• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

Advertise your products here

  1. জাতীয়

হাসিনা পরিবারের পাচার অর্থ ফেরাতে ৪ সংস্থার দ্বারস্থ সরকার


দৈনিক পুনরুত্থান ; প্রকাশিত: বুধবার, ২৮ মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৫:০৮ পিএম
হাসিনা পরিবারের পাচার অর্থ ফেরাতে ৪ সংস্থার দ্বারস্থ সরকার

আওয়ামী লীগ আমলে দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়। এতে যুক্ত ছিলেন গণঅভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা। তাদের পাচার করা সম্পদ শনাক্তে তথ্য সংগ্রহ করছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। পাচার করা এসব অর্থ উদ্ধারে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান চারটি প্রভাবশালী সংস্থার সহায়তা নিচ্ছে সরকার।

সংস্থাগুলো হচ্ছে- দ্য স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি (এসটিএআর), ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি করাপশন কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (আইএসিসিসি), যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাসেট রিকভারি (আইসিএআর)।

শেখ হাসিনা পরিবারের পাচার করা সম্পদ উদ্ধার কার্যক্রমে এ সংস্থাগুলোও সরকারকে সহযোগিতা করছে। পাশাপাশি তদন্তও চালাচ্ছে সংস্থাগুলো। তাদের তদন্তে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং এবং কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জে সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে আরও বিশদ অনুসন্ধান চলছে। এ প্রক্রিয়ায় সম্পদের তথ্য সুনর্দিষ্টভাবে শনাক্ত করে ওইসব সম্পদের আরও তথ্য চাওয়া এবং সম্পদ জব্দ করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে মিচুয়্যাল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট বা এমএলএআর পাঠানো হবে।

বিএফআইইউ এবং ওই চারটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রাথমিক তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এক লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে শেখ হাসিনা পরিবারের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে দেশে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। প্রকল্পের নামে বিদেশে এক লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা পাচার বা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। একাধিক তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত পাঁচটি দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচলে রাজউকের ছয়টি প্লট দখল, সূচনা ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন বা সিআরআই ও বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের দুর্নীতি, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে ৪৮৩ কোটি ৮৪ লাখ ডলার বা প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রে ৩০০ কোটি ডলার বা ৩৭ হাজার কোটি টাকা পাচার এবং আটটি সরকারি প্রকল্প থেকে ১৭৭ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ২২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

এসব অভিযোগে কয়েকটি মামলা হয়েছে। মামলাগুলোয় এখন পর্যন্ত আদালতের মাধ্যমে দেশের ভেতরে ৮৮৭ কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি এবং এক হাজার ৪৫ কোটি ২৫ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে। অবরুদ্ধ করা হয়েছে এক হাজার ৯৩২ কোটি ২৫ লাখ টাকার সম্পদ। এসব দুর্নীতির সপক্ষে সব ধরণের তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছে তদন্ত সংস্থাগুলো।

আদালত কর্তৃক স্থাবর সম্পত্তি সংযুক্তকরণের মধ্যে রয়েছে, পূর্বাচলে ৬০ কাঠা জমি বা ছয়টি প্লট। দলিল মূল্যে যার দাম এক কোটি ৮০ লাখ টাকা। তবে বাজার মূল্যে এসব জমির দাম ১২০ কোটি টাকা। গুলশান ও সেগুনবাগিচায় ৯টি ফ্ল্যাট, গুলশানে একটি বাড়ি ও খুলনার দিঘলিয়ায় দুই দশমিক ০৪ একর জমি। দলিল মূল্যে যার দাম ১৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, বাজারমূল্যে ৭৬৭ কোটি টাকা। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে ১৫৬টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এগুলোয় স্থিতি হিসাবে আছে এক হাজার ৪৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে ৫৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে উত্তোলন করা হয়েছে ৪৬৫ কোটি টাকা। এখন স্থিতি আছে ৬৭ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ব্যাংকের করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি বা সিএসআর তহবিলের টাকা থেকে সূচনা ফাউন্ডেশনে প্রায় ৩৩ কোটি টাকার জোগান দেওয়া হয়েছে। এক্সিম ব্যাংক ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংকগুলো থেকে এসব অর্থ সূচনা ফাউন্ডেশনের হিসাবে জমা করতে সহায়তা করেন। ব্যাংকগুলোর সিএসআর ফান্ডের টাকা সূচনা ফাউন্ডেশনে দিতে বিএবি থেকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগের দলীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) নামে ৩৫ কোটি ২১ লাখ টাকার এফডিআর রয়েছে। সংস্থাটির লেনদেন সম্পর্কে আরও তদন্ত হচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে আছেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ভাইস চেয়ারম্যান এবং শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এর ট্রাস্টি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সঙ্গে রয়েছেন শেখ হাসিনা, বোন শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাবে স্থিতি ১৬ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর লেনদেন নিয়ে আরও তদন্ত চলছে।

এদিকে, গত সোমবার রাতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার বোন ও যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের মা শেখ রেহানার মালিকানাধীন লন্ডনের একটি বাড়ি ফ্রিজ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) এটি জব্দ করেছে। ভবিষ্যতে যাতে বাড়িটি বিক্রি করতে না পারে, সেজন্য প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ১৪ বছর ধরে এটি টিউলিপ পরিবারের প্রধান বাড়ি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। শেখ রেহানা ২০১১ সালে ১২ লাখ পাউন্ডে এটি কিনেছিলেন। পাউন্ডের বর্তমান বাজার দর ১৬৯ টাকা হিসাবে ১২ লাখ পাউন্ড বাংলাদেশি মুদ্রায় দাঁড়াচ্ছে ২০ কোটি ২৮ লাখ টাকা।


গত ১৭ থেকে ২১ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর লন্ডন সফর করে এসেছেন। ওই সময়ে তিনি দেশটির মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কর্তৃপক্ষ, দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেন। ওইসব বৈঠকের পর লন্ডনে বাংলাদেশিদের পাচার করা সম্পদের একটি তালিকা পাঠানো হয়। সেগুলোর বিষয়ে দেশটির সরকার এখন অনুসন্ধান করছে বলে জানা গেছে।

দৈনিক পুনরুত্থান /

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন