• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

Advertise your products here

  1. জাতীয়

বরগুনায় ভুল রিপোর্ট তৈরির জন্য আল্লাহ মালিক হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা


দৈনিক পুনরুত্থান ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৪:৫১ পিএম
বরগুনায় ভুল রিপোর্ট তৈরির জন্য আল্লাহ মালিক হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা

বরগুনায় ভুল রিপোর্ট তৈরি করে রোগীকে মৃত্যু ঝুঁকিতে ফেলায় জামাত নেতার আল্লাহ মালিক হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা করেছে রোগীর পিতা। ২৬ নভেম্বর ২০২৫ বরগুনার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন ভুক্তভোগী শিশু রায়ান বিন ত্বহা এর পিতা মোঃ রায়হান। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডিবি বরগুনাকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

মামলা সূত্রে জানা যায় গত ০৫ অক্টোবর ২০২৫ বাদীর শিশু পূত্র রায়ান বিন ত্বহা জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হইলে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান কর্তব্যরত চিকিৎসক ত্বহা কে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি দেয়। অতঃপর কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ সোনিয়া ত্বহাকে CBC, S.Bilirubin, SGPT (ALT), Prothrombin Time (PT), Urine RE/ME, Triple Antigen, HBs Ag টেস্ট করাতে দেন এবং আল্লাহ মালিক হসপিটাল লিঃ, বরগুনা টেস্ট গুলো করাতে বলেন। ৬ অক্টোবর ২০২৫ সোমবার বেলা অনুমান ১২.০০ ঘটিকায় আল্লাহ মালিক হসপিটাল লিঃ এর মধ্যে গিয়া কাউন্টারে টাকা জমা করে টেস্ট গুলো করাতে দেয়।

মেডিকেল টেকনোলজি ত্বহার ব্লাড সংগ্রহ করার জন্য শরীরের বিভিন্ন স্থানে ৪/৫ বার ছিদ্র করেন। বিষয়টি নিয়ে ১-৩ নং আসামীদের সাথে বাদীর বাক বিতন্ডার সৃষ্টি হয়। ত্বহার রক্ত ও প্রস্রাব সংগ্রহের ১ ঘন্টা পরে রিপোর্ট সংগ্রহ করিয়া বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার সোনিয়াকে দেখালে তিনি বলেন ত্বহার Prothrombin Time (PT) রিপোর্ট যথেষ্ট খারাপ এসেছে। যেখানে সুস্থ মানুষের রিপোর্ট হওয়া উচিত ১২ সেকেন্ড কিন্তু আপনার পূত্রের এসেছে ৪৯ সেকেন্ড। আপনার পূত্রের যে কোন সময় ব্লেডিং শুরু হতে পারে এবং মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে” এবং একটি টোকা কাগজে কিছু ইনজেকশন লিখে দিয়া সেগুলো আনতে বললে বাদী আনিয়া দেয়।

ডাক্তার উক্ত ইনজেকশন রোগীর শরীরে পুশ করার কিছুক্ষনের মধ্যে রোগী মারাত্মক ভাবে অসুস্থ হইয়া পরে। পরবর্তীতে ডাক্তারের পরামর্শে বাদী দ্রুত তার ছেলেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এ্যাম্বুলেন্স যোগে বাংলাদেশ শিশু হসপিটাল ও ইনষ্টিটিউট, শ্যামলী, ঢাকা নিয়ে যান। যাওয়ার পথে এ্যাম্বুলেন্স জার্নিতে ত্বহা বমি করতে করতে আরো বেশি অসুস্থ হইয়া পরে। সেখানে কর্তব্যরত সিনিয়র শিশু ডাক্তার বলেন বরগুনা আল্লাহ মালিক হসপিটাল লিঃ রোগীর টেস্টের সম্পূর্ন ভূল রিপোর্ট দিয়াছেন। কারন Prothrombin Time (PT) রিপোর্ট ৪৯ সেকেন্ড হলে শিশুকে এই পর্যন্ত নিয়ে আসতে পারতেন না। অতঃপর বিগত ইং ০৭/১০/২০২৫ তারিখ বাংলাদেশ শিশু হসপিটাল ও ইনষ্টিটিউট, ঢাকা এর কর্তব্যরত ডাক্তার আমার শিশু পূত্র রায়ান বিন ত্বহাকে তাদের হসপিটালে ভর্তি দেয় এবং “Prothrombin Time (PT) সহ মোট ১২ টি টেস্ট করাতে দেয়। অতঃপর বিগত ইং ০৭/১০/২০২৫ তারিখ বেলা ১১.৫৮ ঘটিকার সময় বাংলাদেশ শিশু হসপিটালের নার্স ত্বহার রক্ত সংগ্রহ করিয়া টেস্ট করাতে দেন। অতঃপর ০৮/১০/২০২৫ তারিখ Prothrombin Time (PT) টেস্টের রিপোর্ট আসে ১১.৫০ সেকেন্ড এবং ডাক্তার রিপোর্ট দেখে বলেন যে রোগির জন্ডিস ছাড়া আর কোন সমস্যা নেই এবং তার উপর কিছু ভূল ঔষধ প্রয়োগ করার কারনে বেশি অসুস্থ হইয়া পরিয়াছে। মামলার বাদী বলেন, আমার সন্তানকে বাংলাদেশ শিশু হসপিটালে ভর্তি রেখে সুস্থ করে বিগত ইং ১২ অক্টোবর২০২৫ তারিখ ছাড়পত্র পেয়ে বরগুনা ফেরত আসি।

আসামীগন আমার সাথে তর্ক বিতর্কের জের ধরিয়া আমার শিশু পূত্র রায়ান বিন ত্বহাকে হত্যার উদ্দেশ্যে প্রতারনার আশ্রয় নিয়া অবহেলামূলক ভাবে Prothrombin Time (PT) টেস্টের ভূল রিপোর্ট দিয়া আমার শিশু পূত্রের শারিরীক মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করিয়াছে। তাহাতে আমি ও আমার পরিবার যথেষ্ট মানুষিক হয়রানির স্বীকার হইয়াছি এবং আমার অর্থনৈতিক ভাবে ব্যাপক ক্ষতি হইয়াছে। আমি বরগুনা সিভিল সার্জন অফিসে দরখাস্ত দিয়েছি।

তারা কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় আমি ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য মামলা করেছি। মামলার আসামিরা হলেন,আল্লাহ মালিক হসপিটাল লি.বরগুনার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামাত নেতা মাওলানা মোঃ আবু হাসান, সায়েন্টিফিক অফিসার,আবুল হোসাইন ও মেডিকেল টেকনোলোজিষ্ট (ল্যাব) মোঃ নাইম খান। মামলার এক নং আসামি আল্লাহ মালিক হসপিটালে ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামাত নেতা মাওলানা মোঃ আবুল হাসান বলেন, রোগী হাসপাতালে ভর্তি ছিল সেখান থেকে আমাদের এখানে পাঠাইছে। অনেকগুলো টেস্ট ছিল তার মধ্যে Prothrombin Time (PT) এ ৪৯ সেকেন্ড আসছে। দ্বিতীয়বার করার পরেও ৪৯ সেকেন্ড আসছে। তার উপর নির্ভর করেই ডাক্তাররা রোগির চিকিৎসা করেছে। পয়েন্ট বেশি তাই সমস্যা হতে পারে এজন্য ঢাকা পাঠাইছে। যে চিকিৎসা করেছে তাতে হয়তো কাজ হয়েছে। পরের দিন ঢাকায় টেস্ট করার পরে পয়েন্ট কম হয়েছে। তাছাড়া ঢাকায় এক হাসপাতালে টেস্টগুলো করিয়েছে সেখানেও তো ভুল হতে পারে।

অন্য আরেকটি হাসপাতালে টেস্ট করালে বুঝতে পারত ঠিক না ভুল। ভুল কি আমাদেরটাই হয়েছে? ঢাকার রিপোর্টও তো ভুল হতে পারে। বরগুনা জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তারা তাদের তদন্ত সম্পন্ন করেছেন। যদি এই রিপোর্টে আল্লাহ মালিক হাসপাতাল অথবা ঢাকাতে যেখান থেকে টেস্ট করেছে তাদের কারো কোন ভুল পরিলক্ষিত হয় তাহলে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ভুল রিপোর্টের কারণে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয় এরকম কোন প্রতিষ্ঠানকে আমরা কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দেব না।

দৈনিক পুনরুত্থান /

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন