• ঢাকা
  • সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

Advertise your products here

  1. জাতীয়

সিনিয়র সচিব : শেখ হাসিনার দেখানো পথে অন্তর্বর্তী সরকার


দৈনিক পুনরুত্থান ; প্রকাশিত: সোমবার, ১২ মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০২:১৭ পিএম
সিনিয়র সচিব : শেখ হাসিনার দেখানো পথে অন্তর্বর্তী সরকার

পছন্দের আমলাদের খুশি করতে ২০১২ সালে সিনিয়র সচিব পদ সৃষ্টির পর পদোন্নতি দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ পদ নিয়ে নানা সমালোচনা থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও এ পদে পদোন্নতি থেমে নেই। বরং অবসরের কয়েক দিন আগেও মিলেছে পদোন্নতি।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেখানো পথেই হাঁটছে অন্তর্বর্তী সরকার। জানা গেছে, সিনিয়র সচিব পদ সৃষ্টি করা হয় ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এ পদ সৃষ্টি করা হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে অনুগত আমলাদের এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয় বলে সমালোচনা রয়েছে।

জনপ্রশাসনের মৌলিক কাঠামোয় প্রকৃতপক্ষে সিনিয়র সচিবের কোনো পদ নেই। সিনিয়র সচিব এবং সচিবের কাজ একই। তবে বেতন এবং পেনশনসহ নানা ক্ষেত্রে সিনিয়র সচিব পদের আর্থিক সুবিধা বেশি। এজন্যই মূলত পছন্দের আমলাদের খুশি করতে এ পদের সৃষ্টি করা হয়। এদিকে, সিনিয়র সচিব পদে পদোন্নতি এখনো থেমে নেই। এমনকি অবসরে যাওয়ার কয়েক দিন আগেও এ পদে পদোন্নতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব হামিদুর রহমান খানকে অবসরের মাত্র ৫ দিন আগে সিনিয়র সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। গত ২৫ মার্চ এ পদোন্নতি দেওয়া হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি কর্মচারী বাতায়নের (জিইএমএস) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, এই সরকারের আমলে বর্তমানে সিনিয়র সচিব পদে ১৩ জন কর্মরত রয়েছেন। তারা হলেন— জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনি, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) এম এ আকমল হোসেন আজাদ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব এহছানুল হক, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্লাহ ভূইয়া, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোকাব্বির হোসেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ।

অন্যদিকে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে রয়েছেন ৩ জন সিনিয়র সচিব। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা সিনিয়র সচিবের পদমর্যাদায় কর্মরত রয়েছেন।

সিনিয়র সচিব পদ বাদ দিতে ইতোমধ্যে সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেন কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী। প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়।

বর্তমানে সচিব ও সমপদমর্যাদার কর্মকর্তা আছেন ৮০ জন। এখন তা ৬০ জন করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এর মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সংখ্যা এখনকার মতো একজনই রাখতে বলা হয়েছে। তবে মুখ্য সচিবের পদ ১৭টি করতে বলা হয়েছে। একাধিক বিভাগ থাকা মন্ত্রণালয়ে মুখ্য সচিব থাকবেন।

বর্তমানে মুখ্য সচিবের একটি পদ রয়েছে। এ বিষয়ে কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়গুলো পুনর্বিন্যস্ত করা হলে একাধিক বিভাগ সৃষ্টি হবে। যেসব মন্ত্রণালয়ে একাধিক বিভাগ থাকবে, সেগুলোতে সচিবের পাশাপাশি একজন মুখ্য সচিব নিয়োগ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে বর্তমান সিনিয়র সচিব পদ বাদ দিতে বলেছে কমিশন।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, সচিব এবং সিনিয়র সচিবের কাজ একই। এ পদে পদোন্নতির ফলে ব্যক্তি লাভবান হলেও রাষ্ট্রের কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং জনগণের করের টাকা নষ্ট হচ্ছে। কারণ এ পদের জন্য বেতন ও পেনশনসহ নানা খাতে বাড়তি টাকা যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমলাদের খুশি করতেই এ পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিকতায় এই সরকারও একই কাজ করছে। অথচ সিনিয়র সচিব পদের কোনো দরকার নেই। এই পদ বিলুপ্ত করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, সিনিয়র সচিব পদ বাদ দিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে তা বাস্তবায়ন করা যায়। এক্ষেত্রে তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী মুখ্য সচিব নিয়োগ করা যেতে পারে।

দৈনিক পুনরুত্থান /

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন