মুহূর্তেই ছাই হয়ে গেলো দিন মুজুরের বসত ঘরটি
রোববার বেলা সাড়ে ১১টা। ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারীর গুনবহা ইউনিয়নের রেনিনগর নিচুপাড়া গ্রামে এক মায়ের বুকফাটা আর্তনাদে স্তব্ধ হয়ে যায় চারদিক। চুলায় রান্না রেখে সন্তানকে কোলে তুলে চাচির কাছে দিয়ে আসতেই চোখের সামনে নিজ ঘরটাকে আগুনে জ্বলে যেতে দেখেন রাবেয়া বেগম।
মুহূর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে নেয় একমাত্র বসত ঘরটি। কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘরের চাল-চুলো, আসবাবপত্র, চাল-ডাল, এমনকি মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও ছাই হয়ে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া ঘরের চারপাশে স্তূপ করে রাখা ছাই, পোড়া বাঁশ, টিনের টুকরো আর বিধ্বস্ত পরিবারের অসহায়ের মতো বসে থাকা মানুষগুলো। কলম সরদার (৮০), তার স্ত্রী নুরজাহান, নাতি সজিব, সজিবের স্ত্রী রাবেয়া এবং তাদের দুই ছোট সন্তান—সকলের চোখে আতঙ্ক, অসহায়ত্ব আর হতাশা।
রাবেয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমি রান্না করছিলাম, হঠাৎ আমার নয় মাসের শিশু কান্না শুরু করে। তাকে কোলে নিয়ে চাচির কাছে রেখে ফিরে আসতেই দেখি আগুন লাগছে। চিৎকার করলে মানুষ ছুটে আসে, কিন্তু কিছুই বাঁচানো যায়নি। চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেলো!”
কলম সরদার অসুস্থ শরীর নিয়ে বলেন, “আমি বহুদিন ধরে অসুস্থ, শ্বাসকষ্টে ভুগছি। আমার সংসার চলে মানুষের দান-খয়রাতে। আজ ঘরবাড়ি পুড়ে সব শেষ হয়ে গেছে। এখন আমাদের ছয়জনের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। কোথায় থাকবো, কীভাবে বাঁচবো জানি না।”
নুরজাহান (৬০) বারবার বুক চাপড়াতে চাপড়াতে বলেন, “আমি চিকিৎসার জন্য সকালে বোয়ালমারী গিয়েছিলাম। বাড়ি ফিরে দেখি ঘরের কিছুই নেই—সব ছাই হয়ে গেছে। আমাদের তো আর কিছু রইলো না।”
স্থানীয়রা জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গ্রামবাসী প্রাণপণ চেষ্টা করেছে, কিন্তু ততক্ষণে ঘর সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়।
গুনবহা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বলেন, “এই পরিবারটির অবস্থা খুবই করুণ। তারা আমার কাছে এলে যথাসম্ভব সহযোগিতা করা হবে।”
বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, “ভুক্তভোগী পরিবার আবেদন করলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।”
স্থানীয়রা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
দৈনিক পুনরুত্থান /
- বিষয়:
- ফরিদপুর জেলা
- নিচুপাড়া গ্রাম
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
আপনার মতামত লিখুন: