• ঢাকা
  • শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২

Advertise your products here

  1. জাতীয়

ফোনালাপ ফাঁস : এসআই বললেন, ‘আমার কোনো দোষ নেই ওসি সাহেবের নির্দেশ’


দৈনিক পুনরুত্থান ; প্রকাশিত: শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৪:৪৯ পিএম
ফোনালাপ ফাঁস : এসআই বললেন, ‘আমার কোনো দোষ নেই ওসি সাহেবের নির্দেশ’

নকল সোনার পুতুল ও পুরনো রুপার মুদ্রা দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনার পর চাঞ্চল্যকর এক ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। এতে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল থানার ওসি আরশেদুল হক এবং এসআই শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রায় ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা আত্মসাৎ এবং নিরপরাধ ক্রেতাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফোনালাপটি ভাইরাল হয়। ফাঁস হওয়া ফোনালাপে রাণীশংকৈল থানার এসআই শহিদুল ইসলামকে আকাশ নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়।

অডিওতে শোনা যায়, আকাশ এসআই শহিদুলকে বলছেন, ‘যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা প্রতারক নন, বরং তারা নকল সোনা কিনতে আসা নিরীহ ক্রেতা। তাদের কাছ থেকে পুলিশ ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা জব্দ করেছে।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এই তথ্য দেওয়ার বিনিময়ে প্রতি লাখে ৩০ হাজার টাকা করে পাওয়ার বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল, কিন্তু সেই টাকা আমাকে দেওয়া হয়নি।’

জবাবে এসআই শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘স্যার (ওসি) আমাকে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছেন।

আপনি আসেননি, লোকও পাঠাননি।’

তখন আকাশ বলেন, ‘আপনারা নিশ্চিত না করলে বা না ডাকলে কিভাবে লোক পাঠাব? তাদের কাছে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিল।’

এসআই শহিদুল এর জবাবে বলেন, ‘তাদের কাছে এত টাকা ছিল না। পাওয়া গেছে ৩ লাখ।

ওই টাকাও তাদের ফেরত দেওয়া হয়েছে। তখন খুশি হয়ে তারা স্যারকে ৫০ হাজার টাকা দেন।’

আকাশ এই দাবি অস্বীকার করে বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা কেউ টাকা ফেরত পাননি। তারা সবাই নির্দোষ এবং শুধু ক্রেতা হিসেবে সেখানে গিয়েছিলেন।’

এসআই শহিদুল বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘তারা সত্যি নির্দোষ ছিল, বড় স্যারও বলেছিলেন।

তাদের মামলা দেওয়া হলো। তবে ওসি স্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কী করার। টাকা ফেরত দেওয়ার সময় সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।’

এদিকে, অডিওতে অর্থ লেনদেন এবং অন্যান্য বিষয় নিয়েও তাদের মধ্যে আলোচনা শোনা যায়। অডিও ক্লিপটি ফাঁস হওয়ার পর স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ফাঁস হওয়া অডিওর নিচে অনেকেই মন্তব্য করেছেন যে, এ ঘটনা প্রমাণ করে, আটক ব্যক্তিরা নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও তাদের ক্রেতা থেকে প্রতারক সাজিয়ে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এর পেছনে রাণীশংকৈল থানার ওসি আরশেদুল হকসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত বলে তারা অভিযোগ করেন। তারা এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।

এসআই শহিদুল ইসলাম কল রেকর্ডের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘ওসি সাহেবের নির্দেশেই আকাশের সঙ্গে কথা হয়। এখানে আমার কোনো দোষ নেই।’

রাণীশংকৈল সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নেহাষীশ কুমার দাস জানান, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছেন এবং পুলিশ সুপারের নির্দেশে দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি নজরে এসেছে। তদন্ত করা হচ্ছে। এর সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে ছাড় নয়, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গত ১ সেপ্টেম্বর রাণীশংকৈল উপজেলায় নকল সোনার পুতুল ও পুরনো রুপার মুদ্রা দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে সময় রাণীশংকৈল থানার ওসি আরশেদুল হক জানিয়েছিলেন, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মূর্তি, পুরনো মুদ্রা এবং নগদ টাকাসহ আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এই ঘটনার তিন দিন পর ফাঁস হওয়া কথোপকথনের অডিওতে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র উঠে এসেছে।

দৈনিক পুনরুত্থান /

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন