• ঢাকা
  • সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২

Advertise your products here

  1. জাতীয়

জীবিত গাছ মরা দেখিয়ে নিলাম আহ্বান, খবর প্রকাশে নড়েচড়ে উঠে প্রশাসন!


দৈনিক পুনরুত্থান ; প্রকাশিত: শনিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:২৮ পিএম
জীবিত গাছ মরা দেখিয়ে নিলাম আহ্বান, খবর প্রকাশে নড়েচড়ে উঠে প্রশাসন!

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় জীবিত গাছকে ‘মরা’ দেখিয়ে নিলাম আহ্বানের ঘটনাটি প্রকাশের পর স্থগিত করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের মালিকানাধীন শিশু পার্ক চত্বরসহ উপজেলা চত্বরে থাকা ২৪টি মূল্যবান গাছকে ঝড়ে মাথা ভেঙে পড়া ও মৃত দেখিয়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ওয়েবসাইটে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

১৩৪২ নং স্বারকে উপজেলা প্রশাসক জাকিয়া সুলতানা স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে জারুল, মেহগনি, আকাশমনি, শিশু, কড়ই, শিমুল, কাঠাল ও পিতরাজ প্রজাতির গাছ নিলামের কথা উল্লেখ ছিল। সিডিউল বিক্রির শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয় ৯ অক্টোবর পর্যন্ত, আর দাখিলের সময়সীমা ১৩ অক্টোবর দুপুর ১টা পযর্ন্ত।

অভিযোগ উঠেছে—নিয়ম না মেনে সিন্ডিকেট করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক আরিফুল ইসলাম সিডিউল বিক্রি শুরু করেন। যদিও তিনি উপজেলা পরিষদে কর্মরত নন। ওই সময় উপজেলা পরিষদের সিএ  হাবিবুর রহমানকে অন্যত্র কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘোষিত ২৪টি গাছের বেশিরভাগই সম্পূর্ণ জীবিত ও সবল। শিশু পার্কের এসব গাছ কেটে ফেলা হলে পার্কের ছায়াশীতল পরিবেশ নষ্ট হবে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। পার্কে ঘুরতে আসা রুবেল ও রুম্মান নামের দুই যুবক বলেন,“সব গাছই জীবিত। মরা নয়। এগুলো কেটে ফেললে কেউ আর এখানে আসবে না।”

একজন স্থানীয় সংবাদকর্মী তার ফেসবুক ওয়ালে বিষয়টি তুলে ধরলে জেলা প্রশাসনের নজরে আসে ঘটনা। এরপরই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসক জাকিয়া সুলতানা স্বাক্ষরিত নতুন ১৪৩৬ নং স্বারকে ‘অনিবার্য কারণবশত’ গাছ নিলাম বিজ্ঞপ্তিটি স্থগিত ঘোষণা করা হয়। তবে স্বারকে স্থগিতের কোনো কারণ বা পরবর্তী কোন সময় নিলাম হবে তা উল্লেখ করা হয়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকিয়া সুলতানা জানান, “গাছগুলো মরা ছিল বলেই জেলা প্রশাসকের অনুমোদনে নিলাম আহ্বান করা হয়েছিল। জীবিত গাছ নিলাম দিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে জীবিত গাছ কর্তনের নিয়ম থাকলেও সেটি অনুসরণ করা হয়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের সিএ হাবিবুর রহমানের নিকট প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন....স্যার কর্মবন্টন করে দিয়েছেন। সেখানে আমাকে যদি আমার কাজ না অন্য কাজ করে বেতন দেয় তাহলে আমার সমস্যা কোথায়। আমাকে যে কাজ দিয়েছে সে কাজ করেই আমি বেতন উত্তোলন করি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস সহায়ক কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক আরিফুল ইসলামকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, আমি উপজেলা প্রশাসনের লোক আমাদের যখন যেখানে দেয় আমরা সেখানেই কাজ করি। কালীগঞ্জে আমার যোগদান তিনমাস আর উপজেলা পরিষদের দায়িত্ব আমার কাছে একমাস ধরে বলে জানান তিনি। জেলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান এখন এ বিষয়ে তার জানা নেই।তবে জানা গেছে,  আরিফুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে তার পূর্বের কর্মস্থলে সাড়ে সাত লক্ষ টাকা আত্মসাধের অভিযোগ রয়েছে। যা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। প্রাথমিক অবস্থায় তাকে বদলি করে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে।

 আরিফুল কালীগঞ্জে যোগদানের পর পরই সুকৌশলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে ভুলভাল বুঝিয়ে নিজের কাজের পাশাপাশি উপজেলা পরিষদের সিএ থাকা সত্ত্বেও তিনি দুটি পদের দায়িত্ব একাই পালন করে আসছেন। অপরদিকে উপজেলা পরিষদের সিএ পদে কর্মরর্ত হাবিবুর রহমান উপজেলা পরিষদের কাজ না থাকায় তার কক্ষ প্রায় সময় তেমন খোলা দেখা যায় না। এমনকি উপজেলা পরিষদে অফিস সহায়ক  পদে কর্মরত শরিফুল ইসলামকেও তার দায়িত্ব হতে সরিয়ে নৈশ্য প্রহরীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যাতে করে উপজেলা পরিষদের বরাদ্দ বা আয়কৃত অর্থ নয়ছয় করার সুযোগের সৎব্যবহার করতে পারেন তিনি। 

এচাড়াও তার বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভার রেজুলেশন পরিবর্তনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত প্রকল্পেরও পরির্বতনের কারিগর সে। তথ্যমতে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসভবন কনডেম বিল্ডিং হিসাবে উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় অনুমোদন পাশ হয়ে মন্ত্রানালয়ে প্রেরন করার পরও সেই কনডেম ঘোষিত বাসভবনে মেরামত সংস্কার ও সৌন্দর্য বর্ধনের নামে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে যা কনডেম বিল্ডিং হিসাবে অনুমোদন হওয়ার পরে  সরকারী নিয়ম নীতির মধ্য পড়ে না। এছাড়াও উপজেলা পরিষদ চত্বরে সৌন্দর্য বর্ধনের নামে নেয়া প্রকল্প নিয়ম বহির্ভুতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

আরোও সরেজমিনে দেখা যায় যে, উপজেলা পরিষদের গ্রেজেটেড কোয়ার্টার তিনটি ইউনিট পুরো ইউনিট ভারা না দিয়ে ম্যাচ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ম্যাচ পরিচালনা করছেন একজন সরকারী কর্মচারী। যা সরকারি নিয়ম নীতিমালার পরিপন্থী। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এ সকল অনিয়মের মূলে কর্মকর্তাদের ভুলভাল বুঝিয়ে সিন্ডিকেট গড়েছে আরিফুল নামের এ ব্যক্তি। স্থানীয় দু চারজন সাংবাদিককে ম্যানেজ করেই চলছে এসব অপকর্ম।

দৈনিক পুনরুত্থান / নূর আলমগীর অনু, লালমনিরহাট প্রতিনিধি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন