এলজিইডিতে “সমন্বয়ক সিন্ডিকেট”: রাজনীতির নাম ভাঙিয়ে ত্রাস ও চাঁদাবাজির রাজত্ব!
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)-তে চলছে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের দৌরাত্ম্য। ‘রাজনীতিক’ ও ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু সুবিধাভোগী ব্যক্তি এলজিইডিকে কার্যত একটি চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটে পরিণত করেছে। পটপরিবর্তনের সুযোগে তারা কখনো বিএনপির নেতা, কখনো সাংবাদিক, আবার কখনো বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
৫ আগস্টের পর এক প্রভাবশালী চক্র এলজিইডির বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালকদের (পিডি), তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে ঢুকে হুমকি, চাপ এবং প্রভাব খাটিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত একটি নাম—মিলন। অভিযোগ রয়েছে, মিলন কখনো সাংবাদিক, কখনো বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে এবং কখনো নিজের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলেকে ‘সমন্বয়ক’ বানিয়ে এলজিইডিতে আধিপত্য কায়েমের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সূত্র বলছে, সদ্য বিদায়ী তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রশাসন) মো. মাহবুবুর রহমানের কাছে বদলি ও আউটসোর্সিং নিয়োগের বিনিময়ে মোটা অংকের ঘুষ দিয়েই মিলনের ছেলেকে আগের পদে বহাল রাখার জন্য তদবির চালান মিলন। ফলে নতুন করে প্রশাসনিক পরিবর্তনে প্রতিরোধের মুখে পড়েন প্রকৌশলী বেলাল হোসেন।
আরও অভিযোগ রয়েছে, এই চক্র আওয়ামীপন্থী হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকজন প্রকল্প পরিচালকের কাছ থেকেও মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে বর্তমানে তাদের ‘রক্ষাকবচ’ হিসেবে কাজ করছে। শুধু তাই নয়, এদের মধ্যে কিছু পিডির নিকট থেকে মাসিক চাঁদা নেয়ার প্রমাণও মিলেছে। বিএনপির নাম ব্যবহার করে হুমকি দেয়ার অভিযোগে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় দফতর থেকে তাকে সতর্ক করা হয়। এমনকি বিএনপির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা ইউনিট এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়ার পর তাকে সরাসরি হুশিয়ার করে।
কিছুদিন অন্তরাল থাকার পর সম্প্রতি মিলনকে আবারও এলজিইডি ভবনে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। এবারও তার কর্মকাণ্ড একই—ব্ল্যাকমেইল, হুমকি, ভয়ভীতি ও চাঁদাবাজি।
এদিকে, ‘বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন’ নামের সংগঠন এনসিপি ইতিমধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করেছে সেই আন্দোলন। এনসিপির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কেউ ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দিলে তাকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করার নির্দেশ দেয়া হয়। অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এলজিইডির ভেতরে কিছু অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং প্রকল্প পরিচালকের ছত্রছায়ায় এই ‘ভুয়া সমন্বয়ক’কে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এলজিইডির মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে এমন একটি চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের দাপট প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতারই পরিচয় বহন করে। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
দৈনিক পুনরুত্থান /
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
আপনার মতামত লিখুন: