বর্ষার প্রতিক কদম ফুলে রাঙিয়ে তুলেছে প্রকৃতি

ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। আর ফুলকে বলা হয় ঋতুর দূত বা প্রকৃতির হাসি। ঋতুচক্রের ভিন্নতায় বিভিন্ন ফুলে বাহারী রঙ্গে রঙ্গিন হয়ে ওঠে প্রকৃতি। প্রকৃতির এই সাজ ও হাসিকে যুগ যুগ ধরে অব্যাহত রাখতে ঋতুতে ঋতুতে দেখা যায় চেনা অচেনা অসংখ্য ফুলের সমাহার। জানা অজানা অজস্র এ সব ফুল অপরুপ সাজে সাজিয়ে তুলে প্রকৃতিকে।


তেমনই একটি ঐতিহ্যবাহী বনফুল হচ্ছে কদম। আর এই কদম ফুলকে বলা হয় বর্ষা ঋতুর প্রতিক। কদম- প্রকৃতির অনিদ্যসুন্দর একটি ফুলের নাম। আষাঢ়-শ্রাবণের অবিরল ধারায় পত্রপল্লবে যখন মুখরিত থাকে চারদিক। কদম এ সময়ের ফুল, যা আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টিতে ফোটে। কদম ফুল নিয়ে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত অনবদ্য কবিতা- ‘ধন্য কদম কেশব ঢেকেছে আজ বনতলে ধূলি, মৌমাছিরা কেয়া বনের পথ গিয়েছে ভুলি’।
বর্ষার প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তুলেছে আষাড়ের ফুল কদম। বিভিন্ন এলাকার রাস্তার ধারে, বাড়ী বা অফিসের আঙ্গিনায় দেখা যায় বাহারী সাজে বর্ষা ঋতুর প্রতিক কদম ফুলকে। প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যের প্রতিক চিরো চেনা এই কদম ফুল গাছকে নিয়ে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নন্দিত লেখা- ‘রিম ঝিম ঝিম রিম ঝিম ঝিম নামিল দেয়া, শুনি শিহরে কদম বিদরে কেয়া। ঝিলে শাপলা কদম, ওই মেলিল দল, মেঘ-অন্ধ গগন, বন্ধ খেয়া’!! গ্রামাঞ্চলের প্রিয় ফুল কদমের মঞ্জুরি একক, গোল। ছোট ছোট অনেকগুলো পাঁপড়ি নিয়ে কদম পূর্ণতা পায়। কদম ফুল পূর্ণ প্রস্ফুটিত মঞ্জুরির রঙ সাদা হলুদ মেশানো গোল বলের মতো ঝলমলে।
আমাদের বাংলা সাহিত্যে, কবিতায়, গানে, চিত্রে কদম ফুল বারবার এসেছে। তাইতো বিদ্রোহী কাজী নজরুল ইসলাম গানে গেয়েছেন- বাঁশি বাজায় কে কদম তলায় ওগো ললিতে, শুনে সরে না পা চলিতে। তার মনের বেদন শত সুরে সুরে, কি যেন চাহে মোরে বলিতে’! বর্ষা ঋতুর প্রথম মাস আষাঢ়ের শুরুতেই গাছে গাছে ফোটে কদম ফুল। প্রতিবছরই কদম ফুল বর্ষার আগাম বার্তা বয়ে আনে প্রকৃতির বুকে। রাস্তার ধারে বাড়ির পাশের ঝোপ-ঝাড়ে অফিসের কোনে গজিয়ে উঠা বনবৃক্ষ কদমের গাছে গাছে ফুটে ওঠা ফুলের সুগন্ধে লোকালয় পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে মানুষের মনে জাগিয়ে দিচ্ছে বর্ষার অনুভ্থতি।
কদম ফুলের সৌন্দর্যে বিমোহিত হন না এমন বেরসিক মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। বাঙালি ও কদমফুল একই সুত্রে গাঁথা। বাংলা সাহিত্যে এনে দিয়েছে স্নিগ্ধতা। এই কদম ফুল বাঙালির শিল্প-সাহিত্যের এক অনন্য উৎস। মোহনীয় গন্ধে ভরপুর এই কদম ফুলকে ঘিরে বাংলা সাহিত্যে রচিত হয়েছে অসংখ্য কবিতা, ছড়া, গান ও উপন্যাস। রাধারমণ দত্তের বিখ্যাত প্রেমসংগীতে গেয়েছেন- ‘প্রাণ সখিরে ওই শোন কদম্বতলে বংশী বাজায় কে? আমার মাথার বেনী খুইলা দিমু, তারে আনিয়া দে’। প্রতিটি বাঙালিকে কদম ফুলের মৌ-মৌ গন্ধে প্রকৃতির প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে। আকাশে মেঘের গর্জন আর প্রচন্ড বর্ষনই বলে দেয় কদম ফুলের সময় এটা।


বর্ষা ঋতুর সৌন্দর্য্যের প্রতিক এ কদম ফুল আষাঢ়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে সাজিয়ে তুলেছে। গাছের মগডালে ফুটে ওঠা কদম ফুলের জুড়ি নেই। কদম ফুলের সৌন্দর্য্যে হ্নদয়কে রাঙ্গিয়ে তুলেছে নানা বয়সি নারী পুরুষ। তবে বর্তমানে কদম ফুল গাছ খুব একটা দেখা যায়না বাড়ির পাশের ঝোপ-ঝাড়ে, রাস্তার ধারে বা অফিসের কোনে। প্রকৃতি থেকে প্রায় হারিয়ে যেতেই বসেছে বর্ষা ঋতুর প্রতিক এই কদম ফুল গাছ।
দৈনিক পুনরুত্থান / মুরাদ হোসেন (মাগুরা)
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আপনার মতামত লিখুন: