দ্বিতীয় পর্বের সংলাপে ভিন্নমত ছাড়া ১১ বিষয়ে একমত

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের সংলাপে ভিন্নমত ছাড়া ১১টি বিষয়ে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। বাকী ৯টি বিষয়ে অধিকাংশ দলের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিকে জুলাই সনদের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত ও বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবারো আলোচনায় বসবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।


আজ শুক্রবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতে রচিত এবং প্রত্যাশিত স্বাক্ষরিত সনদের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা এবং বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে তা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা দরকার। সেই লক্ষ্যে কমিশন এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে আলোচনা করবে।আশা করা যায় যে, এই প্রক্রিয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যেই একটি উপযুক্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গত দুই পর্বের আলোচনায় কাঙ্খিত জাতীয় সনদ প্রনয়নের লক্ষ্যে তাৎপর্য সংখ্যক সুপারিশ বা সংস্কার ব্যাপারে জাতীয় ঐকমত্য সম্ভব হয়েছে।
প্রথম পর্বের সংলাপে ১৬৫টি প্রস্তাবের মধ্যে ৬২টি রাজনৈতিক ঐকমত্য অর্জিত হয়েছে। যার কিছু কিছু সরকার এরই মধ্যে বাস্তবায়ন করেছে (অধ্যাদেশ, নীতি ও নির্বাহী সিদ্ধান্তে মাধ্যমে)। দ্বিতীয় পর্বের সংলাপে গুরুত্বপূর্ণ ২০টি সাংবিধানিক ইস্যূতে আলোচনা হয়। সেখানে ১১টি বিষয়ে সব দলের সমর্থনে জাতীয় ঐকমত্য এবং বাকী ৯টি বিষয়ে অধিকাংশ দলের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে তাতে কোন কোন দলের ভিন্নমত উল্লেখ থাকবে। প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর বিরূপ মনোভাবের কারণে ২৫টি বিষয়ে আলোচনা হয়নি।


এ সময় জানানো হয়, দ্বিতীয় পর্বে আলোচনার জন্যে ২০টি মৌলিক কাঠামোগত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এগুলো হচ্ছে- (১) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭০ সংশোধন; (২) সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নির্বাচন; (৩) নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ; (৪) রাষ্ট্রপতির ক্ষমা সম্পর্কিত বিধান; (৫) বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ- (ক) সুপ্রিম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ, (খ) উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালতের সম্প্রসারণ; (৬) জরুরী অবস্থা ঘোষণা; (৭) প্রধান বিচারপতি নিয়োগ; (৮) সংবিধান সংশোধন; (৯) প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান: (১০) 'জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল' বা 'এনসিসি', যা পরে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের বাছাই কমিটি নামে উপস্থাপিত এবং শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন গঠন, (১১) সরকারি কর্ম কমিশন, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সম্পর্কিত আলাদা প্রস্তাব হিসেবে গৃহীত; (১২) প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল; (১৩) পুলিশ কমিশন গঠন; (১৪) সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব (সংখ্যা বৃদ্ধি, নির্বাচন পদ্ধতি ইত্যাদি); (১৫) উচ্চকক্ষের গঠন, সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি, এখতিয়ার ইত্যাদি; (১৬) রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, ইলেকটোরাল কলেজ ইত্যাদি; (১৭) তত্ত্বাবধায়ক সরকার; (১৮) নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ সম্পর্কিত প্রস্তাব; (১৯) রাষ্ট্রের মূলনীতি; (২০) রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব [অনুচ্ছেদ ৪৮(৩)]।
দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় ১১টি বিষয়ে কোনো ধরনের ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্ট ছিলো না, বাকি ৯টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্টসহ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ভিন্নমত ছাড়া (নোট অব ডিসেন্ট) যেসব প্রস্তাব গৃহীত হয়: (১) সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি; (২) নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ; (৩) রাষ্ট্রপতির ক্ষমা সম্পর্কিত বিধান; (৪) বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ-(ক) সুপ্রিম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ, (খ) উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালতের সম্প্রসারণ; (৫) জরুরী অবস্থা ঘোষণা; (৬) প্রধান বিচারপতি নিয়োগ; (৭) সংবিধান সংশোধন; (৮) প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল; (৯) নির্বাচন কমিশন গঠন: (১০) পুলিশ কমিশন গঠন; (১১) নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ সম্পর্কিত প্রস্তাব।
ভিন্নমতসহ ৯ প্রস্তাব গৃহীত হয়: (১) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭০ সংশোধন; (২) প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান; (৩) সরকারি কর্ম কমিশন, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সম্পর্কিত [ইতিপূর্বে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের বাছাই কমিটি নামে প্রস্তাবিত ছিল (যা পূর্বে 'জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল' বা 'এনসিসি' নামে প্রস্তাবিত ছিল)]; (৪) সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব (সংখ্যা বৃদ্ধি, নির্বাচন পদ্ধতি ইত্যাদি); (৫) দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট (উচ্চকক্ষের গঠন, সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি, এখতিয়ার ইত্যাদি); (৬) রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি; (৭) তত্ত্বাবধায়ক সরকার; (৮) রাষ্ট্রের মূলনীতি; (৯) রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব [অনুচ্ছেদ ৪৮(৩)]।


দৈনিক পুনরুত্থান /
- বিষয়:
- জাতীয় ঐকমত্য কমিশন
- সংলাপ
- রাজনৈতিক
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আপনার মতামত লিখুন: