‘পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের বছরে ১২০০ কোটি টাকা চাঁদা আদায়’
দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি বজায় রাখতে সেনাবাহিনীর প্রত্যাহারকৃত ক্যাম্পসহ ২৫০টি ক্যাম্প করা ও শান্তিচুক্তি রিভিউ করার দাবি জানিয়েছে এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন। একই সঙ্গে ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, ইয়েন ইয়েন, প্রসীত বিকাশ খীসা, নাথান বম, সন্তু লারমাসহ অন্যান্যদের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমের জন্য আইনের আওতায় আনতে হবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
রবিবার (২ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘অশান্ত পাহাড় সার্বভৌমত্বের হুমকি, জাতীয় নিরাপত্তায় করণীয়’ বিষয়ক শিরোনামের এক সেমিনারে এসব কথা বলা হয়।
পাহাড়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বছরে ১২০০ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে উল্লেখ করে সেমিনারে সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট লেফটেন্যান্ট সাইফুল্লাহ খান সাইফ (অব.) বলেন, পাহাড় কেন অশান্ত? সেখানে কারা সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির টাকায় বিলাসী জীবনযাপন করেন? পাহাড়ে শান্তি বজায়ে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কী—এসব বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।
মূলত ১০টি কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত বলে জানান তিনি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে— সেনাবাহিনীর দুইশোটির বেশি ক্যাম্প প্রত্যাহার, পাহাড়ি সশস্ত্র গ্রুপের বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম, পাহাড়ি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে আধিপত্যের লড়াই, পার্শ্ববর্তী দেশের প্ররোচনা ও মদদ, বিদেশি সশস্ত্র গ্রুপ/রাজনৈতিক দলের সাথে যোগাযোগ, গুজব, সোশ্যাল মিডিয়াতে নানা ধরনের মিথ্যা/ভুল তথ্য প্রচার, বাঙালি অধিকার অবমূল্যায়ন, বাঙালী এবং উপজাতিদের মধ্যে বৈষম্য (ট্যাক্স), প্রবাসী পাহাড়িদের দ্বারা বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন, উপজাতি নেতৃবৃন্দের বিভিন্ন এনজিও/আইএনজিও এবং বিদেশী কূটনৈতিকদের সাথে গোপন যোগাযোগ।
আন্তঃকোন্দল (জেএসএস বনাম ইউপিডিএফ) বিষয়ে লেফটেন্যান্ট সাইফুল্লাহ খান সাইফ (অব.) জানান, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত জেএসএস এব ইউপিডিএফ এর মধ্যে আন্তঃসংঘর্ষ হয় ৯৬টি। এক বছরে এই আন্তঃসংঘর্ষে ৩৭ জন নিহত হয়।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ইউপিডিএফ (প্রসিত) এবং জেএসএসের (সন্তু) এর মধ্যে ২১ হাজার রাউন্ড ফায়ার হয়েছে।
চাঁদাবাজির টাকায় পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের বিলাসী জীবন
পাহাড়ে সন্ত্রাসীরা বছরে ১০০০-১২০০ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে। এর মধ্যে জেএসএস (সন্তু) ৪৫০ কোটি, ইউপিডিএফ (প্রসীত), ৩৫০ কোটি, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ১৫০ কোটি, জেএসএস (সংস্কার) ১৫০ কোটি, এমএনপি ৫০ কোটি ও কেএনএফ ৫০ কোটি।
সরকার কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতিদের ভ্যাট ট্যাক্স মওকুফ হলেও চাঁদা দিতে হচ্ছে সন্ত্রাসীদের।
সেমিনারে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রার উন্নয়নে বড় বাঁধা উপজাতি সন্ত্রাসীরা। ৪১ টি খাত থেকে বছরে হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে তারা। এই চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে নিজ জাতি ভাইকে খুন করছে পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীরা। ছয়টি সশস্ত্র গোষ্ঠীর চাঁদাবাজিতে নিঃস্ব হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ, বছরে অপহরণ ও গুমের শিকার হন ১২০-১৫০ জন মানুষ।
এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, পাহাড়ে শান্তি রাখতে হলে সশস্ত্র গোষ্ঠীকে যেকোন মূল্যে প্রতিহিত করতে হবে।
একইসঙ্গে শান্তিচুক্তি রিভিউ করাসহ পাহাড়ে সেনাবাহিনী ক্যাম্প এবং বিজিবির বিওপি বাড়াতে হবে। সেনাবাহিনীর মনোবল বৃদ্ধিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়েরর যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা; বিশেষ করে ঝুঁকি ভাতা দ্বিগুন করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি আধুনিক মানের চিকিৎসা সেবা সম্বলিত সিএমএইচ স্থাপন করা, পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক একটি দূরদর্শী পরিকল্পনাসহ বাঙালিদের পাহাড়ে সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে। উপজাতিরা পাহাড়ে জায়গা কিনতে পারলে বাঙালিরা কেন পাহাড়ে জায়গা কিনতে পারবে না? এছাড়া বিদেশের মাটিতে যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
যেখানে পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প বাড়ানো দরকার সেখানে কীভাবে ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয় প্রশ্ন রেখে সেমিনারে বক্তারা বলেন, এই সেনাবাহিনীর জন্য আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব টিকে আছে। সেনাবাহিনীকে হেয়-প্রতিপন্ন করে কথা বলা থেকে সবাই বিরত থাকি। যেকোন জরুরি প্রয়োজনের সেনাবাহিনীর প্রয়োজন হচ্ছে। পৃথিবীর একমাত্র দেশ বাংলাদেশ, যেখানে সেনাবাহিনীকে সকল কাজে লাগানো হয়, আবার হেয় প্রতিপন্নও করা হয়। তাই রাষ্ট্রের সবাইকে বলবো, আপনারা সেনাবাহিনীর মনোবল বৃদ্ধি করুন, এমন কিছু করবেন না যাতে সেনাবাহিনীকে হেয়-প্রতিপন্ন করা হয়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) রোকন উদ্দিন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আমাদের একটা বিষপোড়া। পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই এটি তৈরি করেছে ভারত। তারা কখনোই আমাদের বন্ধু ছিল না। প্রতিটি সরকারকে চাপে রাখার জন্য তারা পাহাড়ে এসব সমস্যার সৃষ্টি করেছে।
গণঅধিকার পরিষদের দলীয় মুখপাত্র ও সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, সরকারের কাছে জোর দাবি, আমরা সেখানে ক্যাম্প নয়, স্থায়ীভাবে ক্যাটন্টমেন্ট চাই। ভারতেও প্রত্যেকটা পার্বত্য অঞ্চলে সীমান্ত সুরক্ষা রাখতে সেনা ক্যান্টনমেন্ট আছে। তাহলে আমরা সীমান্ত রক্ষায় ক্যান্টনমেন্ট কেন করতে পারব না। এই বিষয়ে সবাইকে আওয়াজ তুলতে হবে, ক্যান্টনমেন্ট স্থাপন ছাড়া অন্যথায় পাহাড়ে শান্তি আসবে না।
সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন, সিএইচটি সম্প্রীতি জোটের আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার থোয়াই চিং মং শাক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আতিকুল হক, পাবর্ত চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের মহাসচিব মো. আলমগীর কবির ও জনতার দলের মুখপাত্র দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
দৈনিক পুনরুত্থান /
- বিষয়:
- পাহাড়
- সন্ত্রাসী
- চাঁদা আদায়
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
আপনার মতামত লিখুন: