পরীক্ষার আগেই শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের হাতে হাতে প্রশ্নপত্র
টাঙ্গাইলের পাঁচ লক্ষাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে পরীক্ষার ফি। এছাড়া শিক্ষা অফিসের নির্দেশনা না মেনে পরীক্ষার আগেই অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কাছে চলে গেছে প্রশ্নপত্র।
অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষা কর্মকর্তারা আর্থিকভাবে লাভবান হতেই সরকারি নিয়ম বহির্ভূতভাবে টাকা আদায় করছেন।
জেলার কয়েকজন প্রধান শিক্ষক জানান, গত ২৮ অক্টোবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ত্রিমাসিক, অর্ধবার্ষিক এবং বার্ষিক পরীক্ষার ফি ধার্য সম্পর্কে অনলাইনে মতামত দেওয়ার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পরীক্ষার ফি ২০ টাকা, তৃতীয় শ্রেণীর জন্য ৩০ টাকা, চতুর্থ শ্রেণীর জন্য ৪০ টাকা ও পঞ্চম শ্রেণীর জন্য ৫০ টাকা ফি নির্ধারণের মতামত চাওয়া হয়। সেটি লিখিতভাবে অনুমোদন বা প্রজ্ঞাপনের আগেই টাকাগুলো আদায় করা হচ্ছে। এ নিয়ে অভিভাবক প্রতিবাদ জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি।
এ দিকে গত ২৪ নভেম্বর পরীক্ষার সময়সূচিসহ ছয়টি নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাহাব উদ্দিন।
নির্দেশনাবলির মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে— শিক্ষার্থীদের আসন বিন্যাস করে পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে। চারু ও কারুকলার মূলায়নে বাজার থেকে ক্রয় করা কোনো উপকরণ নেওয়া যাবে না। প্রতিদিনের প্রশ্নপত্র সীলগালা করে প্রধান শিক্ষকের কাছে দিতে হবে। প্রধান শিক্ষক প্রশ্নের সর্বোচ্চ গোপনীয়তা নিশ্চিত করবেন। সব পর্যায়ে পরীক্ষা প্রশ্নপত্রের গোপনীয়তা বজায় রাখতে হবে, কোনো অনিয়ম হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দায়ী থাকবেন। উত্তরপত্রের সঠিক মূল্যায়ন করে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে অভিভাবক সমাবেশ করে ফল প্রকাশ করতে হবে। ফল প্রকাশ শেষে সাত দিনের মধ্যে প্রধান শিক্ষক উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করবে।
তবে এ নির্দেশনা না মানার অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম জাকারিয়া হায়দারের বিরুদ্ধে। তিনি নিয়মবহির্ভূতভাবে টাকা আদায় করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
বেশ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হাতে প্রশ্নপত্র পাওয়া গেছে। টাকার বিনিময়ে এগুলো বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রধান শিক্ষক বলেন, আদায়কৃত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পরীক্ষার ফি ২০ টাকা, তৃতীয় শ্রেণীর জন্য ৩০ টাকার মধ্যে উপজেলা শিক্ষা অফিসে ১০ টাকা ও চতুর্থ শ্রেণীর জন্য ৪০ টাকা এবং পঞ্চম শ্রেণীর জন্য ৫০ টাকা ফির মধ্যে ১৫ টাকা শিক্ষা অফিসে জমা দিতে হচ্ছে।
এছাড়া কয়েক দিন আগে নিয়ম বহির্ভূতভাবে মডেল বৃত্তি পরীক্ষার ওএমআর শীটের জন্য ৩০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে।
সদর উপজেলার রিকশা চালক লাল চান বলেন, আমরা গরিব মানুষ বলেই তো সরকারি স্কুলে ছেলেকে পড়তে দিয়েছি। আগে পরীক্ষার ফি না নেওয়া হলেও এ বছর পরীক্ষার ফি নেয়া হচ্ছে। এই পরীক্ষা ফি দিতে না চাইলে আমার ছেলে বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না বলে হুমকি দেন। তাই বাধ্য হয়ে ৫০ টাকা পরীক্ষার ফি দিয়েছি।
সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম জাকারিয়া হায়দার বলেন, পরীক্ষা ফি নেওয়ার জন্য আমরা কোনো লিখিত চিঠি পাইনি। মৌখিকভাবে অনুমতি পেয়েছি। এছাড়া প্রশ্নপত্র সিলগালা করতে ও গোপনীয় রক্ষার জন্য যে খাম প্রয়োজন তার বরাদ্দ আমরা সরকার থেকে না পাওয়ার কারণে গোপনীয়তা রক্ষা করতে পারি না। প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে পড়লে কিছু করার নেই।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, জেলার এক হাজার ৬২৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। টাকা নেওয়ার বিষয়ে লিখিত কোনো অনুমতি হয়নি। প্রশ্নপত্র বিতরণের ক্ষেত্রে খাম সিলগালা করে গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে।
দৈনিক পুনরুত্থান /
- বিষয়:
- পরীক্ষা
- শিক্ষার্থী
- প্রশ্নপত্র
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
আপনার মতামত লিখুন: