ক্লিন ইমেজের আ.লীগ নেতারা জাপায় যোগ দিলে মনোনয়ন দেওয়া হবে: কো-চেয়ারম্যান

আওয়ামী লীগের ক্লিন ইমেজের নেতারা জাতীয় পার্টিতে যোগ দিলে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে তাদেরকে মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলটির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।


তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সমর্থক কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা-মোকদ্দমা নেই। ক্লিন ইমেজের, মামলা বা সহিংসতার অভিযোগ নেই। তারা জাতীয় পার্টিতে যোগ দিলে আমরা যদি তাদের যোগ্য মনে করি, তাদের মনোনয়ন দেব না কেন, অবশ্যই দেব। আমাদের ক্যান্ডিডেট ক্রাইসিসকে ওভারকাম করার জন্য আমরা অবশ্যই তা করব।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুর মহানগরীর সেন্ট্রাল রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে দলের রংপুর বিভাগের আট জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ৩০০ আসনে আমরা প্রার্থী দেব। এখন জাতীয় পার্টির প্রার্থীর চেয়ে যদি ভালো শক্তিশালী প্রার্থী পাওয়া যায়, তার যদি ক্লিন ইমেজ থাকে এবং তার বিরুদ্ধে কোনো সহিংসতার আলামত না থাকে তাহলে দেব না (মনোনয়ন) কেন, অবশ্যই দেব। ফরিদপুর, গোপালগঞ্জসহ অন্যান্য জেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সমর্থন রয়েছে। সেখানে যদি ক্লিন ইমেজের লোক জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন তাহলে তাদেরকে আমরা মনোনয়ন দেব।
গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিকে বাঁচাতে বিএনপিকে ভূমিকা রাখতে হবে উল্লেখ করে জাপা কো-চেয়ারম্যান বলেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে যারা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি এবং এ ধরনের মব ভায়োলেন্সে নাই তাদেরকে বাঁচানোর জন্য বিএনপির একটা ভূমিকা থাকতে হবে। তা না হলে বিএনপি একা হয়ে যাবে।
বিএনপিকে বিপদে ফেলার জন্য স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিরা চেষ্টা করছে দাবি করে মোস্তাফিজার রহমান বলেন, সামনে যদি নির্বাচনে জাতীয় পার্টি না থাকে তাহলে ইসলামী ঐক্যজোট, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন (চরমোনাই), এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ দলগুলো একসঙ্গে থাকতে চায়, আরেকদিকে থাকতে চায় বিএনপি। এখন তারা যদি বলে পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচনে যাব না, তখন তারা যদি সরে দাঁড়ায় তাহলে বিএনপি একা হবে। তাহলে একক নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না। বিএনপিকে বিপদে ফেলার জন্য স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিরা কিন্তু চেষ্টা করছে।


তিনি আরও বলেন, তারা দেখছে বিএনপি তো এগিয়ে আছে তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাবে। এখন বিএনপিকে আঘাত করতে গেলে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচনে যাবে না জামায়াতে ইসলামী। এরকম একটা খোঁড়া অজুহাত খুঁজে বিএনপিকে বিপদে ফেলার জন্য চেষ্টা। এজন্য সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিএনপিকে জাপার মহাসচিব এমন কথা বলতে পারেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
মোস্তাফিজার রহমান বলেন, এখন যদি সরকার মব সন্ত্রাসকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তাহলে সামনে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর সুষ্ঠু নির্বাচন নির্ভর করে। বর্তমানে মানুষের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, পার্টি অফিসে হামলা, দিনে-দুপুরে মানুষকে পিটিয়ে মারা হচ্ছে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতকড়া পড়িয়ে জেলে পাঠানো হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব কি না সেই প্রশ্ন সবার।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর এই প্রথম বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর সহিংসতা, তাদের কন্ঠস্বর স্তব্ধ করে দেওয়া, হেনস্থা করা, জুতা মারা, জুতার মালা পড়ানো হচ্ছে। এটি দেশের জন্য ভালো লহ্মণ নয়। দেশের স্বাধীনতা-ভুখন্ড যারা নিয়ে এসেছে, তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। এই অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির জন্য স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি অত্যন্ত সোচ্চার। তারা একাত্তরের শক্তিকে বিলীন করতে মাঠে নেমেছে। আমরা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আছি।
মোস্তাফিজার রহমান বলেন, সম্প্রতি সময়ে জাতীয় পার্টিকে ফ্যাসিস্টদের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করে অন্যায়ভাবে অফিস ভাঙচুর, নেতাকর্মীদের হেনস্তা করা কালচারে পরিণত হয়েছে। মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ রংপুর বিভাগের ৩টি জেলায় জাতীয় পার্টির অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
জাপা কো-চেয়ারম্যান বলেন, জাতীয় পার্টি একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। এই দলটির স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে আইনগত কোনো বাধা নেই। একটি পক্ষ অযাচিত ভ্রান্ত ধারণা চাপায় দিয়ে জাপার রাজনীতিকে স্তব্ধ করার পরিকল্পনা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার এবং আমাদের শক্তিমত্তা দিয়ে তাদের প্রতিহত করা হবে। জাতীয় পার্টি নির্বাচনমূখী দল। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী চুড়ান্ত করতে বিভাগের ৮ জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে উত্থাপিত নাম যাচাই-বাছাই করে চুড়ান্ত করতে কাজ করা হচ্ছে।


এ সময় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ইয়াসির, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় নেতা আজমল হোসেন লেবু, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুর মহানগরের সিনিয়র সহসভাপতি লোকমান হোসেন, সহসভাপতি জাহিদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুর জেলা জাতীয় যুব সংহতির সভাপতি হাসানুজ্জামান নাজিমসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক পুনরুত্থান /
- বিষয়:
- আ.লীগ
- কো-চেয়ারম্যান
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আপনার মতামত লিখুন: