দমকা হাওয়া ও বৃষ্টিতে প্রায় তিন হাজার বিঘা জমির ফসলের ব্যপক ক্ষতির শংকা
গত তিন দিনের ভারী বৃষ্টিপাত এবং দমকা হাওয়ায় নওগাঁর রাণীনগর এবং আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ধান,আলুসহ প্রায় তিন হাজার বিঘা (৩৯৮হেক্টর) জমির বিভিন্ন ফসল পানিতে অর্ধ নিমজ্জিত হয়েছে। এতে ফলন বিপর্যয়সহ ব্যপক ক্ষতির আশংকা করছেন কৃষকরা। বিশেষ করে আলু,পেঁয়াজ,সরিষাসহ বিভিন্ন শাক সবজি সম্পন্ন নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন কৃষকরা।
রাণীনগর উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানাগছে,চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ১৮হাজার ৭২০হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপন করেছেন কৃষকরা। এছাড়া আলু,সরিষা,পেয়াজ ও শাক সবজি চাষ করেছেন প্রায় ৬০হেক্টর জমিতে । এর মধ্যে গত বুধবার থেকে নিন্মচাপের ফলে শুরু হওয়া দমকা হাওয়া ও বৃষ্টিতে প্রায় ১৫৭৫বিঘা (২১০হেক্টর) জমির ধান নুয়ে পরেছে। কোথাও কোথাও নুয়ে পরা ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া আলু,সরিষা,পেঁয়াজসহ প্রায় ১৭৫বিঘা (২৩হেক্টর) জমির ফসল পানিতে অর্ধ নিমজ্জিত হয়েছে।
রাণীনগর উপজেলার সিলমাদার গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন,তিনি এবার প্রায় ১৮বিঘা জমিতে আমন ধান রোপন করেছেন। কিন্তু দমকা হাওয়া ও ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে প্রায় ১৫বিঘা জমির ধান পানিতে নুয়ে পরেছে। ফলে ব্যপক ফলন বিপর্যয়সহ চরম ক্ষতির আশংকা করছেন তিনি।
আমিরপুর গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন বলেন,আড়াই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ধান রোপন করেছেন। কিন্তু দমকা হাওয়া ও বৃষ্টির কারনে দেড় বিঘা জমির ধান পানিতে নুয়ে পরেছে।
কালীগ্রামের কৃষক বুলু সরদার জানান,তার প্রায় আড়াই বিঘা জমির ধান নুয়ে পরেছে। এ অবস্থায় মাঠ থেকে দ্রুত পানি নেমে গেলেও বিঘা প্রতি ৫/৬মনের বেশি ফলন হবেনা। ফলে চরম লোকসানে পরতে হবে তাকে।
রাণীনগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন,মাঠ থেকে দ্রুত পানি নেমে গেলে ধানের ফলন বিপর্যয়ে খুব বেশি প্রভাব পরবেনা। তবে বৃষ্টিপাত আর একটু দীর্ঘ হলে আলু,পেয়াজ,সরিষা নষ্ট হয়ে যাবে।
আত্রাই উপজেলা কৃষি অফিস সুত্র জানায়,চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৬হাজার ৮৩০হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপন করেছেন কৃষকরা। এছাড়া আলু ৫৬হেক্টর,সরিষা ৯০হেক্টর,এবং বিভিন্ন সবজি রয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে বোপন করা হয়েছে। এর মধ্যে দমকা হাওয়া এবং বৃষ্টিপাতের কারনে প্রায় ৭০৫ বিঘা(৯৪হেক্টর) জমির ধান নুয়ে পরে পানিতে অর্ধ নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া আলু ১৪৩বিঘা(১৯হেক্টর)সরিষা ১১৩বিঘা(১৫হেক্টর) এবং বিভিন্ন শাক সবজি ১৬৫বিঘা (২২হেক্টর) জমির ফসল পানিতে অর্ধ নিমজ্জিত হয়েছে।
আত্রাই উপজেলার কালীকাপুর গ্রামের কৃষক শফির উদ্দীন বলেন,গত বছর প্রায় ৩বিঘা জমিতে আলু বোপন করেছিলেন। কিন্তু আলুর বাজার দর ভাল না পাওয়ায অনেক লোকসান হয়েছে। কিন্তু সেই লোকজসান কাটাতে এবং ভাল দাম পাবার আসায় এবার প্রায় আড়াই বিঘা জমিতে গত ৫দিন আগে আলু বোপন করেছেন। কিন্তু ভারী বৃষ্টিপাতে আলুর জমিতে পানি জমে ডুবে গেছে। ফলে বোপনকৃত আলু বীজ নষ্ট হয়ে যাবে। এতে আলু বোপন করে বৃষ্টির কারনে আবার চরম লোকসানে পরেছেন তিনি।
উপজেলার পাঁচুপুর গ্রামের কৃষক হাফিজ উদ্দীন বলেন,মাত্র চার দিন আগেই তিনি দুই বিঘা জমিতে সরিষা বোপন করেছেন। কিন্তু বোপনের পর থেকেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। এতে বোপন করা সরিষা সম্পন্ন নষ্ট হয়ে যাবে বলে আশংকা করছেন তিনি।
আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রসেনজিৎ তালুকদার বলেন,এখন পর্যন্ত আলু,সরিষা যেগুলো পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে এগুলো রক্ষা পাওয়া অনেকটায় মস্কিল হয়ে পরবে। এছাড়া বিভিন্ন মাঠের ধান অধিকাংশ জায়গায় পাক ধরেছে। ফলে ধানের খুব বেশি ক্ষতি হওয়ার আশংকা নেই। তবে যে ধান গুলো নুয়ে পরেছে এবং কেবলমাত্র শীষ বের হয়েছে এগুলোর ক্ষতির আশংকা রয়েছে।
দৈনিক পুনরুত্থান /
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
আপনার মতামত লিখুন: