• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১ আশ্বিন ১৪৩২

Advertise your products here

  1. জাতীয়

২৬৬ কোটি টাকার ফাঁকিতে চাকরিচ্যুত কর কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর ও মাসুদ!


দৈনিক পুনরুত্থান ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০১:০৩ পিএম
২৬৬ কোটি টাকার ফাঁকিতে চাকরিচ্যুত কর কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর ও মাসুদ!

বড় অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে একটি কোম্পানির প্রযোজ্য ২৯৯ কোটি টাকার আয়কর কমিয়ে ৩৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করে চাকরি হারালেন কর অঞ্চল-১৬ এর যুগ্ম কর কমিশনার মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান।

জোবাইদা করিম জুট মিলস লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটির ২৬৬ কোটি টাকা কর কমাতে তারা ৩৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন, এমন অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে পৃথক আদেশে মোহাম্মদ মাসুদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত এবং তৎকালীন উপকর কমিশনার, বর্তমানে যুগ্ম কর কমিশনার মো. জাহাঙ্গীর আলমকে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান সই করা পৃথক আদেশ সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।

চাকরি হারানোর পেছনের গল্প খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে তাদের দুর্নীতির তথ্য-উপাত্ত। এনবিআরের গোয়েন্দা প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, কোম্পানি থেকে ঘুষ নিয়ে রাষ্ট্রের ২৬৬ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতির চেষ্টা করেছেন তারা। তারা দুজন স্বীকারও করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত সফল হননি।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মো. জাহাঙ্গীর আলম উপকর কমিশনার হিসেবে বিভাগীয় পদোন্নতিপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা। তিনি ২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর কর অঞ্চল-১, চট্টগ্রাম থেকে বদলি হয়ে কর অঞ্চল-১৮, ঢাকায় উপকর কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। চলতি বছরের ৭ জুলাই উপকর কমিশনার থেকে যুগ্ম কর কমিশনার হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হন। ১০ জুলাই তাকে ঢাকার কর অঞ্চল-১৮ হতে কর অঞ্চল-১৬ এর পরিদর্শী রেঞ্জ-৪ এ বদলি করা হয়েছিল। আর চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর কর অঞ্চলেরর পরিদর্শী রেঞ্জ-৩ এ বদলি করা হয়। অন্যদিকে অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার বা ইএসিটি মোহাম্মদ মাসুদুর রহমানকে চলতি বছরের ২০ আগস্ট ঢাকা কর অঞ্চল-১৮ থেকে ফরিদপুরে বদলি করা হয়।

গোয়েন্দা প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, কর অঞ্চল-১৮ এর আওতাধীন করদাতা প্রতিষ্ঠান জোবাইদা করিম জুট মিলস লিমিটেড। করিম গ্রুপের পাটজাত পণ্য রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানটি দুই করবর্ষের ২৯৯ কোটি টাকার কর নির্ধারণ করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি ট্যাক্সেস আপিলাত ট্রাইব্যুনালে গেলে ট্রাইব্যুনাল কর রিভাইজ করার নির্দেশনা দিয়ে ওই কর অঞ্চলে পাঠায়। উপকর কমিশনার মো. জাহাঙ্গীর আলম সংশ্লিষ্ট সার্কেল কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনিই প্রতিষ্ঠানটিকে কর কমিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ৩০ লাখ টাকা ঘুস নেন। প্রক্রিয়ার মধ্যেই চলতি বছরের ৭ জুলাই তিনি যুগ্ম কর কমিশনার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে যান। 

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, কর্মকর্তা জাহাঙ্গীরই ইএসিটি মাসুদুর রহমানকে ম্যানেজ করেন। পদোন্নতি পেয়ে বদলির অজুহাত দেখিয়ে তড়িঘড়ি করে অর্ডারশিট মাসুদুর রহমানকে দিয়ে তৈরি করান। ট্রাইব্যুনালের নির্দেশনা অমান্য করে রিভাইজ না করে উল্টো জাহাঙ্গীর আলম কোম্পানির সঙ্গে ঘুষের দফারফা করে ২৯৯ কোটি টাকার কর ৩৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করেন। কর নির্ধারণের ক্ষেত্রে তিনি ওই কর অঞ্চলের রেঞ্জ বা কমিশনারের অনুমোদনও নেননি বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা প্রমাণ পেয়েছেন।

তারা দেখতে পেয়েছেন, মাসুদকে দিয়ে অর্ডারশিট তৈরি করে মাত্র দুইদিনের মধ্যে রেঞ্জ বা কমিশনারের অনুমোদন ছাড়াই ব্যাক ডেটে সই করে কোম্পানিকে ২৬৬ কোটি টাকার কর কমিয়ে দেন। বিনিময়ে তিনি কোম্পানি থেকে ৩০ লাখ ও ইএসিটি মাসুদুর রহমান ৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। যা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে জাহাঙ্গীর স্বীকার করেছেন। তবে মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান ঘুস নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, জাহাঙ্গীর আলমের অনুরোধে তিনি অর্ডারশীট তৈরি করেছেন। এর বাইরে কিছু জানেন না।

বিষয়টি ঢাকা কর অঞ্চল-১৮ এর রেঞ্জ ও কমিশনারের নজরে আসে। একইসঙ্গে এনবিআরের নজরেও আসে। পরে করদাতা কোম্পানির ফাইল এনবিআরে নিয়ে আসা হয়। যাচাই শেষে ঘুষের বিনিময়ে কর ২৬৬ কোটি টাকা কমিয়ে দেওয়া, ট্রাইব্যুনালের নির্দেশনা অমান্য, একজনের অর্ডারশিট আরেকজন তৈরি, রেঞ্জ ও কমিশনারের অনুমোদন না নেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পায় এনবিআরের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। পরে যুগ্ম কর কমিশনার মো. জাহাঙ্গীর আলম ও অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার মোহাম্মদ মাসুদুর রহমানকে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুইজনই ঘুষের বিনিময়ে অনিয়ম ও কর কমিয়ে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। এর মধ্যে ইএসিটি মোহাম্মদ মাসুদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। যুগ্ম কর কমিশনার মো. জাহাঙ্গীর আলমকে শাস্তি হিসেবে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। 

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কর অঞ্চল-১৬, ঢাকার যুগ্ম কর কমিশনার (বর্তমানে কর অঞ্চল নোয়াখালীর পরিদর্শী রেঞ্জ-৩) মো. জাহাঙ্গীর আলম এর চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। সরকার জনস্বার্থে তাকে সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা প্রয়োজন মর্মে বিবেচনা করে। সেজন্য সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাকে সরকারি চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হলো।

অপরদিকে ইএসিটি মোহাম্মদ মাসুদুর রহমানেরর সাময়িক বরখাস্তের আদেশে বলা হয়েছে, কর অঞ্চল ফরিদপুরের অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি সংক্রান্ত কাজে সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যধারা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সেজন্য মোহাম্মদ মাসুদুর রহমানকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ১২ অনুযায়ী চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। বরখাস্তকালীন তিনি বিধি মোতাবেক খোরপোশ ভাতা প্রাপ্য হবেন।

দৈনিক পুনরুত্থান /

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন