• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

Advertise your products here

  1. জাতীয়

পটুয়াখালীর সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি


দৈনিক পুনরুত্থান ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১:১৩ পিএম
পটুয়াখালীর সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি

ঘূর্ণিঝড় শক্তির প্রভাবে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে পটুয়াখালীতে মঙ্গলবার রাত থেকে  বাতাস ও বৃষ্টি হচ্ছে। সাগর উত্তাল রয়েছে। নদ নদীর স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলায় সহস্রাধিক ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।

Advertisement

 

গলাচিপা ও সদর উপজেলায় ৫ জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে কয়েকটি গ্রাম ডুবে গেছে। জোয়ারের পানি আর অব্যাহত বৃষ্টিতে রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজের ৩০টি পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে এনেছে উপজেলা প্রশাসন।

 

সাগর ও নদীতে মাছ ধরা ট্রলার ও জেলে নৌকা নিরাপদে আশ্রয়ে থাকায় কোনো ট্রলার ডুবির খবর পাওয়া যায়নি। জেলায় প্রায় ১৫-২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে কুয়াকাটা সৈকতের শূন্য পয়েন্টসহ আশপাশের এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। বিধ্বস্ত হয়ে ভেসে গেছে নির্মাণাধীন ট্যুরিজম পার্ক থেকে পূর্বদিকের ১ হাজার ৩০০ মিটার দীর্ঘ সড়কের এক তৃতীয়াংশ।

 

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চলের কিছু কাচা ঘরবাড়ি গাছপালার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

 

ঘূর্ণিঝড় শক্তির প্রভাবে সৃষ্ট  নিম্ন চাপের কারণে দুই দিনের অবিরাম বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী, গলাচিপা, দশমিনা, বাউফল, দুমকি, মির্জাগঞ্জ ও সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ২ শতাধিক গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে।  জেলার অনেক এলাকা বেড়িবাঁধের বাহিরে থাকায় জোয়ারে ডুবছে আর ভাটায় জাগছে। পটুয়াখালীর ৮ উপজেলায় ৫০ হাজারের মতো লোক পানিবন্দি রয়েছে। রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের মধ্য চালিতাবুনিয়ায় ভেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

 

বর্তমানেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৮২ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

 

গলাচিপার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদুল হাসান জানান, জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার পানপট্টি ইউনিয়নের বিবির হাওলা, ডাকুয়া ইউনিয়নের তেতুলবাড়িয়া ও কলাগাছিয়া কলেজের সামনের বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এতে কয়েকটি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। আরও অনেক এলাকায় বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও তিনি জানান।

গলাচিপার নিম্নাঞ্চলে ৩০টির মতো গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। হরিদেবপর ফেরির গ্যাংওয়ে তালিয়ে যাওয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গলাচিপা উপজেলার রতনদী তালতলী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড, মামুনতক্তি গ্রামের মোস্তফা মাতুব্বরের ঘরের ওপর চম্বল গাছ পড়ে ঘরটি ভেঙে গেছে।

টানা বৃষ্টির ফলে জেলার বিভিন্ন নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে এবং অনেক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে, বড় বড় ঢেউ তীরে আছড়ে  পড়ায় মেরিন ড্রাইভ সড়কের অনেকাংশ ধসে পড়েছে। নদ-নদীর পানির উচ্চতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া, চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের মধ্য চালিতাবুনিয়া, চিনাবুনিয়া, বিবিরহাওলা, উত্তর চালিতাবুনিয়া এবং চরমোন্তাজ ইউনিয়নের নয়ারচর ও চরআন্ডা গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ সব এলাকায় অসংখ্য পুকুর ও মাছের ঘের তলিয়ে গিয়ে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন স্থানীয় মৎস্যচাষিরা।

আবহাওয়া অধিদপ্তর পটুয়াখালীসহ পায়রা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মোংলা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে। এছাড়া, অভ্যন্তরীণ নৌপথে লঞ্চ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় আরও মাঝ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার  সম্ভাবনা রয়েছে।

নদী ও সাগরে মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকা চলাচল বন্ধ রয়েছে। নদীবন্দর সমূহকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

বাউফলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  জানান, আমি যদিও ট্রেনিংয়ের জন্য ডাকায় রয়েছি। তারপরও খোঁজখবর নিয়েছি। উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে ও বেড়িবাঁধের বাহিরে বসবাস করা কয়েকটি পরিবারের ঘরবাড়ি ও গাছপালা বিধ্বস্ত হয়েছে।  বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনার খবর পাইনি এখনো।

পটুয়াখালী জেলা শহরের প্রায় পুরো এলাকায়ই বৃষ্টি আর জোয়ারের পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে। পৌর শহরের পুরান বাজার, জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় সড়ক, কাঠপট্টি, চকবাজারসহ শহরের অলিগলিতে হাঁটু পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

দৈনিক পুনরুত্থান /

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন