আমার ইচ্ছা প্রতি পরিবারের জন্য ফ্যামিলি কার্ড করা: তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার মনের একটি ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমার মনের একটি, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলসহ প্রতিটি এলাকায় প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি ফ্যামিলি কার্ড করা।
এ কার্ড হবে পরিবারের নারী সদস্য আমাদের মা ও গৃহিণীর নামে, যাতে প্রতি মাসে এ কার্ডের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি পরিবার কিছুটা আর্থিক সহায়তা পায়। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল সোয়া চারটার দিকে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পুরোনো স্টেডিয়ামে এক অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান তার ইচ্ছার কথা জানান। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে কিশোরগঞ্জের নিহত ১৭ জন ও আহত ১৬ জনের পরিবারকে সহযোগিতা প্রদান উপলক্ষে জেলা বিএনপি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, একটি দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী করতে নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। জনগণের উন্নয়ন জনগণের নির্বাচিত সরকার দ্বারাই সম্ভব। কারণ, জনগণের সরকার হলে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকে। যেহেতু জনগণের সরকারের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় ভোটের মাধ্যমে। তাই যেদিন বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিনই মানুষ তার পূর্ণ স্বাধীনতা ফিরে পাবে।
তিনি বলেন, আজকে আমরা মুক্ত পরিবেশে, ভয়হীন পরিবেশে কথা বলতে পারছি। এই পরিবেশের জন্য দীর্ঘ ১৭ বছর অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। গত জুলাই-আগস্ট মাসে হাজারো মানুষ নিহত ও অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। গত ১৭ বছরে শুধু বিএনপির ৬০ লাখ নেতা-কর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনেকে মারা গেছেন। এত মানুষের আত্মত্যাগের কারণ একটাই, তারা তাদের রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পেতে চান। দেশের জন্য ১৯৭১ সালে যেভাবে মুক্তিযোদ্ধারা আত্মত্যাগ করেছিলেন, ঠিক এভাবেই ২৪-এর আন্দোলনে অনেকেই জীবন উৎসর্গ করেছেন। তবে মনে রাখতে হবে, এই বাংলাদেশে স্বৈরাচারের পতন হলেও তাদের দোসররা এখনো রয়ে গেছে। তারা সব সময় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাই বর্তমান সরকার কাজ করতে গিয়ে এমন কিছু যেন না করে, যাতে স্বৈরাচাররা আবারও মাথাচাড়া দিতে পারে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আজকে বাংলাদেশের সমস্ত মানুষ প্রত্যাশা করছেন, তাদের প্রিয় দল বিএনপি জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করবে। সে জন্য ১৭ বছর ধরে আমরাও সংগ্রাম করেছি। তাই বিএনপির নেতাকর্মীদের বলব, এ দেশ থেকে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে বলেই সব বিপদ কেটে যায়নি। আমাদের সবাইকে সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। শুধু রাজনৈতিক মুক্তি পেলেই হবে না, বাংলাদেশের মানুষদের অর্থনৈতিক মুক্তি পেতে হবে। তা না হলে মানুষের সফলতা আসবে না।
এ সময় কিশোরগঞ্জ জেলার উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে কিছু কথা বলেন তারেক। তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম একটি সম্ভাবনাময় জেলা। যেখান থেকে দেশের মোট ধান উৎপাদনের ১৬ শতাংশ আসে। যদি সঠিক পরিকল্পনা ও কৃষকদের সহযোগিতা করা যায়, তাহলে আরও উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। তা ছাড়া এই জেলার হাওরাঞ্চলের মিঠাপানির মাছের জন্য বিখ্যাত। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এই মাছও বিদেশে রপ্তানি করে গার্মেন্টস শিল্পের মতো বৈদেশিক আয় সম্ভব। এমনকি হাওর–অধ্যুষিত অষ্টগ্রাম উপজেলার পনির ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশে অনেক খ্যাতি অর্জন করেছে। এই অষ্টগ্রামের বিখ্যাত পনিরকে বিশ্বের কাছে আরও পরিচয় করার মাধ্যমে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারি।
এ সময় তিনি আরও বলেন, আমার মনের একটি ইচ্ছে, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলসহ প্রতিটি এলাকায় প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি ফ্যামিলি কার্ড করা। এ কার্ড হবে পরিবারের নারী সদস্য আমাদের মা ও গৃহিণীর নামে, যাতে প্রতি মাসে এ কার্ডের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি পরিবার কিছুটা আর্থিক সহায়তা পায়। দলমত–নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে আহ্বান জানান তারেক রহমান। তিনি বলেন, দেশের স্বার্থে সবাইকে একসঙ্গে করতে হবে। যে কারণে আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে ৩১ দফায় বলেছি, সবাইকে নিয়ে ভবিষ্যতে আমরা একসঙ্গে সরকার গঠন করব। বিগত দিনে যেসব দল আমাদের সঙ্গে আন্দোলন–সংগ্রামে ছিল, তাদের সবাইকে নিয়েই সরকার গঠন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করা হবে। বাংলাদেশের বাইরে আমার কোনো ঠিকানা নেই। এই বাংলাদেশই আমার প্রথম ও শেষ ঠিকানা।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা মো. ফজলুর রহমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ, ওয়ারেস আলী প্রমুখ।
দৈনিক পুনরুত্থান / নিজস্ব প্রতিবেদক
- বিষয়:
- ফ্যামিলি কার্ড
- তারেক রহমান
- বিএনপি
আপনার মতামত লিখুন: