• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

Advertise your products here

  1. জাতীয়

কক্সবাজার সৈকতে প্লাস্টিক দানব ‘আজ ভাস্কর্য, আগামীর বাস্তবতা’


দৈনিক পুনরুত্থান ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:৫৫ পিএম
কক্সবাজার সৈকতে প্লাস্টিক দানব ‘আজ ভাস্কর্য, আগামীর বাস্তবতা’

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সীগাল পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আছে বিশালদেহী এক ‘প্লাস্টিক দানব’।  দূর থেকে যেন মনে হবে—সমুদ্রের অন্ধকার গহ্বর চিরে বেরিয়ে আসা কোনো পৌরাণিক জীব।  কিন্তু কাছে গেলে দেখা যায়—মানুষের ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বর্জ্য জোড়া লাগিয়ে তৈরি এক বিশাল ভাস্কর্য। এই দানব কোনো কল্পকথা নয়; সমুদ্রে দিন দিন জমতে থাকা ভয়াবহ প্লাস্টিক দূষণের প্রতীক। আজ ভাস্কর্য, আগামীর চরম বাস্তবতা হিসাবে ধরা হচ্ছে। 

সমুদ্ররক্ষা ও জনসচেতনতা তৈরির জন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন যৌথভাবে নির্মাণ করেছে ‘প্লাস্টিক দানব’ ভাস্কর্যটি। গত চার মাস ধরে কক্সবাজার, ইনানী ও টেকনাফ উপকূল থেকে সংগ্রহ করা সামুদ্রিক প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এটি। আগামী তিন মাস ভাস্কর্যটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।  

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, প্লাস্টিক দূষণ আজ আমাদের ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় হুমকি। সৈকতে লাখো মানুষ আসেন—এই ভাস্কর্য তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাবে প্লাস্টিক ফেলার পরিণতি।

তিনি আরও বলেন, পরিবেশ রক্ষায় সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি নাগরিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

৫০০ মেট্রিক টন বর্জ্য রিসাইকেল

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্বেচ্ছাশ্রমে প্লাস্টিক সংগ্রহ ও পুনর্ব্যবহারের কাজ চলছে অনেক দিন ধরেই। আমরা সারাদেশে ৫০০ মেট্রিক টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক রিসাইকেল করেছি। এতে যেমন সরকারি ব্যয় কমছে, তেমনি মানুষও বুঝতে পারছে—বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করা যায়।

তিনি আরও জানান, আগামী ছয় মাস কক্সবাজারে প্লাস্টিক দূষণ রোধে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাবে বিদ্যানন্দ।  

‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্লাস্টিক ভাস্কর্য’ দাবি

ভাস্কর্যটি নির্মাণে যুক্ত শিল্পীরা দাবি করছেন—এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্লাস্টিক ভাস্কর্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ভাস্কর আবীর কর্মকার বলেন, ছয় মেট্রিক টন ওশান প্লাস্টিক দিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। কাঠ, পেরেক, গামসহ কিছু উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে কাঠামো স্থিতিশীল রাখতে।

তিনি বলেন, নোংরা প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কার করে শিল্পে রূপ দেওয়াটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে এই ভাস্কর্য সাধারণ মানুষকে প্লাস্টিক দূষণের বাস্তব ক্ষতি বুঝতে সহায়তা করবে।

বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবক মুহাম্মদ মুবারক বলেন, গত চার মাসে উপকূলের বিভিন্ন অংশ থেকে যে প্লাস্টিক সংগ্রহ করা হয়েছে, তা বাছাই ও পরিশোধন করে ভাস্কর্য তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে।

তিনি জানান, পুরো পর্যটন মৌসুমে ভাস্কর্যটির পাশে থাকবে পথনাটক, সংগীতানুষ্ঠানসহ প্লাস্টিকবিরোধী বিভিন্ন আয়োজন। পর্যটকদের চোখের সামনে বার্তাটা স্পষ্ট করে দিতে চাই—আপনি একটি প্লাস্টিক ফেললে ক্ষতি শুধু সমুদ্রের নয়, আপনার ভবিষ্যতেরও।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভাস্কর্য

উদ্বোধনের পর থেকেই সীগাল পয়েন্টে উৎসুক মানুষের ভিড় বেড়েছে। অনেকে মোবাইলে ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছেন।স্থানীয়রা বলছেন, প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে সচেতনতা তৈরির এমন সৃজনশীল উদ্যোগ কক্সবাজারে এবারই প্রথম।

পরিবেশবিদদের মতে, প্লাস্টিকের ভয়াবহতা প্রচারণা বা লিফলেট নয়—এ ধরনের বাস্তব ও দৃশ্যমান শিল্পই সবচেয়ে দ্রুত মানুষের মানসিকতায় পরিবর্তন আনে। বাংলাদেশের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে পরিবেশ রক্ষায় ‘প্লাস্টিক দানব’ এখন হয়ে উঠেছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

দৈনিক পুনরুত্থান /

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন