আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উপলক্ষ্যে শ্যামনগরে হস্তশিল্প মেলা ও নারী সমাবেশ

গ্রামীণ নারীর অবদান, টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি”—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গোপালপুর প্রাচীনতম বটতলায় মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উপলক্ষ্যে নারীদের হস্তশিল্প মেলা ও নারী সমাবেশ।বেসরকারি গবেষণা ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান বারসিকের সহযোগিতায় সবুজ সংহতি, গোপালপুর ঋষিপাড়া সংগঠন ও গোপালপুর কৃষি নারী যুব সংগঠন এই আয়োজনে প্রধান ভূমিকা রাখে।মেলায় মোট ১২টি স্টল অংশ নেয়, যেখানে উপকূলীয় অঞ্চলের নারীদের তৈরি বাঁশ-বেতের জিনিসপত্র, পাটের হস্তশিল্প, পরিবেশবান্ধব ব্যাগ, নারিকেলের খোলের তৈরি সাজসজ্জার সামগ্রী, শাঁখা-ঝিনুকের অলংকার, মাটির পাত্র, বিভিন্ন স্থানীয় খাদ্যপণ্য ও নারীদের সেলাই-কাঁথা শিল্প প্রদর্শন করা হয়।


হস্তশিল্প মেলা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রবীন ব্যক্তি কেশব দাস। এর আগে নারী সমাবেশে সবুজ সংহতি সহ সভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলার দেলোয়ারা বেগমের সভাপতিতে এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চিংড়াখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক মাধব চন্দ্র মন্ডল। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কর্নফুলি রানী দাস, বাসন্তী রানী, পুতুল রানী, নিরাঞ্জন দাস, বারসিক কর্মকর্তা প্রতিমা রানী, বিশ্বজিৎ মন্ডল সহ প্রমুখ।আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, “উপকূলীয় অঞ্চলের নারীরা প্রতিদিন জলবায়ু পরিবর্তন, লবণাক্ততা, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যে জীবনযাপন করছেন। তারপরও তারা পরিবার ও সমাজে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবদান রাখছেন। গ্রামীণ নারীদের এই সংগ্রামী জীবনের গল্পই টেকসই উন্নয়নের অনুপ্রেরণা।
বক্তারা আরও বলেন, এ ধরনের মেলা নারীদের উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত করে এবং তাদের তৈরি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখে। নারীর আর্থিক ক্ষমতায়ন মানেই টেকসই পরিবার ও সমাজ গঠন।সমাবেশে অংশ নেওয়া গোপালপুর গ্রামের নারী উদ্যোক্তা পুতুল রানী বলেন,“আমাদের হাতে তৈরি জিনিসের চাহিদা আছে। এই ধরনের মেলায় আমরা পণ্যের দাম বুঝতে পারি, ক্রেতার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয়। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে, আবার নতুন কিছু শেখার সুযোগও হয়।” তিনি আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা বাড়ছে। যার কারণে বর্তমানে বাঁশের চাষ কমে গেছে। যার ফলে বাঁশের দাম দিন দিন বেড়ে গেছে এতে করে আমরা পরিশ্রম করি ঠিকই কিন্তু তার সঠিক মুল্য পাইনা।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে ছিল আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, গ্রামীণ নারীদের অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং প্রদর্শনীর মাধ্যমে পণ্য বিক্রয়। এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন স্থানীয় নারী উদ্যোক্তা, শিক্ষক, যুব প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি ও সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা। স্থানীয় ১৫০ নারী পুরুষের উপস্থিতিতে বর্ণিল ও প্রাণবন্ত এই আয়োজনে গোপালপুর ঐতিহ্যবাহী বটতলা উৎসবে পরিণত হয়।


দৈনিক পুনরুত্থান /
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আপনার মতামত লিখুন: