• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২

Advertise your products here

  1. জাতীয়

লালমনিরহাটে হাড়কাঁপানো শীতে খড়কুঠো জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা


দৈনিক পুনরুত্থান ; প্রকাশিত: সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৮:৫৬ পিএম
লালমনিরহাটে হাড়কাঁপানো শীতে খড়কুঠো  জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা

টানা কয়েক দিনের ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে লালমনিরহাট জেলার জনজীবন মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।‎ ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে সড়কে যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল করছে। নেহাত প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না মানুষজন।

‎‎শীতের প্রকোপে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু, নারী ও বয়স্করা। গ্রামাঞ্চলের নিম্ন আয়ের ও দুস্থ মানুষ বিশেষ করে দিনমজুর, ছিন্নমূল ও চর এলাকার বাসিন্দাদের পর্যাপ্ত শীতের কাপড় না থাকায় চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। শীতার্তরা খড়কুঠো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে বাধ্য হচ্ছেন।

‎‎জেলায় পার্শ্ববর্তী নদী ও হিমালয় কাছাকাছি হওয়ায় এ অঞ্চলে শীতের প্রকোপ তুলনামূলকভাবে বেশি। আকাশে সূর্যের দেখা না পাওয়ায় ঠান্ডার তীব্রতা আরও বেড়েছে।

‎‎এ অবস্থায় কৃষক ও শ্রমিকরাও বিপাকে পড়েছেন। মাঠে থাকা ভুট্টা, সরিষা, গম, আলু ও আমনের বীজতলায় কাজ করতে পারছেন না। ঘন কুয়াশার কারণে দীর্ঘ সময় ক্ষেতে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। একই সঙ্গে সর্দি, কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পেয়েছে।

‎‎রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র জানান, আজ এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

‎‎কুলাঘাট ইউনিয়নের বাড়ি বনমালী এলাকায় তীব্র শীতে শীতার্ত দুস্থ মানুষের দুর্ভোগ চরমে। ৭৮ বছর বয়সি সুলেখা বেওয়া বলেন, পুরোনো একটি কম্বল আছে। তাতে শীত যায় না। তিনি এখনও কোনো সহায়তা পাননি। আর্থিক অক্ষমতার কারণে, খড়কুঠো জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছেন এ বৃদ্ধা।

‎‎একই এলাকার ৫০ বছর বয়সি মোসলেম উদ্দিন জানান, একটি চাদর ও পাতলা কাঁথাই তার ভরসা। প্রচণ্ড ঠান্ডায় ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। বেশিদিন এই অবস্থায় থাকলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন বলে তিনি আশংকা করছেন।

‎‎এদিকে, জেলার খেটে খাওয়া শ্রমিক ও দিনমজুররা কনকনে ঠান্ডার মধ্যেই জীবিকার তাগিদে ঘরের বাহিরে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে করে,শীতের দাপটে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষদের  স্বাস্থ্যঝুঁকিও বেড়েছে।

‎‎আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের কাঠমিস্ত্রী শ্রমিক আজিবর মিয়া (৫৫) বলেন, পেটের তাগিদে কাজ করি। তাই রাত-দিন কষ্ট সহ্য করেই কাজ করতে হচ্ছে।

‎‎জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের অটো রিকশাচালক আখের আলী বলেন, কাজ না করলে সংসার চলবে না। তাই শীতের মধ্যেই রিকশা চালাই।

‎‎হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের কৃষিশ্রমিক আজিজুল হক বলেন, প্রচণ্ড ঠান্ডায় হাত-পা বরফের মতো হয়ে গেলেও জীবিকার তাগিদে মাঠে কাজ করতে হচ্ছে।

‎‎জেলা সদরের কুলাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিস আলী ও বড়বাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নাজমুল হুদা লিমন জানান, তাদের ইউনিয়নে পাঁচ হাজারের বেশি শীতার্ত মানুষ থাকলেও সরকারি বরাদ্দের কম্বল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। ফলে শীতবস্ত্রের সুষ্ঠু বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনায় চরম সংকট দেখা দিয়েছে।

‎‎তারা বলেন, বিগত বছরগুলোতে বেসরকারিভাবে কিছু সহায়তা পাওয়া গেলেও চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সহায়তা মেলেনি। শীতার্ত মানুষের দুর্ভোগ কমাতে জরুরি ভিত্তিতে সরকারি কম্বল বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান তারা।

‎‎জেলার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. সামিরা হোসেন চৌধুরী জানান, তীব্র শীতে শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে এবং শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন বহু শিশু হাসপাতালে আসছে। সর্দি-জ্বর, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া বেশি দেখা যাচ্ছে। কিছু শিশুর শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও খিঁচুনিও রয়েছে।

‎‎এ পরিস্থিতিতে কয়েক দিনের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখা এবং শিশুদের গরম পানি ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

‎‎জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, শীত ও ঠান্ডার মধ্যে আপাতত ফসল নিরাপদ রয়েছে এবং কৃষকদের ক্ষতি রোধে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

‎‎লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এইচ এম রকিব হায়দার জানান, জেলায় ইতোমধ্যে কিছু কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। শীতার্ত মানুষের চাহিদা বেশি হওয়ায় অতিরিক্ত ৫০ হাজার কম্বলের জন্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।‎

‎তিনি বলেন, এ খাতে প্রায় ২৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কম্বল কেনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। শীঘ্রই দুর্গম এলাকাগুলোতে কম্বল বিতরণ করা হবে।

দৈনিক পুনরুত্থান /

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন