দেশে দুঃশাসন-চাঁদাবাজির মহোৎসব চলছে, দাবি আওয়ামী লীগের
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলেও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্বগ্রহণ করে ৮ আগস্ট। আজ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ২ মাস পূর্ণ হয়েছে। দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে দেশের অর্থনীতি সচল ও বিভিন্ন সেক্টরের সংস্কারে মনোযোগ দিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। তবে সরকারের দুই মাস পূর্তিকে ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগ দেখছে ভিন্ন দৃষ্টিতে। ইউনূস সরকারের এই দুই মাসকে দলটির নেতারা দুঃশাসন ও চাঁদাবাজির মহোৎসব আখ্যা দিয়েছেন।
ক্ষমতাচ্যুতরা দাবি করছেন, সরকার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে আওয়ামী লীগ নিধনেই বেশি ব্যস্ত। প্রশাসনে পরিকল্পিতভাবে অসন্তোষ তৈরি, শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করার যুগ যুগ ধরে চলে আসা সংস্কৃতি নষ্ট করা, মাজার ধ্বংস, দিনে-দুপুরে ডাকাতি, চাঁদাবাজি-ছিনতাই, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্মম হত্যাকাণ্ড, অত্যাচার ও নির্যাতন চালানো, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এসবে দিকে নজরই দিচ্ছে না সরকার। শুধু আওয়ামী লীগকেন্দ্রিক সংস্কারে মনোযোগ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের।
৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে চলে যান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। দীর্ঘদিনের ক্ষমতার আসন থেকে ছিটকে পড়ে আওয়ামী লীগ। তারপরই শিক্ষার্থীদের পছন্দে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। তিনি ৮ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছ থেকে শপথ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বগ্রহণ করেন। তার পাশে আরো ২০ উপদেষ্টাকে সঙ্গে নিয়ে গঠন করেন ২১ সদস্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ২ মাস দেশ পরিচালনা করেছে।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেমন চলছে? এমন প্রশ্ন করা হয় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার কাছে। তারা কেউ বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপরে সন্তুষ্ট নয়। গত দুই মাসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। সেই নির্যাতন বন্ধের কোনো উদ্যোগ নেয়নি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সরকার চাইলে দলের নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘরে হামলা, মামলা ও ভাঙচুর কম হতো বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।
আওয়ামী লীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদক গণমাধ্যমকে বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীর ওপর হামলা চলছে। অনেকে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এই হত্যাকাণ্ডের দায় কার? ৫ আগস্ট থেকে আওয়ামী লীগের অসংখ্য কর্মীর বাড়িঘর পুড়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে। কে নেবে এই হত্যাকাণ্ডের দায়ভার?
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাড. জাহাঙ্গীর কবির নানক এক বিবৃতিতে বলেছেন, সারা দেশে এক অকল্পনীয় দুঃশাসন চলছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে চলছে চাঁদাবাজির মহোৎসব। দেশের প্রায় প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর বিএনপি ও তাদের মিত্রদের অত্যাচার ও নির্যাতনের পাশাপাশি এখন নতুন করে যুক্ত হয়েছে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার। ১৫ বছরের কিশোর থেকে ৯০ বছরের বৃদ্ধ, গ্রেপ্তার থেকে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী রেহাই পাচ্ছে না।
তিনি বলেন, ড. ইউনূস অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট শুরু করেছে, সাধারণ মানুষের জীবনের শান্তি ও স্বস্তি কেড়ে নিয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য আকাশ ছোঁয়া। সেদিকে নজর না দিয়ে, আওয়ামী লীগ নিধনে নেমেছে অবৈধ সরকার। এছাড়া, আসন্ন দুর্গাপূজার প্রতিমা ভাঙচুর করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করছে। থানা লুটপাটকারী ও অবৈধ অস্ত্রধারীদের ধরা হচ্ছে না, গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে না। জঙ্গি, সন্ত্রাসী, খুনিদের অবাধে সাধারণ মানুষ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের খুন করতে একরকম সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সোমবার (৭ অক্টোবর) রাতে আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে এক পোস্ট করা হয়। সেখানে লেখা হয়, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বর্তমান অবৈধ সরকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে হয়রানিমূলক মামলা দিচ্ছে। সারা দেশে বিচারহীনভাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গণগ্রেপ্তার চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। আবার যাদের নামে মামলা নেই তাদের গ্রেপ্তার করে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, শেখ হাসিনার সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ এবং দ্রব্যমূল্য জনসাধারণের নাগালের মধ্যে রাখার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছে। তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ থেকে প্রায় পঁচিশ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতে উন্নীত করেছিল। শুধু সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে আজ দেশের মানুষ বিদ্যুতের অভাবে কষ্ট করছে। এই কদিনেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। অথচ, সেদিকে কোনো নজর নেই, ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে অবৈধ ইউনূস সরকার আওয়ামী লীগ নিধনেই বেশি ব্যস্ত। প্রশাসনে কীভাবে পরিকল্পিতভাবে অসন্তোষ তৈরি করা হচ্ছে।
নেতারা আরো জানান, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের একটি অনুষ্ঠানে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেছেন, এই আন্দোলন একদিনে সৃষ্টি হয়নি। এর পেছনে দীর্ঘ পরিকল্পনা ছিল এবং এর মাস্টার মাইন্ড হিসেবেও একজনকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ড. ইউনূস। তিনি বলেছেন, অনেকদিনের পরিকল্পনার ফসল নাকি তার এই সরকার। এ থেকে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে এটা ছাত্রদের কোটা আন্দোলন ছিল না। তাই সব দাবি মেনে নেওয়ার পরও তারা পরিকল্পিতভাবে সারা দেশে অরাজকতা চালিয়েছে।
দৈনিক পুনরুত্থান / নিজস্ব প্রতিবেদক
আপনার মতামত লিখুন: