• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

Advertise your products here

  1. জাতীয়

আলফাডাঙ্গা বিএনপিতে গৃহদাহ কমিটি ও মনোনয়ন নিয়ে দুই গ্রুপে চরম উত্তেজনা


দৈনিক পুনরুত্থান ; প্রকাশিত: বুধবার, ০৫ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১০:৫৮ পিএম
আলফাডাঙ্গা বিএনপিতে গৃহদাহ কমিটি ও মনোনয়ন নিয়ে দুই গ্রুপে চরম উত্তেজনা

আলফাডাঙ্গা বিএনপির দুই অংশে নবগঠিত কিমিটি এবং মনোনয়ন নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে চরম উত্তেজনা। শহীদ জিয়ার আদর্শের দাবীদার বিএনপি কার্যত দুই অংশে বিভক্ত হয়ে নানা ইস্যুতে আগ্নেয়গিরির মত বিস্ফোরণ ছড়াচ্ছে। রাজপথে তারা একে অপরের প্রতিপক্ষ হয়ে দাড়িয়েছে। 

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় বুধবার (৫ নভেম্বর ২০২৫)  বিকেলে এক নজিরবিহীন রাজনৈতিক উত্তাপের সৃষ্টি হয়েছে । বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর অভ্যন্তরীণ কোন্দল যেন আগ্নেয়গিরির মতো ফেটে পড়েছে পৌর শহরের রাজপথে। নবগঠিত কমিটি এবং ভবিষ্যৎ মনোনয়ন নিয়ে দুই বিবদমান গ্রুপের পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভে প্রকম্পিত হলো গোটা এলাকা, যা দলের বিভক্তির প্রাচীরকে আরও স্পষ্ট করে তুলল। বাতাসে ভাসছিল উত্তেজনা আর অসন্তোষের বারুদ।

বিকেল বেলার মনোরম স্নিগ্ধতাকে ভেঙে রাস্তায় নামে বিএনপির 'ঝুনু গ্রুপ' হিসেবে পরিচিত বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। তাদের হাতে বাঁশের লাঠি, চোখে ক্ষোভের আগুন। হাসপাতাল এলাকা থেকে বের হওয়া তাদের বিশাল মিছিলটি "অবৈধ কমিটি মানি না, মানবো না" শ্লোগানে বাজারের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। চৌরাস্তায় এসে এই বিক্ষোভ রূপ নেয় প্রতিবাদ সমাবেশে।

সমাবেশে বক্তাদের কণ্ঠে ঝরে পড়ে তীব্র ক্ষোভ আর বঞ্চনার সুর। তারা বলেন, "যারা বছরের পর বছর রক্ত দিয়ে, ঘাম ঝরিয়ে, জেল-জুলুম সহ্য করে বিএনপিকে বাঁচিয়ে রেখেছে, আজ সেই ত্যাগী সৈনিকদের অপমান করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের দালাল আর টাকার কুমিরদের দিয়ে 'পকেট কমিটি' বানিয়ে তৃণমূলের বুকে ছুরি চালানো হয়েছে। "তারা বজ্রকণ্ঠে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, "এই প্রহসনের কমিটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না। রাজপথেই ফয়সালা হবে।"

বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খোশবুর রহমান, পৌর বিএনপির সহসভাপতি রেজাউল করিম, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক সৈয়দ মিজানুর রহমানসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী। তারা আলফাডাঙ্গায় বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী, জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের সহ সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য খোন্দকার নাসিরুল ইসলাম-কে অবাঞ্ছিত ঘোষনা করেন। 

এই ঘোষনা শেষ না হতেই, অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসে পাল্টা শ্লোগান। খোন্দকার নাসিরুল ইসলামের অনুসারীরা উপজেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে বের করে আরেকটি বিশাল মিছিল। তারা বাজারের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে চৌরাস্তায় এসে সমাবেশে মিলিত হয়।

তাদের ক্ষোভের কারণ ছিল ভিন্ন। বক্তারা বলেন, "আমরা শুনতে পাচ্ছি, বিগত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত  প্রার্থী  আব্দুর রহমানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দিতাকারী স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফুর রহমান দোলনকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এই অবিচারের খবরে আমরা ক্ষুব্ধ। দলের দুঃসময়ের কাণ্ডারিদের বাদ দিয়ে উড়ে এসে জুড়ে বসা কাউকে মেনে নেওয়া হবে না।"

উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল মান্নান মিয়া আব্বাস, পৌর বিএনপির সভাপতি মো. রবিউল হক রিপন, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরু জামাল খসরু, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. হাসিবুল হাসানসহ অঙ্গ সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। 

একই দলের দুই গ্রুপের এই মুখোমুখি শক্তি প্রদর্শন আলফাডাঙ্গায় বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে এক বড় প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এই গৃহদাহের আগুন দলকে কোথায় নিয়ে যায়, তা দেখার অপেক্ষায় এখন পুরো ফরিদপুরের রাজনৈতিক মহল। 

দৈনিক পুনরুত্থান / মিজান উর রহমান, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন