‘হত্যা করতে আমার ১ সেকেন্ড লাগে’ বলা সেই শিক্ষা কর্মকর্তা বদলি
অবশেষে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায় কর্মরত বিতর্কিত মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আসলাম খানকে বদলি করা হয়েছে। বুধবার (২৬ নভেম্বর) মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা থেকে ইস্যু করা এক প্রজ্ঞাপনের আদেশে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিজয়নগরে বদলি করা হয়েছে।
জানা গেছে, সন্দ্বীপ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আসলাম খানের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে অশোভনীয় আচরণ, অফিসে মাতলামিসহ আপত্তিকর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের নানা অভিযোগ উঠেছে। তার দু-তিনটি আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হওয়ার পর সন্দ্বীপের শিক্ষক ও সচেতন মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয় অসন্তোষ ও সমালোচনা।
ইতিমধ্যে এই শিক্ষা কর্মকর্তা ও জার্মানে অবস্থিত সন্দ্বীপ প্রবাসী (ইউটিভিভ চ্যানেল ইনসাইডটিভি) সাংবাদিক নজরুল ইসলাম বিপ্লবের একটি চাঞ্চল্যকর ফোনালাপের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিওতে মাদকসেবন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সন্দ্বীপ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার প্রদত্ত বক্তব্য নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
ভিডিওতে সাংবাদিক বিপ্লব জানতে চান, ‘আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। আপনি কি মাদকসেবন করেন?’ জবাবে শিক্ষা কর্মকর্তা আসলাম খানকে বলতে শোনা যায়, ‘মা ছাড়া তো মাদক হয় না, যে ভাত খায় সে মাদক সেবন করে।
জার্মানিতে বার আছে, ওইখান থেকে মদপান করে লোড হয়ে আমারে ফোন দেন, আকণ্ঠ মদপান করে আমাকে কল করেন—তারপর আপনার কথা শুনব, মজার ইনফরমেশন দেব। জার্মানির চ্যান্সেলর আমার ছাত্র। আমি ড্র করি হ্যান্ডসাম এমাউন্ট—টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ির অভাব নেই। কাউকে হত্যা করতে আমার এক সেকেন্ড সময় লাগে, আমি দেড় সেকেন্ড নিই না।
’ টেলিফোনে এ সাক্ষাৎকারটি প্রদানের সময় তিনি একটি বিদ্যালয় পরিদর্শনে ছিলেন বলে জানা গেছে।
তার এ বক্তব্য প্রচারের পর থেকে এ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মানসিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন স্থানীয় শিক্ষক ও অভিভাবকরা। তারা এ শিক্ষা কর্মকর্তাকে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত দাবি করে ওই শিক্ষা কর্মকর্তার দ্রুত বদলি ও প্রশাসনিক তদন্তের দাবি জানান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাসখানেক আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের থানচি উপজেলা থেকে বদলি হয়ে সন্দ্বীপে যোগদানের পর থেকেই শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আসলাম খানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে।
উপজেলার উত্তর সন্দ্বীপ কলেজের প্রভাষক নিঝুম খান তার ফেসবুক আইডিতে লিখেন, ‘তিনি মানসিক অসুস্থ, মদ-গাঁজা পান করেন, শিক্ষকদের সঙ্গে বিশেষ করে মহিলা শিক্ষকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন।
পরিদর্শনে গেলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছ থেকে ভিজিট ফি দাবি করেন।’ তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আসলাম খান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’
সন্দ্বীপে স্থানীয় এক সংবাদকর্মীকে সাক্ষাৎকার প্রদানের সময় তিনি গানের সুরে ফেনসিডিল খাওয়ার কথা স্বীকার করেন। এর একটি ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এর আগে অফিসের বারান্দায় উদোম গায়ে এ শিক্ষা কর্মকর্তার বেসামাল আচরণ এবং মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্থানীয় চায়ের দোকানে বসে গাওয়া গানের আরো দুটি ভিডিও ভাইরাল হয়।
অফিসে উদোম গায়ে বসে থাকা শিক্ষা কর্মকর্তা সম্পর্কে এ.কে. এম নুরছাপা নামের সন্দ্বীপের একজন প্রধান শিক্ষক তার ফেসবুক আইডিতে লিখেন, ‘উদোম গায়ে বসে সন্দ্বীপের মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাবছেন কিভাবে সন্দ্বীপ উপজেলা শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নতির শিকড়ে নিয়ে যাওয়া যায়। ওনাকে শাস্তি স্বরূপ সন্দ্বীপ পাঠানো হয়নি, মনে হয় সন্দ্বীপবাসীকেই শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, তার এসব আচরণ একজন শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কোনোভাবে মানায় না। সন্দ্বীপের সব প্রধান শিক্ষকের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে উক্ত কর্মকর্তার বদলি ও শাস্তি দাবি করে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
দৈনিক পুনরুত্থান /
- বিষয়:
- হত্যা
- শিক্ষা কর্মকর্তা
- বদলি
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
আপনার মতামত লিখুন: