ফ্যাসিস্ট দোসর নাজিম ও ইয়াছের সোনালী ব্যাংক পিএলসি'র মুর্তিমান আতঙ্ক
দেশের অন্যান্য ব্যাংকগুলোতে ফ্যাসিস্ট দোসরদের রাহুর গ্রাস কাটলেও দেশের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী ব্যাংক এখনো ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দোসরদের কব্জায়। আবার অনেকে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী দোসরদের বিএনপি'র লেবাস লাগিয়ে নব্য বিএনপি বানিয়ে তাদের হাতে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
সূত্র বলেছে, সোনালী ব্যাংক পিএলসি প্রিন্সিপাল অফিস চট্টগ্রাম সেন্ট্রাল এর সিনিয়র অফিসার মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ও ইয়াছের আরাফাত একসময় আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন সোনালী ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের নেতৃবৃন্দের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে তাদের সহযোগী হিসেবে আগ্রাবাদ কর্পোরেট শাখাসহ শহরাঞ্চলের শাখা গুলোতে কাজ করে গেছেন।
শাখা গুলোর যে ডেক্স এই কাজ করেছেন টাকা ছাড়া কোন কাজ করেননি। আপাদমস্তক আওয়ামী ফ্যাসিস্ট দোসর মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লেবাসধারী হিসেবে নিজেকে জাহির করে সোনালী ব্যাংক পিএলসিকে আওয়ামী তন্ত্র পরিচালনা করেছেন। সেই আওয়ামী ফ্যাসিস্ট দোসর মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন রাতারাতি ভোল পাল্টিয়ে টাকার বিনিময়ে নিজেকে বিএনপির নেতা জাহির করে ৫ আগস্ট পরবর্তী বাগিয়ে নিয়েছেন এমপ্লয়ী ইউনিয়ন ৬৬৪ এর উপদেষ্টা পদ ও চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ।
সুত্র আরো জানায়, তারা নিজের আস্থাভাজন অপরাপর আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ইতিমধ্যে তিনি তাদের আস্থা ভাজন বঙ্গবন্ধু পরিষদ এর কার্যকরী সদস্য প্রিন্সিপাল অফিস চট্টগ্রাম- সেন্ট্রাল এর এওজি-১ (ক্যাশ) মোহাম্মদ নুরুল ইসলামকে সোনালী ব্যাংক এমপ্লইজ ইউনিয়ন (সিবিএ) এর সভাপতি করেছেন।
এছাড়াও বঙ্গবন্ধু আদর্শের সংগঠন বি ২০২ এর
অর্থ সম্পাদক মোঃ আজাদ হোসেনকে করেছেন সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আব্দুল মালেককে বানিয়েছেন প্রচার সম্পাদক।
একই সংগঠনের সহদপ্তর সম্পাদক নাজির নয়নকে সাংগঠনিক সম্পাদক, দাবি এবং সমস্যা বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ আইয়ুবকে অর্থ সম্পাদকসহ আরো অনেককে এমপ্লয়ী ইউনিয়ন ৬৬৪ এর কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন আপাদমস্তক আওয়ামী ফ্যাসিস্ট দোসর এই মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি সমর্থিত এক কর্মকর্তা জানান, জিয়া পরিষদ সোনালী ব্যাংক কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত জিয়া পরিষদ সোনালী ব্যাংক চট্টগ্রাম জেলা কমিটি থাকা সত্ত্বেও ফ্যাসিস্ট দোসর মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ও ইয়াছের আরাফাত আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসিত করতে পাল্টা জিয়া পরিষদ চট্টগ্রাম নামে আর একটি জিয়া পরিষদ নামে কমিটি গঠন করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। এক্ষেত্রে তাকে পূর্ণ সহযোগিতা করে যাচ্ছেন আওয়ামী ফ্যাসিস্ট এর আর এক দোসর চট্টগ্রাম রেলওয়ে শাখার এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার মোঃ ইয়াছের আরাফাত।
এই ইয়াছের আরাফাত ৫ই আগস্ট এর পর জুলাই হত্যাকাণ্ডে বিএনপিকে নিষিদ্ধ করার জন্য ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, এনসিপিকে সমর্থন ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছে, বিএনপিকে নিষিদ্ধ করার দাবি করা ব্যক্তি এখন গিয়ে পরিষদের পাল্টা কমিটির সভাপতি প্রার্থী।
আরও জানা যায় , সোনালী অফিসার্স কোয়ার্টারের ফ্ল্যাটেরৎ সংখ্যা কর্মকর্তাদের চাহিদার তুলনায় খুবই কম হওয়া সত্ত্বেও সোনালী ব্যাংক ট্রেনিং ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামে থাকাকালীন সময়ে অফিসার্স কোয়াটারের বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট জিএমকে একপ্রকার চাপ দিয়ে ট্রেনিং ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম এর নামে বরাদ্দ নিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের অন্যতম দোসর ডিজিএম মোঃ শাহিন মিয়া এবং অলক কুমার বলকে মাত্র ৩০ টাকার বিনিময়ে এসি রুমের ফ্ল্যাটে বছরের পর বছর থাকার ব্যবস্থা করে দিয়ে ব্যাংকের লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতি করেছেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ফ্যাসিস্ট দোসর ইয়াছের আরাফাত সরকারি চাকরী করেও গড়ে তুলেছেন গাড়ির রমরমা ব্যবস্যা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক কর্মকর্তাদের তার কাছ থেকে গাড়ি কিনতে বাধ্য করেন অন্যথায় তাদের উপর করেন নানা মুখী নির্যাতন এবং ট্রান্সফার। তিনি ঠিকমতো অফিস করেন না। যা সিসি টিভিতে দেখলে বুঝা যাবে তিনি অফিসে কখন আসেন এবং কখন বের হন।
আরো জানা যায় ফ্যাসিস্ট দোসর মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ৫ আগস্ট পরবর্তী অফিস না করে বিভিন্ন শাখায় গিয়ে শাখা ম্যানেজারদের কে হুমকি-ধমকি দিয়ে চাঁদা আদায় করছেন। বিশেষ করে টাকার বিনিময়ে তিনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শাখার ম্যানেজারকে ব্যাংকের কোনোরূপ নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে রিপিটেড পোস্টিং করান এবং মাসোহারা ভিত্তিতে তার কাছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন।
এছাড়াও ফ্যাসিস্ট দোসর মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সৈয়দুল আলম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ জসিম উদ্দিনকে ১ থেকে ২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে চন্দ্রঘোনা এবং কর্ণফুলী শাখায় বদলি করতে সহায়তা করেন। সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলামকে তার ছত্রছায়ায় এখন পর্যন্ত বহাল তবিয়তে রেখেছেন। এখন পর্যন্ত ৩৫ থেকে টি অর্ডারের মাধ্যমে তিনি লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন, এবং আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে রেখছেন যাতে করে তাদের পোস্টিং দূরবর্তী শাখা থেকে কাছে এনে দেওয়ার জন্য।
সপ্তাহে ১-২ বার কিছুক্ষণের জন্য অফিস আসেন । এমনও রেকর্ড আছে ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় গিয়ে এক সপ্তাহ পর এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে তিনি লাঞ্চ ভাতা নিচ্ছেন বিশেষ করে ১৪-১৯ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকায় ছিলেন ফিরে এসো পুরো এক সপ্তাহের স্বাক্ষর একদিনে করে লাঞ্চ ভাতা নিয়েছেন, এরকম হাজারো রেকর্ড আছে যা সিসিটিভি দেখলে বুঝা যাবে, এক্ষেত্রে তাকে পূর্ণ সহযোগিতা করে যাচ্ছেন প্রিন্সিপাল অফিস চট্টগ্রাম সেন্ট্রাল এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার খন্দকার মাজহারুল কবির। বর্তমানে তার এসব কর্মকাণ্ডে সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ একপ্রকার আতঙ্কে অফিস করছেন।
গত ২০ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে চট্টগ্রামের বহুল প্রচলিত দৈনিক সাঙ্গু পত্রিকায় বন্দর থানা বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি শীর্ষক এক প্রতিবেদনে পরিবহন চাঁদাবাজ হিসেবে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের নাম উঠে আসে। এছাড়াও জাতীয় দৈনিক নব চেতনার বন্দর থানা বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত পাতিনেতারা শীর্ষক এক প্রতিবেদনে পরিবহন চাঁদাবাজ হিসেবে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের নাম ফলাও করে ছাপানো হয়।
অভিযোগ আছে, সোনালী ব্যাংক আগ্রাবাদ ভবনে রিনোভেশন কাজে নিয়োগ প্রাপ্ত ঠিকাদারকে চাঁদার জন্য চাপ দেওয়াসহ তার নামে গালিগালাজের অভিযোগ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারা সম্প্রতি নাজিম উদ্দিনের চাঁদাবাজির বিষয়টি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নজরে আনলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল সোনালী ব্যাংকে এসে তাকে খুঁজতে থাকেন । কথিত আছে এসময় তিনি ডিজিএম মাজহারুল কবিরের টয়লেটে আত্মগোপন করেন এবং সুযোগ বুঝে শটকে পড়েন। সেনাবাহিনীর হাত থেকে তাকে রক্ষা করেন জিএম অফিস চট্টগ্রাম নর্থ এর জিএম মোঃ মুসা খান। মুসা খানের সহযোগিত এ যাত্রায় তিনি বেঁচে যান।
প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, ২০০৩ সালে বিএনপি ক্ষমতা থাকাকালীন সময়ে সোনালী বাংক লালদিঘী কর্পোরেট শাখায় চাকরি করা অবস্থায় লালদীঘি কর্পোরেট শাখার গ্রাহক প্রতিষ্ঠান ফ্যাশন প্রোডাক্ট এর ৩৫ লক্ষ টাকা দেওয়ানহাট মোড়ে ছিনতাই হয়। গ্রাহকদের টাকা ছিনতাইয়ে ছিনতাইকারীদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন এই নাজিমুদ্দিন এবং তিন মাস জেল খাটেন।
ছিনতাইকারীর সহযোগী না হলে কখনোই তাকে ৩ মাস জেল খাটতে হতো না।
উল্লেখ্য গত ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখে জিয়া পরিষদ সোনালী ব্যাংক পিএলসি কেন্দ্রীয় কমিটি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়, আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে জিয়া পরিষদ সোনালী ব্যাংক পিএলসি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেন । এখনই যদি খুব দ্রুত দোসরদের ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে অত্র ব্যাংকে ঘটাতে পারে তারা বড় ধরনের অঘটন।
দৈনিক পুনরুত্থান /
- বিষয়:
- ফ্যাসিস্ট দোসর
- সোনালী ব্যাংক
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
আপনার মতামত লিখুন: