• ঢাকা
  • রবিবার, ১০ আগষ্ট ২০২৫, ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২

Advertise your products here

  1. জাতীয়

‘ওডিবি-এম-১৭০১’ গ্রুপে রাষ্ট্রবিরোধী অপকর্মের পরিকল্পনা


দৈনিক পুনরুত্থান ; প্রকাশিত: শুক্রবার, ০৮ আগষ্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:৫১ পিএম
‘ওডিবি-এম-১৭০১’ গ্রুপে রাষ্ট্রবিরোধী অপকর্মের পরিকল্পনা

সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকে রয়েছে ‘ওডিবি-এম-১৭০১’ বা অপারেশন ঢাকা ব্লকেড নামের একটি গ্রুপ। এ গ্রুপেই রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করেন মেজর সাদিকুল হকের স্ত্রী সুমাইয়া তাহমিদ জাফরিন। এ গ্রুপের অ্যাডমিনদের মধ্যে তিনিও রয়েছেন।

মূলত এ গ্রুপের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ডাটা এন্ট্রি, বিভিন্ন গোপন কোড তৈরির কাজ করতেন সুমাইয়া। এছাড়া আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাদের পাঠানো ডাটা গুগল শিটে এন্ট্রি দেওয়াসহ অনলাইন সিগন্যাল অ্যাপ, হোয়াটসঅ্যাপ ও গুগলের মাধ্যমে সবাইকে একত্রিত করার দায়িত্বেও ছিলেন তিনি।

ভাসমান টোকাই সংগ্রহ ও তাদের মাধ্যমে নানা অপকর্মের পরিকল্পনাও হয় ওই গ্রুপে। রাজধানীর একটি কনভেনশন সেন্টার ছাড়াও বিভিন্ন রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট ও আবাসিক ফ্ল্যাটে একাধিক বৈঠকের মাধ্যমে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন সুমাইয়া ও তার স্বামী। এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত আরও বেশকিছু নাম উঠে এসেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অনুসন্ধানে। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গেরিলা প্রশিক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে মামলায় সুমাইয়াকে ৫ দিনের রিমান্ডের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সেফাতুল্লাহ এ আদেশ দেন।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ৮ জুলাই রাজধানীর একটি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা মিলে ৩০০ থেকে ৪০০ জন অংশ নেন। তারা সেখানে সরকারবিরোধী স্লোগান দেন।

বৈঠকে পরিকল্পনা করা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পাওয়ার পর সারা দেশ থেকে লোকজন এসে ঢাকায় সমবেত হবেন। তারা ঢাকার শাহবাগ মোড় দখল করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করবেন।

এ ঘটনায় ১৩ জুলাই ভাটারা থানার এসআই জ্যোতির্ময় মণ্ডল সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। সুমাইয়াকে গত বুধবার গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সুমাইয়া ইউনিলিভার বাংলাদেশে টেরিটরি ম্যানেজার হিসাবে টঙ্গীর গাজীপুর শাখায় কর্মরত।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুমাইয়া ও তার স্বামী মেজর সাদেকুল হক পূর্বাচলে সি-সেল নামে রিসোর্টে, কাঁটাবনে রেস্টুরেন্টে এবং মিরপুর ডিওএইচএসে একাধিকবার রাষ্ট্রবিরোধী গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। এছাড়া উত্তরায় ১২ নম্বর সেক্টর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের বিপরীতে প্রিয়াংকা সিটির দুই নম্বর গেটসংলগ্ন সুমাইয়ার একটি ফ্ল্যাটে একাধিকবার গোপন বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল—কীভাবে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডকে গতিশীল ও সমর্থকদের উৎসাহিত করা যায় এবং দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করা যায়। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বৈঠকগুলোতে বিস্তর আলোচনা হয়। প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যেও কয়েকবার একত্রিত হয়েছিলেন তারা।

জানতে চাইলে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, সুমাইয়াকে বুধবার মিরপুর ডিওএইচএস এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি। রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের ঘটনায় সুমাইয়ার কী ধরণের ভূমিকা ছিল, তার সঙ্গে আরও কারা ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন অ্যান্ড গোয়েন্দা-দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সুমাইয়ার বিষয়ে বিধিবিধান মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।

বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সেফাতুল্লাহ সুমাইয়ার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিন তাকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. জেহাদ হোসেন। সুমাইয়ার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আদেশ দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজিজুল হক দিদার ও কাইয়ুম হোসেন নয়ন রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। তারা বলেন, বিদেশি সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে সরকারকে উৎখাতের জন্য ভাটারায় একটি কনভেনশন হলে একত্রিত হয় তারা।

সুমাইয়া জাফরিনের আইনজীবী মোর্শেদ আলম শাহীন বলেন, বাদী মামলায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন এ ঘটনার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত। মামলার এজাহারে সুমাইয়ার নাম নেই। ১১ জুলাই মামলা হয়েছে আর তাকে সন্দিগ্ধ আসামি হিসাবে গ্রেফতার করা হয়েছে ৬ আগস্ট। কোনো আসামি ১৬৪, ১৬১ ধারায় জবানবন্দিতে এ নাম বলেননি। এরপর আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন সুমাইয়া।

তিনি বলেন, কেবি কনভেনশন হলে এএসপি পরিচয়ে অন্য কেউ ঢুকেছে। কিন্তু আমার নামে দোষ চাপানো হচ্ছে। সেখানে আগে থেকে সব কিছু অ্যারেঞ্জ করা ছিল। আমি আমার স্বামীর সঙ্গে ওখানে গিয়েছিলাম। ওখানে কী ধরনের কাজ হচ্ছিল সে সম্পর্কে আমার জানা ছিল না। কিছু জানার থাকলে আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। আমাকে রিমান্ডে দিয়েন না স্যার (বিচারক)। আমি কোনো অন্যায় করিনি।

দৈনিক পুনরুত্থান /

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন