• ঢাকা
  • বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

Advertise your products here

  1. তথ্যপ্রযুক্তি ও বিজ্ঞান

মানব ত্বকের ডিএনএ থেকে ভ্রূণ তৈরি করলেন বিজ্ঞানীরা


দৈনিক পুনরুত্থান ; প্রকাশিত: বুধবার, ০১ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:৫২ পিএম
মানব ত্বকের ডিএনএ থেকে ভ্রূণ তৈরি করলেন বিজ্ঞানীরা

মার্কিন বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো মানুষের ত্বকের কোষ থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করে তা পরিবর্তন করে শুক্রাণুর মাধ্যমে নিষিক্ত করে প্রাথমিক পর্যায়ের মানব ভ্রূণ তৈরি করেছেন। এই প্রযুক্তি বয়সজনিত সমস্যা বা রোগের কারণে সৃষ্ট বন্ধ্যাত্ব দূর করতে পারে। কারণ শরীরের প্রায় যেকোনো কোষকেই নতুন জীবনের সূচনা হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। এমনকি এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সমলিঙ্গ দম্পতিরাও তাদের নিজস্ব জিনগতভাবে সম্পর্কিত সন্তান পেতে পারেন।

তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই পদ্ধতি এখনো অনেক উন্নয়ন ও পরিশোধনের প্রয়োজন রয়েছে। এর জন্য অন্তত এক দশক সময় লাগতে পারে। এরপরেই কোনো বন্ধ্যত্ব চিকিৎসা কেন্দ্র এটি ব্যবহারের কথা ভাবতে পারবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি।

তবে একইসঙ্গে সাধারণ মানুষের সঙ্গে উন্মুক্ত আলোচনা প্রয়োজন, যাতে বোঝানো যায় বিজ্ঞান আসলে কী করতে সক্ষম হচ্ছে। মানব প্রজননের প্রচলিত ধারণা ছিল, পুরুষের শুক্রাণু ও নারীর ডিম্বাণুর মিলনে ভ্রূণ তৈরি হয় এবং নয় মাস পরে জন্ম হয় শিশুর। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন সেই নিয়ম পরিবর্তন করছেন। সর্বশেষ এই পরীক্ষায় শুরুটা হয়েছে মানুষের ত্বকের কোষ দিয়ে।

ওরেগন হেলথ অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির গবেষক দল একটি ত্বকের কোষ থেকে নিউক্লিয়াস (যেখানে দেহ গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় পূর্ণাঙ্গ জেনেটিক কোড থাকে) আলাদা করেন। এরপর সেই নিউক্লিয়াস রাখা হয় একটি ডোনার ডিম্বাণুর ভেতরে, যেখান থেকে আগে জেনেটিক নির্দেশনা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি অনেকটা ১৯৯৬ সালে জন্ম নেওয়া বিশ্বের প্রথম ক্লোন স্তন্যপায়ী প্রাণী ডলি ভেড়া তৈরির কৌশলের মতো।

তবে এই ডিম্বাণুটি এখনই শুক্রাণুর দ্বারা নিষিক্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়, কারণ এতে ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ ক্রোমোজোম সেট (ডিএনএ-র পূর্ণ নির্দেশনা) রয়েছে। সাধারণত, একজন ব্যক্তি মায়ের কাছ থেকে ২৩টি এবং বাবার কাছ থেকে আরও ২৩টি ক্রোমোজোম উত্তরাধিকার সূত্রে পায়, মোট ৪৬টি।

কিন্তু এখন এই ডিম্বাণুতেই ৪৬টি ক্রোমোজোম বিদ্যমান। তাই পরবর্তী ধাপে গবেষকদের লক্ষ্য হলো ডিম্বাণুকে তার ক্রোমোজোমের অর্ধেক ফেলে দিতে রাজি করানো, যাতে এটি ২৩টিতে নেমে আসে এবং শুক্রাণুর ২৩টির সঙ্গে মিলে ৪৬টি সম্পূর্ণ সেট গঠন করতে পারে। এই প্রক্রিয়াটিকে গবেষকরা নাম দিয়েছেন ‘মাইটো-মিওসিস’, যা দুটি কোষ বিভাজন পদ্ধতি মাইটোসিস ও মিওসিস-এর সংমিশ্রণ।

বৈজ্ঞানিক জার্নাল নেচার কমিউনিকেশনসে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, মোট ৮২টি কার্যকর ডিম্বাণু তৈরি করা হয়েছিল। এগুলো শুক্রাণুর সঙ্গে নিষিক্ত করা হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে তা ভ্রূণের প্রাথমিক স্তরে পর্যন্ত বিকশিত হয়। তবে কোনো ভ্রূণই ছয় দিনের বেশি বাড়তে দেওয়া হয়নি।

ওরেগন হেলথ অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির এম্ব্রায়োনিক সেল অ্যান্ড জিন থেরাপি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক শুখরাত মিতালিপভ বলেন, ‘আমরা এমন একটি কাজ করতে পেরেছি, যা একসময় অসম্ভব বলে মনে করা হতো।’

তবে এই কৌশল এখনও নিখুঁত নয়। ডিম্বাণু এলোমেলোভাবে কোন ক্রোমোজোম ফেলে দেবে তা ঠিক করে, অথচ সঠিকভাবে প্রতিটি ২৩ ধরনের একেকটি ক্রোমোজোম থাকা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু অনেক সময় কোনো ধরনের দুটি থেকে যায় আবার কোনো ধরনের একেবারেই থাকে না। এ ছাড়া সফলতার হারও খুব কম (প্রায় ৯ শতাংশ) এবং এখানে ক্রোমোজোমগুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ক্রসিং ওভার অর্থাৎ ডিএনএ পুনর্বিন্যাসের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করে না।

বিশ্বখ্যাত এই গবেষক মিতালিপভ বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই এটিকে নিখুঁত করতে হবে। শেষ পর্যন্ত আমি মনে করি প্রজননের ভবিষ্যৎ এ দিকেই এগোবে। কারণ দিন দিন এমন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, যারা সন্তান নিতে পারছেন না।’

দৈনিক পুনরুত্থান /

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন