লোন করিয়ে দেওয়ার নামে দুই কোটি টাকা আত্নসাৎ গ্রেফতার-২

সহজ শর্তে বিদেশী ব্যাংক হতে লোন করিয়ে দেওয়ার নামে ০২ কোটি ৬ লক্ষ টাকা আত্নসাতের ঘটনায় প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতারসহ প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করেছে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর)। গ্রেফতারকৃতদের নাম ১। মোঃ সফিকুল ইসলাম এবং ২। ডঃ সিপার আহমেদ। গত ১৯ জুন ২০২৫ খ্রি. তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।


দিনাজপুর জেলার চিলিবন্দর থানার এম এইচ ব্রীক ফিল্ড এবং অটো রাইচ মিল এর মালিক মোঃ নুর আমিন শাহকে ৫% সুদে বিনা ডকুমেন্টে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক হতে লোন করিয়ে দেওয়ার নামে প্রতারকচক্র মিথ্যে নাটক ও প্রতারনার ফাঁদে ফেলে ২,০৬,০০,০০০/—(দুই কোটি ছয় লক্ষ) টাকা হাতিয়ে নিয়ে সর্বশান্ত করে। এই ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে প্রতারক চক্রের তিন সদস্যের বিরুদ্ধে ডিএমপি বনানী থানার মামলা নং-১৪, তারিখ-১৮/০৬/২০২৫ খ্রিঃ, ধারাঃ-৪০৬/৪২০/৩৮৬/৫০৬/৩৪ পেনাল কোড দায়ের করেন। পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) গত ১৯ জুন ২০২৫ খ্রি. স্ব-উদ্যোগে মামলাটি গ্রহণ করে এবং এসআই (নিরস্ত্র)/মোঃ সিরাজ উদ্দিন মামলাটি তদন্ত করেন।
অতিরিক্ত আইজিপি পিবিআই জনাব মোঃ মোস্তফা কামাল মহোদয়ের সঠিক তত্ত্বাবধায়নে ও জনাব মোঃ এনায়েত হোসেন মান্নান পিপিএম-সেবা, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) মহোদয়ের দিক নির্দেশনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নেতেৃত্বে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) এর টিম তথ্য-প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৯ জুন ২০২৫ খ্রি. প্রতারনার ঘটনায় জড়িত এজাহারনামীয় ১। মোঃ সফিকুল ইসলামকে ঢাকার পল্লবী থানা এলাকায় তার নিজ ভাড়া বাসা হতে এবং এজাহারনামীয় ২। আসামী ডঃ সিপার আহমেদকে বনানী থানা এলাকায় নিজ ফ্যাট থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের হেফাজত হতে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ০৪টি মোবাইল, ০১ টি গাড়ি (কালো রং এর Toyota Kluger ব্রান্ডের প্রাইভেট কার), ০৮ টি সীমকার্ড, ভিকটিমের সাথে কথা বলার ভয়েস রেকর্ড, নন—জুডিসিয়া স্ট্যাম্পে প্রস্তুতকৃত ভুয়া চুক্তিপত্র ০৬ টি এবং অগ্রণী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক এবং বেসিক ব্যাংকের ১৩টি চেক জব্দ করা হয়।
পিবিআই এর তদন্তে এবং গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ভুক্তভোগী মোঃ নুর আমিন শাহ দিনাজপুর জেলার চিলিবন্দর থানার এম এইচ ব্রীক ফিল্ড এবং অটো রাইচ মিল এর মালিক। ব্যাবসার সুবাদে পরিচিত ব্যাবসায়ী খন্দকার শাহ্ আলম এর সাথে পরিচয় হয় এবং ভুক্তভোগী তার ব্যাবসাকে প্রসারিত করতে টাকার সমস্যার বিষয়ে তার সাথে আলোচনা করেন। তিনি (খন্দকার শাহ্ আলম) তার পরিচিত ১। আসামী মোঃ সফিকুল ইসলামকে ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং সহজ শর্তে ৫% সুদে লঙ্কা বাংলা ও ব্রাক ব্যাংকসহ বিদেশী ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকা লোন করে দিবে বলে প্রলোভন দেখায়।
গত সেপ্টম্বর/২০২৪ মাসে ভুক্তভোগী এবং অপর ব্যাবসয়ী খন্দকার শাহ্ আলমসহ ঢাকায় এসে ১। আসামী মোঃ সফিকুল ইসলাসের সাথে বনানী থানাধীন শেরাটন হোটেল লবিতে সাক্ষাৎ করেন। তখন তিনি ভুক্তভোগীকে তার বস ২। আসামী ডঃ সিপার আহমেদ বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। ২। আসামী ডঃ সিপার আহমেদ বেসিক ব্যাংকের ও প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি পরিচালক হতে চাকুরীচ্যুত কর্মকর্তা । আলোচনার এক পর্যায়ে তারা ভুক্তভোগী আশ্বস্ত করেন যে, ২। আসামী ডঃ সিপার আহমেদ যে কোনো ব্যাংক বা বিদেশী ব্যাংক হতে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত লোন করে দিতে পারবেন এবং তাদেরকে ২% কমিশন দিতে হবে এবং নানাবিধ খরচ বহন করতে হবে।
আসামীরা লোন করার জন্য বিভিন্ন খরচা বাবদ অগ্রীম টাকা দাবি করে। এর ধারাবাহিকতায় বনানী থানাধীন মহাখালী আমতলী পর্যটন হোটেলের ক্যান্টিনে বসে আসামীরা ভুক্তভোগীর নিকট থেকে নগদ ১০,০০,০০০/—(দশ লক্ষ) টাকা, পরবর্তীতে ৫/৬ টি ধাপে নগদ ৭৬ লক্ষ টাকা, বিভিন্ন খরচ দেখিয়ে ধাপে ধাপে ব্যাংকের মাধ্যমে ৭/৮ ধাপে ১ কোটি ২ লক্ষ টাকা এবং বিকাশ ও নগদে ২৬ লক্ষ টাকাসহ মোট ২ কোটি ৬ লক্ষ টাকা গ্রহণ করে। ভুক্তভোগীর বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য তাদের নিজ নিজ স্বাক্ষরিত ১ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকার ১৩টি চেক প্রদান করে ও নন—জুড়িসিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিনামা করে। এছাড়াও আসামীরা ভুক্তভোগীর পরিচালিত এতিমখানা জন্য জাইকা হতে ৭ কোটি টাকা অনুদান এনে দিবে মর্মে জামানত স্বরুপ তার নিকট হতে তার স্বাক্ষরিত অগ্রনী ব্যাংকের এবং পূবালী ব্যাংকের ৮টি চেক গ্রহণ করে। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী তাদের প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে মামলা দায়ের করেন।


এ বিষয়ে জনাব মোঃ এনায়েত হোসেন মান্নান পিপিএম—সেবা, অতিরিক্ত উপ—পুলিশ মহাপরিদর্শক পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) বলেন,“ আমরা আসামীদ্বয় কর্তৃক অভিনব কায়দায় ব্যাংক কর্মকর্তার পরিচয়ে ভুক্তভোগীকে বিদেশী ব্যাংক হতে ৫০ কোটি টাকা লোন পাইয়ে দেবার নামে প্রতারণামূলক ভাবে ভুক্তভোগীর নিকট হতে ২ কোটি ৬ লক্ষ টাকা আত্নসাতের সত্যত্যা পেয়েছি। তাদরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। এই ঘটনা সাথে অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
গত ২০ জুন ২০২৫ খ্রি. গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে ১। মোঃ সফিকুল ইসলাম (৪২) ঘটনার সাথে জড়িত মর্মে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ এর ১৬৪ ধারা মোতাবেক দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
দৈনিক পুনরুত্থান /
- বিষয়:
- টাকা আত্নসাৎ
- গ্রেফতার
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আপনার মতামত লিখুন: