বেড়েছে সাত ধরনের অপরাধ, অক্টোবরে তিন শতাধিক হত্যা
সারা দেশে হত্যাসহ সাত ধরনের অপরাধ বেড়েছে। অন্য ছয়টি অপরাধের মধ্যে রয়েছে—ডাকাতি-দস্যুতা, অপহরণ, নারী ও শিশু নির্যাতন, চুরি, সিঁধেল চুরি ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবর মাসে এই সাত ধরনের অপরাধের ঘটনায় ৫ শতাংশ মামলা বেড়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের অপরাধবিষয়ক মাসিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ১৩ মাসে সারা দেশে উল্লিখিত সাত ধরনের অপরাধমূলক ঘটনায় ৩৯ হাজার ৯৩৬টি মামলা হয়েছে।
এই হিসাবে প্রতি মাসে মামলা তিন হাজার ৭২টি। প্রতিদিন মামলা ১০২টি। প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত অক্টোবরে হত্যা মামলা হয়েছে ৩১৯টি, সেপ্টেম্বরে ছিল ২৯৭টি। অক্টোবরে ডাকাতি-দস্যুতার ঘটনায় মামলা ২৩৬টি, সেপ্টেম্বরে ২১০টি।
নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় অক্টোবরে মামলা এক হাজার ৯৮৫টি, সেপ্টেম্বরে এক হাজার ৯২৮টি। অক্টোবরে অপহরণের ঘটনায় মামলা ১১০টি, সেপ্টেম্বরে ৯৬টি। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় অক্টোবরে মামলা ৬৯টি, সেপ্টেম্বরে ৪৩টি। চুরির ঘটনায় অক্টোবরে মামলা ৩০১টি, সেপ্টেম্বরে ২৯৫টি।
সিঁধেল চুরির ঘটনায় অক্টোবরে মামলা ৩০১টি, সেপ্টেম্বরে ২৯৫টি।
সর্বশেষ গতকাল সোমবার পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে প্রকাশ্যে গুলি করে তারিক সাইফ মামুন নামের একজনকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পুলিশের ভাষ্য, নিহত মামুন সরকারের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। রবিবার মুন্সীগঞ্জে আরিফ মীর নামের এক বিএনপি নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
সাম্প্রতিক অপরাধমূলক ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে পূর্বশত্রুতা, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক প্রতিশোধস্পৃহা, সমাবেশকেন্দ্রিক বিরোধ, কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখল নিয়ে বেশির ভাগ সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
এসব ঘটনায় সারা দেশে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর দপ্তরের মাসিক অপরাধমূলক ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসে এই সাত ধরনের অপরাধে ৫ শতাংশ মামলা বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে ছিল তিন হাজার ৭৫৭টি মামলা, সেখানে অক্টোবরে মামলার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে তিন হাজার ৯৫১টি। সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে ১৯৪টি মামলা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হামলা-হুমকির তথ্য পেয়ে নজরদারির পাশাপাশি নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশের প্রতিটি এলাকায় চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ মানুষ। বেপরোয়া চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশ সদর দপ্তর চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, চাঁদাবাজদের ভয়ে কেউ মামলা না করলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চাঁদার টাকা, রশিদ ও অন্যান্য আলামতসহ ধরা পড়লে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করা হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক বৈঠকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় জানিয়ে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম ভার্চুয়ালি বৈঠকে দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার, মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ সব রেঞ্জের ডিআইজিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে নির্দেশ দেন।
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে তৎপর রয়েছে পুলিশ। নির্বাচন ঘিরে সার্বিক পরিস্থিতি নির্বিঘ্ন ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত শনিবার রাজধানীর রাজারবাগের বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে ডিএমপির আইন-শৃঙ্খলাসংক্রান্ত এক বিশেষ মতবিনিময়সভায় এ নির্দেশ দেন তিনি।
পুলিশের ওপরও হামলার ঘটনা বাড়ছে। নরসিংদী সদর উপজেলায় চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতে যাওয়া একজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তার ওপর বেপরোয়া হামলার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, চলতি বছর গত ১০ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) পুলিশের ওপর হামলা, হেনস্তার ঘটনায় ৫৩১টি মামলা হয়েছে। সর্বশেষ অক্টোবরে ৬৯টি মামলা হয়। সেপ্টেম্বরে হয় ৪৩টি মামলা। এক মাসে ২৬টি মামলা বেড়েছে। অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, অপরাধ যেভাবে বাড়ছে, তা নিয়ন্ত্রণে তেমন সফলতা নেই। তবে শুধু পুলিশি অভিযান নয়, সামাজিক সচেতনতা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা গেলে অপরাধের হার কমানো সম্ভব।
দৈনিক পুনরুত্থান /
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
আপনার মতামত লিখুন: