সহকর্মীদের সঙ্গে মিলিয়ে আমার অশ্লীল ভিডিও বানানো হয়েছে : জুমা

ডাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল থেকে লড়ে বিজয়ী হয়েছেন ফাতিমা তাসনিম জুমা। প্রচারণার সময় রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তিনি শুধু সাইবার হয়রানির শিকারই হননি, পেয়েছেন গণধর্ষণের হুমকি। চরিত্রহননের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে তার এআই-জেনারেটেড ছবিও।


ডিসমিসল্যাবের বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুমাকে নিয়ে করা ১০০টি পোস্টের মধ্যে ১৫টি পোস্টেই বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কমেন্ট।
তবে জুমাসংশ্লিষ্ট এসব পোস্টের সব কমেন্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেখানে বিদ্বেষ বা যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ কমেন্ট ছিল অন্য প্রার্থীদের তুলনায় সবচেয়ে কম, ৪ শতাংশ।
এই আক্রমণগুলো শুধু তার রাজনৈতিক বক্তব্য বা দর্শনকে কেন্দ্র করে ছিল না, সরাসরি তার নারী পরিচয়কেও লক্ষ্য বানিয়ে করা হয়েছে। তাকে নিয়ে লিঙ্গ ও যৌন পরিচয়ভিত্তিক অপমান ছিল সবচেয়ে বেশি- ৬৬ শতাংশ। ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের একটি পোস্টের মন্তব্যে তাঁকে ‘পতিতালয়ের নর্তকী সাদিক কায়েম ফরহাদের রাতের ডিনার’ বলে আক্রমণ করা হয়।
এ ছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের নিচে ‘শিবিরের রাতের খাবার’, ‘শিবিরের দাসী’, ‘জাশির যৌন দাসী’ এবং ‘মিয়া খলিফার (পর্নোগ্রাফিক তারকা) শিবির ভার্সন’ ইত্যাদি অবমাননাকর মন্তব্য করা হয়েছে।
অনলাইন হয়রানি জুমার ব্যক্তিগত জীবনেও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডিসমিসল্যাবকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমাকে ভার্চুয়ালি কেউ যদি গণধর্ষণের হুমকি দেয় কিংবা আমার ফ্যামিলিকে হুমকি দেয়, সেটা তো অবশ্যই আমার ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব ফেলে। আমি অনিরাপদ বোধ করি।


’ এই হুমকির ভয়াবহতা এতটাই যে ডাকসু নির্বাচনের আগে তার বাবা-মা গ্রাম থেকে ঢাকায় চলে আসতেও বাধ্য হয়েছিলেন বলে জানান জুমা।
আক্রমণের মাত্রা নতুন রূপ নেয় যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তার সম্পাদিত ছবি ছড়ানো হয়। ডিসমিসল্যাবের বিশ্লেষণ করা কমেন্টগুলোতেও দেখা গেছে এমন কিছু সম্পাদিত ছবি। জুমা বলেন, ‘আমার ডিপফেক বানানো হয়েছে। আমার সহকর্মীদের সঙ্গে মিলিয়েও আমার অশ্লীল ভিডিও বানানো হয়েছে।
যারা এআই সম্পর্কে জানে না, তাদের কিন্তু আমার বোঝানোর ক্ষমতা নাই।’
জুমা মনে করেন, এই আক্রমণ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একটি ‘সম্মিলিত আক্রমণ’। তার ভাষায়, ‘সবার রাজনৈতিক প্যানেল আলাদা আলাদা, কিন্তু তারা যখন আমাকে আক্রমণ করছে, তখন তারা একেবারে একসাথে ঐক্যবদ্ধ। কে কোনটা নিয়ে বলবে, এটা ঠিকঠাক করেই করছে।’
তবে এই হয়রানির বিরুদ্ধে তিনি কোনো প্রশাসনিক বা আইনি সুরক্ষা পাননি বলেও জানান। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখতিয়ারের বাইরে বলে দায় এড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেন জুমা। এ ছাড়া থানায় করা সাধারণ ডায়েরির (জিডি) কোনো অগ্রগতি জানানো হয়নি তাকে। ফেসবুক বা মেটার কাছে রিপোর্ট করেও বিকৃত ছবিগুলো সরানো সম্ভব হয়নি বলে জানান এই নারী প্রার্থী।


জুমা অভিযোগ করেন, সব রাজনৈতিক প্যানেলকে একত্রিত হয়ে সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েও সাড়া পাননি। তিনি বলেন, ‘এই গালি খাওয়াটা আসলে অনেকের রাজনীতি (রাজনৈতিক অবস্থান) দাঁড় করিয়ে দেয়। আমাদের জন্য এটা হচ্ছে ট্রমাটাইজিং ব্যাপার। কিন্তু বাকিরা আগ্রহী না, কারণ এটা না করলে তাদের ওই রাজনৈতিক ফায়দাটা আসে না।’
দৈনিক পুনরুত্থান /
- বিষয়:
- অশ্লীল ভিডিও
- জুমা
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আপনার মতামত লিখুন: