শাওন হত্যার ৩ বছর আজ, বিচারের অপেক্ষায় পরিবার

নারায়ণগঞ্জে যুবদল কর্মী শাওন প্রধান (২০) হত্যার তিন বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে আজ। ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিল বের করার সময়ে পুলিশের সঙ্গে হওয়া সংঘর্ষে প্রাণ হারান তিনি। ঘটনার ২ বছর পর ২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর সাবেক এসপি, ডিসিসহ ৫২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করে নিহতের বড় ভাই মিলন প্রধান। তবে এই মামলায় গুলি ছোড়া আলোচিত এসআই কনক এবং সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।


ছেলে হত্যার পর শাওনের মা ফরিদা বেগম এখনো পাগলপ্রায়। বাইরের মানুষের সঙ্গে তেমন কথা বলেন না। শাওনের বিষয়ে প্রশ্ন করলেই নীরব হয়ে যান। শুধু মাঝেমধ্যে বলে ওঠেন, ‘আমার পোলারে যারা মারছে আল্লাহ ওগো বিচার করব।
আমি ওগো বিচার চাই।’
ঘটনার দিন শহরের দুই নম্বর রেলগেট এলাকায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিল বের করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা। এই ঘটনায় সাংবাদিক, পুলিশ ও বিএনপির প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়। সংঘর্ষের মাঝে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন যুবদল কর্মী শাওন।
বিএনপির তরফ থেকে দাবি করা হয়, ‘ডিবি পুলিশের ছোড়া গুলিতেই নিহত হয়েছে শাওন। তবে ঘটনার মোড় ঘুরাতে শাওনকে যুবলীগ কর্মী বলে দাবি করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তৎকালীন পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলও গণমাধ্যমের সামনে তাকে যুবলীগ কর্মী বলে পরিচয় দেন। মূলত শাওন ছিলেন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলীর ভাতিজা।’
তবে সেসময় প্রকাশিত মিছিল ও সংঘর্ষের ছবিতে দেখা যায়, শাওনকে জেলা যুবদলের বর্তমান আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান সাদেকের সঙ্গে মিছিল করতে এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে।


ঘটনার পরপরই দায়ের করা মামলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলায় বাদী দেখানো হয় শাওনের বড়ভাই মিলন প্রধানকে।
কিন্তু এই মামলা তিনি করেননি বলে জানান মিলন প্রধান। তিনি বলেন, ‘সেদিন দুপুর দেড়টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আমাকে পুলিশ ঘিরে রেখেছিল। আমার তখন চিন্তা ছিল যে ভাইয়ের লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। আমাকে সাদা কাগজে সই করতে বলেছে, তাই করে দিয়েছি। শাওন যুবদল করত এটা স্পষ্ট। ওর মৃত্যুর পরে আওয়ামী লীগের লোকজন এসে আমাদের অফার দিয়েছে আমরা যেন তাদের পক্ষ নেই। পুরো পরিবার বিদেশ পাঠিয়ে দেবে, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে দেবে, কেউ বাধা দেবে না। নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দেবে। কিন্তু আমরা ভাইয়ের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করতে পারব না।’
এদিকে ৫ আগস্টের পর পুরনো মামলা বাতিল করে নতুন করে মামলা দায়ের করেন শাওনের বড় ভাই মিলন প্রধান। মামলায় আসামি করা হয় সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান, নজরুল ইসলাম বাবু, গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল, সাবেক ডিসি মঞ্জুরুল হাফিজ, সদর থানার সাবেক ওসি আনিচুর রহমান, ডিবি পুলিশের এসআই মাহফুজুর রহমান কনকসহ ৫২ জনকে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি বলেন, ‘শাওন হত্যা আমাদের নারায়ণগঞ্জে বিএনপির জন্য দুঃখজনক একটি দিন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মত আনন্দের দিনটি বিষাদময় করে দিয়ে গেছে হাসিনা সরকারের পেটোয়া পুলিশ বাহিনী। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। শাওনের পরিবারের পাশে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আছে। তাদের যখন যা লাগে দল থেকে সেই বিষয়ে অবগত থাকা হয়।’
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী বলেন, ‘এই মামলাটি আমরা গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছি। এই পর্যন্ত দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অধিকাংশ আসামী আত্মগোপনে ও কেউ কেউ দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে আমাদের তদন্তকাজ চলমান আছে। তদন্তসাপেক্ষে সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে।’


দৈনিক পুনরুত্থান /
- বিষয়:
- শাওন হত্যা
- বিচার
- পরিবার
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আপনার মতামত লিখুন: