবদল। হত্যা মামলার আরও দুই আসামিকে নিজেদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল।
‘নির্বাচন নেই বলে আজ দেশে এই ঘটনাগুলো ঘটছে’
এদিকে এ ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘সরকারকে আহ্বান জানাবো, অতিদ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত যারা অপরাধী তাদের বের করে শাস্তির ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না, জাতি আপনাদের দায়ী করবে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে নেওয়ার সময় এসব সমস্যা তৈরি করার জন্য।’
আজ বিকেলে গুলশানে হোটেল লেকশোরে ছাত্র দলের এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচন নেই বলে আজ দেশে এসব ঘটনা ঘটছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, নির্বাচন নেই বলে আজ দেশে এই ঘটনাগুলো ঘটছে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে, মৃত্যু বাড়ছে, দুবৃর্ত্তরা সুযোগ নিচ্ছে। কারণ তাদের পেছনের জনগণের সমর্থন নেই। কিন্তু একটা নির্বাচিত সরকার এলে নিসন্দেহে সেটা শক্তিশালী সরকার হবে।


দৈনিক পুনরুত্থান /
- বিষয়:
- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
- বিএনপি
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আপনার মতামত লিখুন: