• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

Advertise your products here

  1. জাতীয়

আলতাফ হোসেন চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন-মনোনয়ন বাতিল চায় জেলা বিএনপি


দৈনিক পুনরুত্থান ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৯:২৮ পিএম
আলতাফ হোসেন চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন-মনোনয়ন বাতিল চায় জেলা বিএনপি

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) বিকেল ৪-টার দিকে পটুয়াখালী জেলা বিএনপি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জেলা বিএনপি। আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. মোঃ মজিবুর রহমান টোটন।

সাবেক স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্যমন্ত্রী,বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, পটুয়াখালীর ১ আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী, এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) আলতাফ হোসেন চৌধুরী ২৬ নভেম্বর বদরপুর ইউনিয়নে এক জনসভায় যে বক্তব্য দেন তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।

লিখিত বক্তব্যে এ্যাড. মোঃ মজিবুর রহমান টোটন বলেন, প্রিয় কলম সৈনিক ভাইয়েরা, আস-সালামু আলাইকুম,সম্মানিত সাংবাদিকবৃন্দ, জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের সকল সহযোদ্ধা এবং উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ।

আজ আমরা জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে ২৬ নভেম্বর ২০২৫ তারিখের এক জনসভায় জনাব আলতাফ হোসেন চৌধুরী যে বক্তব্য দিয়েছেন,সে বিষয়ে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।তাঁর কিছু বক্তব্য বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না এবং দায়িত্বশীল রাজনৈতিক আচরণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

মনোনয়ন ঘোষণার আগ থেকেই জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সর্ব স্তরের নেতাকর্মীরা পটুয়াখালী-১ আসনের তিনটি উপজেলায় এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নগুলোতে ধারাবাহিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন এবং চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা দলের ৩১ দফা নিয়ে মিটিং, মিছিল করেছি এবং পটুয়াখালী সদর, দুমকি ও মির্জাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন সহ কমলাপুর ও দুমকি মুরাদিয়া ইউনিয়নের ধানের শীষের পক্ষে বড় জনসভা করেছি।এসব জনসভায় হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন এবং সবাই ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। এই প্রচারণা বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রচার পেয়েছে।

আমরা জেলা বিএনপি সর্বশেষ দুমকির মুরাদিয়া ইউনিয়নের জনসভা শেষে ফেরার পথে আমরা জানতে পারি যে পটুয়াখালী-১ আসনে জনাব আলতাফ হোসেন চৌধুরী মনোনয়ন পেয়েছেন।
সংবাদটি পাওয়া মাত্র আমরা জেলা বিএনপির কার্যালয়ে জরুরী বৈঠক করি এবং সর্বসম্মতিক্রমে ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করি। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আমরা বারবার ধানের শীষের পক্ষে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি।

জনাব আলতাফ হোসেন চৌধুরী মনোনয়ন পাওয়ার পর ৫ নভেম্বর ২০২৫ তিনি জেলা বিএনপির সভাপতির সাথে দেখা করতে তার ব্যক্তিগত অফিসে ২০/৩০ জন সাংবাদিক নিয়ে আসেন, তখন আমাদের সকল জেলা বিএনপি ও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের নিয়ে বিপ্লব ও সংহতি দিবসের প্রস্তুতি সভা চলছিল। তখন তিনি সেখানে কিছু ছবি তোলেন এব দ্রুতই চলে জান। নির্বাচন নিয়ে তিনি নেতাকর্মীদের সাথে কোনো আলোচনা করেন নি। তবুও আমরা তাঁর উপস্থিতিতে একযোগে ধানের শীষের স্লোগান দিয়েছি এবং গণমাধ্যমকে জানিয়েছি যে আমরা ধানের শীষের বিজয়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ।
 
আমরা বিভিন্ন সুত্রে জানতে পারি মনোনয়ন পাওয়ার পর আলতাফ হোসেন চৌধুরী তার নিজ বাসা থেকে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এবং তার নির্বাচনী প্রধান সমন্বয়কারী বানিয়েছেন বর্তমানে পদ বিহীন এবং বিগত আন্দোলন সংগ্রামে অনুপস্থিতকৃত নেতা মাকসুদ আহমেদ বায়জিদ পান্না কে। অথচ জেলা বিএনপির নির্বাচিত সভাপতি সাধারন সম্পাদক সহ কোন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেত্রীবৃন্দদের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা বা অবহিত করেননি। এমনকি তিনি কয়েকটি ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত সভা-সমাবেশে করেছেন যা স্থানীয়ভাবে নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কে পর্যন্ত অবহিত করেন নি। আরও দুঃখজনক হলো তার জনসভায় দলীয় পদ বিহিন ও বিতর্কিত এমন কিছু ব্যক্তিকে সামনে আনা হয়েছে, যারা দীর্ঘদিন দলের আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন না। এনিয়ে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

গত ২৬ নভেম্বর ২০২৫ তারিখের বদরপুর ইউনিয়নের এক জনসভায় তিনি জেলা বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন: "চোরায় না শোনে ধর্মের কাহিনী" এ ধরনের উক্তি জেলা বিএনপির নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রতি কটূক্তি। একজন দলের মনোনীত প্রার্থী জনসম্মুখে এ ধরনের মন্তব্য করতে পারেন কিনা, তা আমরা সংশ্লিষ্ট মহলের বিবেচনার জন্য রেখে দিচ্ছি।

তিনি আরও বলেছেন:
"ওনারা ব্যাংকার কে দিয়া নির্বাচন করাবে।"
"ঠিকাদারকে দিয়া নির্বাচান করাবে।"
"গণ অধিকারের সভাপতি নুরুল হক নুরকে দিয়ে নির্বাচন করাবে।"
"টাকা দিবে।"
"গণ অধিকারের নুরু রাজি হয়নি।"
"রুহুল আমিন হাওলাদারকে ধরেছে নির্বাচন করানোর জন্য।"
"এসব কাজের জন্য ১০০ কোটি টাকার বাজেট করা হয়েছে।"
এসব বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং দায়িত্বশীল রাজনৈতিক বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

তিনি অভিযোগ করেছেন যে আমরা দু'ভাগে বিভক্ত। বাস্তবে জেলা বিএনপি কখনোই বিভক্ত ছিল না এবং নেই। আমরা সবসময় ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, আছি এবং থাকব ইনশাআল্লাহ্।

আরও দুঃখজনক হলো, তিনি কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে বলেছেন:
"জেলা কমিটি বাদ দেন।"
"ওটা ফ্রিজ হয়ে গেছে।"
"হিমাগারে চলে গেছে।"
তিনি আরও বলেছেন যে তিনি কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত নেতৃত্বকে ডাকা হবে কিনা, তা তিনি পরে দেখবেন। একজন প্রার্থীর পক্ষ থেকে নির্বাচিত কমিটিকে এইভাবে অবমূল্যায়ন করা সংগঠনের গঠনতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর প্রতি স্পষ্ট অসম্মান।

তিনি বলেছেন মনোনয়নের আগেই সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র নেতাদের ফোন করেছেন এবং একসাথে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন। বাস্তবে মনোনয়নের আগে এ ধরনের কোনো যোগাযোগ হয়নি।

জেলা বিএনপি সবসময় ঐক্য, শৃঙ্খলা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। ব্যক্তিগত ক্ষোভ, ভুল তথ্য কিংবা দলের নির্বাচিত নেতৃত্বকে অপমান করে কাউকে ছোট করা আমরা সমর্থন করি না। কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত কমিটি কারও ব্যক্তিগত রুচির ওপর নির্ভর করে বাতিল হয়ে যায় না। এটি বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামোর অংশ এবং আমরা সংগঠনের মর্যাদা রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আজকের সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা পরিষ্কার করে জানাতে চাই জেলা বিএনপি সম্পূর্ণ ঐক্যবদ্ধ। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করা এবং ঐক্যবদ্ধভাবেই ধানের শীষের বিজয়ের জন্য কাজ করে যাওয়া। যে কোনো বিভ্রান্তিকর বা সংগঠনকে অবমূল্যায়নকারী বক্তব্য আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। এবং দলের সিদ্ধান্তের প্রতি অটল থাকার অঙ্গীকার করছি।

লিখিত বক্তব্য পাঠ শেষে জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক কমিটির ১-নং সদস্য পটুয়াখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র মাকসুদ আহমেদ পিনু বলেন আমরা আলতাফ হোসেন চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল চাই এবং জেলা বিএনপির সভাপতি স্নেহাংশু সরকার কুট্টি কে পটুয়াখালী ১ আসনের চূড়ান্ত মনোনয়ন চাই। আশাকরি দল চূড়ান্ত মনোনয়ন তাঁকেই দিবেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন,বিএনপি নেতা বশির আহমেদ মৃধা,কামাল হোসেন,মিজানুর রহমান,জিএস বাচ্চু,মনিরুল ইসলাম লিটন,যুবদল নেতা গাজী আশফাকুর রহমান বিপ্লব,স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মশিউর রহমান মিলন,তাহের,ছাত্রদল নেতা জাকারিয়া আহমেদ,আল-আমিন,সানী গাজী,বেল্লাল হোসেন,আমিনুল ইসলাম,মিজান,মারুফ সহ জেলা বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

দৈনিক পুনরুত্থান /

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন