ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে খলিলুর রহমান এখন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী
মানবতার হাত বাড়িয়ে দিলেন শ্রীমঙ্গলের “বিসমিল্লাহ গরুর মাংসের দোকানের” স্বত্বাধিকারী আব্দুল মতিন
মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি: মোঃ জালাল উদ্দিন। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের প্রতিবন্ধী খলিলুর রহমান (৪০)। জীবনের দীর্ঘ সময় ভিক্ষাবৃত্তির ওপর নির্ভরশীল ছিলেন তিনি। রেলওয়ে স্টেশনের পাশে ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে তার জীবন কাটতো অভাব-অনটনে।
খলিলুর রহমানের বড় মেয়ে নূৎরাত জাহান শ্রীমঙ্গল উদয়ন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ছোট মেয়ে ইসরাত জাহান দ্বিতীয় শ্রেণি এবং ছেলে আব্দুল বাছিত নাইম তৃতীয় শ্রেণিতে—দুজনেই পড়ছে বায়তুল আমান দারুল উলুম মাদ্রাসায়। সংসার চালানো ও সন্তানদের পড়াশোনার খরচ যোগাতে গিয়ে তিনি প্রায়ই অসহায় হয়ে পড়তেন।
ভাগ্যের মোড় ঘুরে যায় একদিন। শ্রীমঙ্গল শহরের বিসমিল্লাহ গরুর মাংসের দোকানের স্বত্বাধিকারী আব্দুল মতিন গরিব ও অসহায় মানুষের জন্য একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেন। তিনি প্রতি সপ্তাহে একদিন দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে মাংস বিতরণ শুরু করেন। এই উদ্যোগ ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর পাশাপাশি অনেকের জীবনের গতিপথও বদলে দিয়েছে।
সেই কর্মসূচির সুবাদে খলিলুর রহমানের সঙ্গে পরিচয় হয় আব্দুল মতিনের। প্রথমবার ১ কেজি মাংস ফ্রি পেয়ে খলিল আনন্দিত হন। এরপর মতিন তাকে ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়তে উৎসাহ দেন এবং সামান্য মূলধন সহায়তাও প্রদান করেন।
আব্দুল মতিনের পরামর্শে খলিল বাদাম বিক্রি শুরু করেন। প্রথমে শঙ্কা থাকলেও ধীরে ধীরে ব্যবসা জমে ওঠে। বর্তমানে তিনি প্রতিদিন প্রায় ২০০ প্যাকেট বাদাম বিক্রি করেন। গড়ে ২ হাজার টাকার বিক্রিতে তার লাভ থাকে প্রায় ৫০০ টাকা।
খলিলুর রহমান বলেন, “ভিক্ষা করে দিনে ৮০০-১০০০ টাকা রোজগার করতাম, কিন্তু তৃপ্তি পেতাম না। সব সময় মনে হতো আমি সমাজের বোঝা। এখন নিজের পরিশ্রমে আয় করি, শান্তি পাই।”
আজ খলিল আর ভিক্ষুক নন; তিনি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। নিজের উপার্জিত অর্থে সংসারের অভাব-অনটন অনেকটাই কেটে গেছে। সন্তানদের পড়াশোনার খরচ নির্বিঘ্নে চালাতে পারছেন তিনি।
স্থানীয়রা বলছেন, আব্দুল মতিন মানবতার এক আলোকবর্তিকা। তার ছোট একটি উদ্যোগ বদলে দিয়েছে একটি পরিবারের ভাগ্য।
আব্দুল মতিন বলেন, “মানুষের উপকারে আসতে পারলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। আল্লাহ চাইলে আরও অনেক অসহায়কে কর্মসংস্থানের পথে দাঁড়াতে সাহায্য করব।”
একজন ভিক্ষুকের শ্রম-সাহস আর একজন উদ্যোক্তার মানবিক উদ্যোগ মিলিয়ে বদলে গেছে একটি পরিবারের জীবন। খলিলুর রহমান আজ সমাজে অনুকরণীয় উদাহরণ, আর আব্দুল মতিন প্রমাণ করেছেন—সৎ উদ্যোগ ও সহমর্মিতা থাকলে একজন মানুষও পরিবর্তনের আলো ছড়িয়ে দিতে পারে গোটা সমাজে।
দৈনিক পুনরুত্থান /
- বিষয়:
- ভিক্ষাবৃত্তি
- ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
আপনার মতামত লিখুন: